বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সাটু‌রিয়ায় ডাকবাংলাতে আটকে রেখে তরুণীকে ধর্ষণ: ২ এসআই প্রত্যাহার

সাটু‌রিয়া (মানিকগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:০৮ এএম

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় এক তরুণীকে দুই দিন আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে দুই সাটু‌রিয়া থানার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
অস্ত্রের মুখে ওই তরুণীকে মাদক সেবনেও বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ সময় পাশের আরেকটি রুমে আটকে রাখা হয় তরুণীর খালাকে।
এ ঘটনায় মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়েরের পর তাৎক্ষণিক ওই অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলো, সাটুরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেকেন্দার হোসেন ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাজহারুল ইসলাম।
নির্যাতনের শিকার ওই তরুণীর খালা জানায়, সাটুরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেকেন্দার হোসেন আশুলিয়া থানায় কর্মরত থাকার সময় তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার নিয়ে জমি কেনে। জমি বিক্রির লাভের অংশ তাকে দেওয়ার কথা ছিল। সেই হিসাবে তিনি সেকেন্দার হোসেনের কাছে প্রায় তিন লাখ টাকা পাবে। কিন্তু টাকা শোধ না করে সেকেন্দার তাকে ঘুরাতে থাকে। সাটুরিয়া থানায় বদলি হওয়ার পরও তিনি সেকেন্দারের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সে তার এক ভাগ্নিকে (২০) সঙ্গে নিয়ে সাটুরিয়া থানায় যায়। সেখানে সেকেন্দার তাকে টাকা দেওয়া হবে জানিয়ে ডাকবাংলোতে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর সাটুরিয়া থানার এএসআই মাজহারুলকে সঙ্গে নিয়ে ডাকবাংলোতে যায় সেকেন্দার।
অভিযোগকারী জানায়, সেখানে দুই পুলিশ কর্মকর্তা টাকা দিতে অস্বীকার করে উল্টো হুমকি দেন। পরে তারা ডাকবাংলোর একটি কক্ষে ইয়াবা সেবন করে ও তার ভাগ্নিকে জোর করে ইয়াবা সেবন করায়। তারা অভিযোগকারীর ভাগ্নিকে সারারাত আটকে রেখে ধর্ষণ করে। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে টাকা দেওয়ার কথা জানায় এসআই সেকেন্দার। এ জন্য দুই নারীকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়। টাকার জন্য তারা ওই ডাকবাংলোতেই অপেক্ষা করে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার পর ওই দুই কর্মকর্তা সেখানে পৌঁছায়। কিন্তু ওই সময়েও তাদের কোনো টাকা দেননি এসআই সেকেন্দার। বরং আগের রাতের মতোই তারা পাওনাদারের ভাগ্নিকে ধর্ষণ করে। পরে শুক্রবার সকালে ৫ হাজার টাকা হাতে দিয়ে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয় এসআই সেকেন্দার ও এএসআই মাজহারুল।
নির্যাতনের শিকার তরুণী বলেন, প্রতিবেশী খালার সঙ্গে তিনি সাটুরিয়া গিয়েছিল। তাদের সেদিনই ফিরে আসার কথা থাকলেও দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাদের আটকিয়ে রাখে। তারা অস্ত্রের মুখে তাকে মাদক সেবন করানোর পর ধর্ষণ করে বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী তরুণী। ওই সময় ঘটনা প্রকাশ করলে গুম করার হুমকিও দিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তারা। শুক্রবার সকালে সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সাভারে ফিরে পরিচিত এক সাংবাদিককে বিষয়টি জানায় সে। পরে রোববার মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারের কাছে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।
সাটুরিয়া থানার ওসি আমিনুর ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার সাটুরিয়া ডাকবাংলোতে এক নারীকে এসআই সেকেন্দার হোসেনের সঙ্গে পাওনা টাকা নিয়ে উচ্চবাচ্য করতে দেখা গেছে। বিষয়টি দ্রুত মিটিয়ে ফেলার জন্য সেকেন্দারকে বলা হয়েছিল। ওই সময় অভিযোগকারীরা তাকে ধর্ষণের কথা জানাননি। তবে শনিবার রাতে পুলিশ সুপার ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে সাটুরিয়া থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করেন। পরে জানতে পারেন, তাদের বিরুদ্ধে এক তরুণীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে এসআই সেকেন্দার হোসেন এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এক নারী তার কাছে পাওনা টাকার জন্য সাটুরিয়া এসেছিলেন। তাকে কিছু টাকাও দেওয়া হয়েছে। পুলিশ লাইনে ক্লোজ করার কারণ জানতে চাইলে সেকেন্দার বলেন, তিনি সে ব্যাপারে কিছু জানে না।
মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম জানান, মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার পর শনিবার রাতেই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর এ ঘটনায় মানিকগঞ্জ সদর সার্কেলকে প্রধান করে একটি তদন্ত ক‌মি‌টি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনা প্রমাণিত হলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
মোঃ শরীফুজ্জামান ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:৩৯ এএম says : 0
পুলিশ ভাইয়েরা সরকার তো আপনারদের অনেক ক্ষমতা দিচ্ছে, টাকা দিচ্ছে তাহলে নিরীহ মানুষের উপর এমন হায়েনার আচরণ কেন করেন?
Total Reply(0)
md.ataur rahman ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১১:১৪ এএম says : 0
Carry on our proud police at night vot.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন