বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

বাতিল নোটকে সোনায় পরিণত করেছেন মাদুরো

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

লাতিন আমেরিকার খনিজসম্পদে ভরপুর ভেনেজুয়েলা অর্থনৈতিক সংকটে পড়ার দুই বছর পেরিয়ে গেছে। ওই সময়েই পশ্চিমা অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, সংকটের কারণে ভেঙে পড়বে দেশটির সরকার। কিন্তু বিশ্লেষকদের আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত করে টিকে আছে দেশটি। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়া এবং দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখেও ভেনেজুয়েলার ক্ষমতায় প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর টিকে যাওয়া অবাক করার মতো ঘটনা। সম্প্রতি বিরোধী নেতা হুয়ান গুইদো নিজেকে স্বঘোষিত অন্তর্র্বতীকালীন প্রেসিডেন্ট দাবি করার পর সঙ্কট চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ৪০টিরও বেশি দেশ গুইদোকে সমর্থন দেওয়ার ফলে ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির ওপর আন্তর্জাতিক নজরদারি বৃদ্ধি পেয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাজ্যকে চাপ দিচ্ছে ভেনেজুয়েলার ১.২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সোনার মজুত আটকে রাখার জন্য। মাদুরোর সরকার এই সোনা ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে জমা রেখেছে। সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার সোনা কেনার ক্ষেত্রে আবুধাবিভিত্তিক বিনিয়োগ কোম্পানিগুলোর প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
রয়টার্স লিখেছে, পুরো প্রক্রিয়াটি ভেনেজুয়েলার সমাজতান্ত্রিক নেতার এক বেপরোয়া পরীক্ষা বলে মনে হয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির তেল খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ঋণ নেওয়ার সক্ষমতাকে হ্রাস করেছে। আনুষ্ঠানিক খনি খাত জাতীয়করণের মধ্য দিয়ে বিলুপ্ত করা হয়েছে। আর তাই মাদুরো দেশটির খনিজসম্পদ আহরণে ফ্রিল্যান্সারদের সুযোগ দিয়েছেন কার্যত রাষ্ট্রীয় কোনও নিয়ম বা বিনিয়োগ ছাড়াই।
প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বামপন্থী সরকারের জন্য অনেক সহায়ক হয়ে ধরা দিয়েছে। ভেনেজুয়েলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৬ সাল থেকে মাদুরোর প্রশাসন ১৭ মেট্রিক টন মূল্যবান ধাতু কিনেছে, যেগুলোর মূল্য প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন ডলার। আর এসব মূল্যবান ধাতু উত্তোলন করেছে তথাকথিত আর্টিজান খনি শ্রমিকরা।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে সোনার বাণিজ্যের পুরো প্রক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে। ভেনেজুয়েলার এসব সোনার খনি দক্ষিণাঞ্চলের বিচ্ছিন্ন জঙ্গল এলাকায় অবস্থিত। সোনার প্রতি মানুষের আকৃষ্ট হওয়ার কারণ হচ্ছে দেশটির মুদ্রা বলিভার। কারণ, হাতে আসার পর প্রতিমুহূর্তেই এই মুদ্রার দাম কমতে থাকে। আইএমএফের তথ্য অনুসারে, এই বছর মূলস্ফীতি বেড়েছে ১০ শতাংশ। এক্ষেত্রে সোনা বিদেশে পাচার করে ডলার অর্জন করতে পারা ব্যক্তিদের বিশেষ সুবিধা দেয় সরকার। দিয়াজের কাছে যেসব ব্যবসায়ী সোনা বিক্রি করেন তারা নগদ অর্থ নিয়ে খনি শ্রমিকদের মজুরি শোধ করেন।
রাষ্ট্রীয় খনি কোম্পানির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সরকারের কেনা সোনা মিনার্ভানে গলানো হয়। পরে তা সেখান থেকে ৮৪৩ কিলোমিটার দূরে রাজধানী কারাকাসে অবস্থিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো হয়। ব্যাংকে বেশি দিন এই সোনা রাখা হয় না। এমনিতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সোনার মজুত ৭৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে রয়েছে। সরকারের দুই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মতে, এই মজুত করা সোনা সরকারি ব্যয় নির্বাহের জন্য ভেনেজুয়েলা বিক্রি করে দেয়। বর্তমানে এই সোনার সবচেয়ে বড় ক্রেতা তুরস্ক।
২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ভেনেজুয়েলা কারাকাস থেকে ইস্তানবুলে তুর্কি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালু হয়। উভয় দেশের মধ্যে যাত্রী চলাচল কম থাকার পরও এই উদ্যোগ ছিল বিস্ময়কর। বাণিজ্যিক তথ্য অনুসারে দেখা যায়, যাত্রীর চেয়ে অন্যান্য বস্তু এসব ফ্লাইটে পরিবহন করা হচ্ছে বেশি। ২০১৮ সালের প্রথম দিনে ভেনেজুয়েলার কেন্দ্রীয় ব্যাংক তুরস্কে সোনা পাঠানো শুরু করে।
ভেনেজুয়েলার দুই সরকারি কর্মকর্তা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব সোনা তুর্কি শোধনকারীদের কাছে বিক্রি করে। বিক্রি করা অর্থ দিয়ে তুরস্ক থেকে ভোগ্যপণ্য কেনা হয়। কারাকাসের লা গুয়াইরা বন্দরের তথ্য অনুসারে, তুর্কি পণ্য নিয়মিতই আসছে ভেনেজুয়েলায়। ডিসেম্বরের শুরুতে ৫৪ কন্টেইনার তুর্কি গুঁড়োদুধ পৌঁছায় বন্দরে।
সমালোচকরাও স্বীকার করেছেন মাদুরো খুবই কার্যকর কৌশল গ্রহণ করেছেন। এই কৌশল হলো, দুর্ভোগে থাকা নাগরিকদের কার্যত মূল্যহীন মুদ্রায় পারিশ্রমিক দিয়ে মূল্যবান ধাতু সোনা উত্তোলন। মাদুরো তুচ্ছ বস্তুকে সোনায় পরিণত করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন