বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

চেঙ্গিস বংশের প্রথম বাদশাহ বার্কা খানের ইসলাম গ্রহণ-১

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

কুখ্যাত তাতার বংশের চেঙ্গিস খানের চার পুত্রের নাম যথাক্রমে জওজি খান, চুগতাই খান, ওগতাই খান (খাকান উপাধিধারী) এবং তোলাই খান। চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পর তার গোটা সাম্রাজ্য এ্র চার ভ্রাতার মধ্যে ভাগ হয়ে যায়।
(১) জওজি খানের পুত্র বাতুখান পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে সাম্রাজ্যের পশ্চিমাংশের মালিক হন এবং ‘সিরাদারদা’র খান গণ্য হন।
(২) চুগতাই খান মধ্য এলাকার শাসনকর্তা হন।
(৩) ওগতাই খান ‘খাকান’ হিসেবে পিতা চেঙ্গিস খানের স্থলাভিষিক্ত হন এবং সাম্রাজ্যের পূর্বাংশ তার অধিকারে আসে। তার শাসনামল ১২২৯-১২৪১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এ সময়ের উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা হচ্ছে, ‘কিরগিজ’ নামক এক ইরানি শাসক প্রথমে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন, পরে তিনি এ ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
(৪)তোলাই বা তাওয়াল্লি খান, তিনি ইরানের অধিপতি হন। তিনি ছিলেন বাগদাদ ধ্বংসকারী এবং আব্বাসীয় খেলাফতের পতন সাধনকারী কুখ্যাত হালাকু খানের পিতা। ইরানে তাকে ‘ইলখানি’ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। হালাকু খানের পুত্র তাকুদার তার ভ্রাতা বার্কা খানের স্থলাভিষিক্ত হন এবং তিনি ইলখানি রাষ্ট্রের প্রথম বাদশাহ হিসেবে ইসলাম গ্রহণ করেন।
চেঙ্গিস খানের চার পুত্রের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ওপরে তুলে ধরা হয়েছে। তাতার সাম্রাজ্য ও চেঙ্গিস খানের বংশধারাগুলোর মধ্যে কিভাবে ইসলাম প্রচারিত হয়, তা এক স্বতন্ত্র অধ্যায়। তবে চেঙ্গিস খানের বড় পুত্র জওজি খানের বংশে সর্বপ্রথম যিনি ইসলাম গ্রহণ করেন বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়, তার নাম বার্কা খান অর্থাৎ চেঙ্গিস খানের জ্যেষ্ঠ পুত্রের পক্ষের প্রোপুত্র। অর্থাৎ মোগল বাদশাহগণের মধ্যে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম। তিনি কিভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন, যে কাহিনী উল্লেখ করার আগে বার্কা খানের পিতা বাতু খান ইবনে জওজি খানের পরিচয় জানা দরকার।
বাতু খান- হজরত ঈসা আ:-এর তিন হাজার বছর আগে ‘জজিরায়ে কেরম’ অর্থাৎ ক্রিমিয়ায় ‘তাওরী’ নামক একটি জাতি বাস করত। তুর্কি ভাষায় তাদেরকে পাহাড়ি অর্থাৎ পার্বত্য জাতি বলা হয়। এ জাতির বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন রাষ্ট্র কায়েম হয়। চেঙ্গিস খানের পুত্র বাতু খান ‘তুনউরু’ নামক যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন (১২২৭-১২৫৫) তার একটি প্রদেশের নামও ছিল কেরম। বাতু খানের পক্ষ থেকে কেরমের একজন নায়েব নিযুক্ত ছিল।
বার্কা খান- বাতু খানের পর তার পুত্র বার্কা খান সাম্রাজের অধিকারী হন। ১২৬২ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। প্রথমত, তার সমর্থক অনুসারীরা বিপুল সংখ্যায় ইসলাম গ্রহণ করে। বার্কা খান আব্বাসীয় খলিফাকে দাওয়াত করেন তবলিগ মিশন প্রেরণের জন্য। সুতরাং খলিফার আহ্বানে মোবাল্লেগিন, ব্যবসায়িকবৃন্দ, উলামা এবং ফকিহ গণের কয়েকটি দল ইসলামী দেশগুলো থেকে হিজরত করে কেরমে পৌঁছেন এবং এ এলাকায় ইসলামের আলো প্রজ্জ্বলিত করেন। এলাকাটি ‘খাজানায়ে আলম’ অর্থাৎ বিশ্বের রত্মভান্ডার নামে খ্যাত।
বার্কা খানের ইসলাম গ্রহণের কাহিনী
একদিন বোখারা থেকে একটি কাফেলা বার্কা খানের দরবারে আগমন করে। কাফেলায় দুইজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও যোগ্য আলেম ছিলেন। বার্কা খান তাদের উভয়কে একটি নিরিবিলি স্থানে নিয়ে যান এবং একান্ত বৈঠকে মিলিত হন। বার্কা খান তাদের নিকট ইসলাম সম্পর্কে নানা বিষয় জানতে চান। তারা অতি উত্তম রূপে তাকে ইসলামের আরকান- আহকাম ও তার বাস্তবতা ও সত্যতার কথা অকাট্য যুক্তি-প্রমাণ দ্বারা বুঝিয়ে দেন। বার্কা খান শুনে তাতে এতই বিমুগ্ধ ও অভিভূত হন যে, তাৎক্ষণিকভাবে তিনি মুসলমান হয়ে যান এবং সাথে সাথে তার ছোট ভাইকেও ইসলাম গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করেন। অতঃপর তিনিও ইসলাম গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Mahabub Dulal ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:০৯ এএম says : 0
ইতিহাস সম্পর্কে সামান্যতম ধারণা রাখেন অথচ চেঙ্গিস খানের নাম শোনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম অপরাজিত জেনারেল তিনি। তার সমকক্ষ সেনাপতির সংখ্যা মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন। যিনি এককভাবে জয় করেছিলেন পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি অঞ্চল এবং যিনি একই সাথে ৪ কোটি নিরাপরাধ মানুষের মৃত্যুর দায়ী।
Total Reply(0)
সাদ বিন জাফর ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:১০ এএম says : 0
মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর সেনাবাহিনী হল মধ্যযুগের মোঙ্গল বাহিনী যার সূচনা হয়েছিলো চেঙ্গিস খানের হাতে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে তাতার বাহিনী নামে পরিচিত ছিলো মোঙ্গল বাহিনী।
Total Reply(0)
মোঃ বেলায়েত হোসেন ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:১০ এএম says : 0
১২০৬ সালে চেঙ্গিস খানকে মঙ্গোলিয়ার স্তেপের একচ্ছত্র অধিপতি বা গ্রেট খান হিসাবে ঘোষণা করার পর মোঙ্গল বাহিনী একে একে জয় করে নিয়েছিলো এশিয়া ও ইউরোপ বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যের মালিক ছিলো মোঙ্গলরা। চেঙ্গিসখানের সময় থেকে শুরু হওয়া মোঙ্গলদের জয়যাত্রা অব্যাহত ছিলো পরবর্তী গ্রেট খানদের সময়ও।
Total Reply(0)
জিয়াউল হক ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:১১ এএম says : 0
ধ্বংস, হত্যা, চাতুর্য, ক্ষমতা, লিপ্সা এবং রণকুশলতার এক অভূতপূর্ব মিশেলে গড়া চেঙ্গিস খানের জীবন কাহিনী যেন একটি জীবন্ত সিনেমার মত। তার ঘটনা বহুল জীবনের রোমাঞ্চকর উত্থান পতন এবং অচিন্তনীয় ধ্বংসলীলা সম্পর্কে না জানলে ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ত আপনার অজানাই থেকে যাবে।
Total Reply(0)
রিদওয়ান বিবেক ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:১৩ এএম says : 0
বর্বর মোঙ্গল বাহিনীকে রুখে দেওয়ার অনন্য কীর্তির প্রতিদান হিসাবে যে বিশ্ববাসী চিরকাল সুলতান সাইফউদ্দিন কুতুজকে মনে রাখবে সেটা বলে দেওয়া যায় নিঃসন্দেহে।
Total Reply(0)
Mamun ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:৫৩ পিএম says : 0
খুব ভাল লাগলো,,
Total Reply(0)
shafiul alam rana ৪ জানুয়ারি, ২০২১, ৫:০১ পিএম says : 0
তখন অলি আয়লিয়ারা ইসলাম প্রচার করত
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন