শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া

ডাঃ মোঃ ফজলুল কবির পাভেল | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া অপরিচিত কোন অসুখ নয়। বাংলাদেশে সঠিক কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রতি বছর অনেক রোগী অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হয়। আমাদের দেহের রক্ত তৈরির কারখানা হচ্ছে অস্থিমজ্জা। অস্থির ভেতরে থাকে অস্থিমজ্জা। যখন এই অস্থিমজ্জা নষ্ট হয়ে যায় বা অস্থিমজ্জা ক্ষতিগ্রস্থ হয় তখন দেখা দেয় অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া।

যেকোন বয়সেই অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হতে পারে। ধীরে ধীরে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। অস্থিমজ্জা থেকে তিন ধরনের রক্ত কনিকাই তৈরী হয়। এসব রক্ত কনিকার মধ্যে আছে লোহিত রক্ত কানিকা, শ্বেত রক্ত কনিকা এবং অনুচক্রিকা। প্রতিটি রক্ত কনিকার ভিন্ন ভিন্ন কাজ আছে। যেহেতু অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়াতে রক্ত কানিকাগুলো অনেক কমে যায় সুতরাং এসব রক্তকনিকা যেসব কাজ করে সেসব কাজ বাধাগ্রস্থ হয়। ফলে দেখা দেয় বিভিন্ন উপসর্গ।
অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার বিভিন্ন কারণ আছে। এদের মধ্যে প্রাথমিক কারণের জন্য যেমন এ রোগ হতে পারে, আবার সেকেন্ডারী বা পরোক্ষ কারণেও অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হয়। পরোক্ষ কারণের মধ্যে আছে আনবিক বিকিরণ, রাসায়নিক পদার্থ, বিভিন্ন ওষুধ, ভাইরাল হেপাটাইটিস, গর্ভাবস্থায় এবং বিভিন্ন সংক্রমণ। রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে ডিডিটি, বেনজিন, টিএনটি ইত্যাদি দায়ী। আর ওষুধের মধ্যে আছে ক্লোরামফেনিকল, ক্লোরপ্রমাজিন, টলবুটামাইড, ইন্ডোমেথাসিন, কার্বামাজেপিন, হাইড্রালাজিন ইত্যাদি
অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার রোগীর বিভিন্ন উপসর্গ থাকে। এসব উপসর্গ দেখে রোগ সম্পর্ক ধারণা পাওয়া যায়। এই রোগে যেসব লক্ষণ দেখা দেয় তার মধ্যে আছে-শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, জ্বর, দুর্বল লাগা, অবসাদগ্রস্ততা, মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে যাওয়া, কাশি, গলাব্যথা, মুখে প্রদাহ, শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তপাত হওয়া যেমন দাঁতের মাড়ি, নাক, কাশি বা বমির সাথে, প্রস্রাবের সঙ্গে। মলদ্বার দিয়ে বা গায়ের চামড়ার নিচে রক্তপাত হয়। এছাড়াও অনেক সময় চামড়ার নিচে মশার কামড়ের মত দাগ দেখা দেয়।
অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার ডায়াগনসিস খুব কঠিন নয়। রোগের লক্ষণ দেখেই রোগটি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। রোগীর কাছ থেকে ভালভাবে ইতিহাস নিলে এবং শারীরিক পরীক্ষা করলে ডায়াগনসিসের কাছাকাছি চলে যাওয়া যায়। ইনফেকশনের জন্য এন্টিবায়োটিক দেয়া হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এসব চিকিৎসা খুব ফলপ্রসূ হয় না। প্রায় ৫০% এর বেশী রোগী এর ফলে মৃত্যু বরণ করে। তবে কম বয়সে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হলে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন বা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করলে রোগটি ভাল হয়ে যায়। তবে যাদের বয়স বেশী তাদের সাইক্লোস্পোরিন এবং এন্টিথাইমোসাইট গ্লোবিউলিন দিয়ে চিকিৎ্সা করা হয়।
তবে এসব চিকিৎসা দিলে রোগটি অন্যদিকে মোড় নিতে পারে। সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে। অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া প্রতিরোধের দিকে নজর দেয়া দরকার। রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করার ব্যপারে সাবধান হতে হবে। হুটহাট এন্টি-বায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। যেসব ওষুধ অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া করতে পারে সেসব ওষুধ খুব বেশী প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়। এক্সরে বা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া ঘটাতে পারে। এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বরন করতে হবে। একটু সচেতনতাই অনেক সমম্যা কমাতে পারে।
ডাঃ মোঃ ফজলুল কবির পাভেল

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আলম ওয়াহিদ ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:০৮ পিএম says : 0
আমি ১মাস ১৫ দিন যাবৎ চট্টগ্রামমেডিকেলকলেজ এ ভর্তি।আমার বোনম্যারো রিপোর্টে বলা হয়েছে আমার অস্থিমজ্জা থেকে স্বাভাবিকমানুষেরমত রক্ত উৎপন্ন হয় না,আমার। HBv DNA রিপোর্ট negativ. আবার Anti HbS reactive.এবং Hbsag হলো negativ. Anti Hbc হলো positive. আমার বয়স ২৩ বছর,আমার দাতের মাড়ি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছ। আমার মুখের ভেতর ঘা চলে আসে,সেখান থেকে রক্ত বের হয, ডাক্তার আমাকে traxyl 500mg,neural 100mg,lozana,solvent vitamin b,folison, এগুলোখেতে বলছে। আমার আর কি করতে হবে, ভাল হতে গেলে,যদি বলতেন স্যার ভাল হতো , লক্ষন সব আমার হয়,হিমোগ্লোবিন ৮
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন