বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

সউদী সন্ত্রাসবিরোধী জোটে পাকিস্তানকে বৃহত্তর ভূমিকা পালনের আহ্বান

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

ইসলামিক মিলিটারি কাউন্টার টেরোরিজম কোয়ালিশনে (আইএমসিটিসি) বড় ধরনের ভূমিকা পালনের জন্য পাকিস্তানকে অনুরোধ জানিয়েছে সউদী আরব। অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পাকিস্তান সরকার সউদী আরবের কাছ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা নিশ্চিত করার পর এই খবর প্রকাশ পেলো। আইএমসিটিসি’র একটি প্রতিনিধি দল দুই দিনের সফরে গত রোববার ইসলামাবাদ পৌছে। এর নেতৃত্ব দেন আইএমসিটিসি প্রধান ও সাবেক পাকিস্তানি সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফ।

শরিফ মঙ্গলবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করার আগে সেনা প্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে কথা বলেন। সিনিয়র সামরিক অফিসাররা বলছেন, যদিও সরকারিভাবে বলা হচ্ছে যে, সউদী ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান আল সউদের পাকিস্তান সফরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনার জন্য জেনারেল শরিফের আগমন কিন্তু তার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধি দল এই সংস্থায় পাকিস্তানের বড় আকারের ভূমিকাটি প্রমাণ করছে।
আরো সেনা প্রয়োজন

একজন সিনিয়র সামরিক অফিসার এশিয়া টাইমসকে বলেন, সউদী আরবের ভূখণ্ড রক্ষার জন্য পাকিস্তান এরই মধ্যে সেনা মোতায়েন করেছে। তবে এখন পাকিস্তানকে আইএমসিটিসি-তে ভূমিকা বাড়ানোর জন্য বলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী সউদী আরব ও তার মিত্রদের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এখন সেখানে একটি বড় জোট রয়েছে। তাই প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য আরো বেশি পাকিস্তানী সেনা প্রয়োজন।

সূত্র জানায়, এমন এক সময় রাহিল শরিফের সফর অনুষ্ঠিত হয় যখন সামরিক জোটটি পূর্ণ রূপ পাওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যাত্রা শুরুর পর এরই মধ্যে তিন বছর পার করেছে এই জোট। মৌখিকভাবে আইএমসিটিসিকে সমর্থনের জন্য পাকিস্তানের নতুন সরকারের উপর রিয়াদ চাপ দিচ্ছে বলেও গত আগস্টে খবর প্রকাশ করেছিলো এই পত্রিকা। ক্রাউন প্রিন্স এমবিএসের সফরের পর পুরো বিষয়টি পরিস্কার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

একজন সিনিয়র কূটনীতিক বলেন, আইএমসিটিসি’র সফরকে যেভাবেই দেখা হোক না কেন সাবেক পাকিস্তানি সেনাপ্রধান এরই মধ্যে ইংগিত দিয়েছেন যে, পাকিস্তান আন্তরিকভাবেই এই জোটকে সমর্থন দিচ্ছে। গত বছর ফেব্রæয়ারিতে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া রিয়াদ সফরকালে ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ইসলামাবাদ সউদী আরবে আরো বেশি সংখ্যায় সেনা পাঠাতে রাজি হয়। অক্টোবরে সউদী আরব পাকিস্তানকে ৬ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়। অন্যদিকে সাংবাদিক খাসোগি হত্যাকাণ্ডে রিয়াদের প্রতি কূটনৈতিক সমর্থন ব্যক্ত করে ইসলামাবাদ। তবে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিকে এই সমর্থন দেয়ার পেছনে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সঙ্কটও কিছুটা কাজ করছে।
সফরকালে এমবিএস পাকিস্তানের সঙ্গে বেশ কিছু লোভনীয় বিনিয়োগ চুক্তি সই করবেন। যার মধ্যে গোয়াদার বন্দরের কাছে ১০ বিলিয়ন ডলারের তেল শোধনাগার স্থাপনের চুক্তিও রয়েছে।
উত্তেজনাপূর্ণ বালুচিস্তান প্রদেশে সউদী আরবের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি নিয়ে কিছু বিশ্লেষক অবশ্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
স্থানটি ইরান সীমান্ত থেকে বেশি দূরে নয়। তবে অন্যরা বলছেন যে আইএমসিটিসি নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পাকিস্তানী সেনাদের আরো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করতে হতে পারে।

গত ডিসেম্বরে পাকিস্তানের একটি সিনেট প্রতিনিধি দল রিয়াদ সফরে গেলে তাদেরকে রাহিল শরিফ বলেন, আইএমসিটিসি কোন দেশ বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়। তবে ইরান এই ৪১ জাতি জোটের অংশ নয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন মধ্যপ্রাচ্যে সউদী আরবের সামরিক প্রভাব জোরদার করতে এই জোট গঠন করা হয়েছে।

ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের তৎপরতা তুঙ্গে থাকার সময় ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এই জোট গঠনের কথা ঘোষণা করা হয়। গত তিন বছরে আইএস প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ফলে এখন আইএমসিটিসি’র কাজ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
এমন অনিশ্চয়তা থাকলেও আর্থিক সুবিধার বিবেচনায় রিয়াদের অনুরোধে পাকিস্তানের সাড়াদানের সম্ভাবনাই বেশি। তবে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শামসাদ আহমেদ মনে করেন পূর্বসূরীদের চেয়ে পাকিস্তানের বর্তমান সরকার রিয়াদের সঙ্গে দরকষাকষির ক্ষেত্রে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে।
অন্যদিকে, সাবেক প্রতিরক্ষা উৎপাদন সচিব লে. জেনারেল তালাত মাসুদ উল্লেখ করেন যে এ ধরনের বিষয়ে বেসমারিক নেতাদের বলার কিছু আছে সামান্যই।

তিনি বলেন, বিশেষ করে সউদী আরবের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে। এই সম্পর্কের সঙ্গে সেনাবাহিনীর ব্যাপক ঘনিষ্ঠতা এবং সউদী আরবের সামরিক চাহিদাটি বিবেচনা করলে সেনা মহল থেকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি আসবে। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন