বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নির্বাচন বাতিল চেয়ে ৭৪ প্রার্থীর মামলা

একাদশ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ

মালেক মল্লিক | প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে হাইকোর্টে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন ৭৪ প্রার্থী। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির ৭০ জন, গণফোরামের ৩ জন এবং প্রগ্রেসিভ ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) ১জন প্রার্থী। এতে নির্বাচনে কারচুপি, জালিয়াতি ও ভোট ডাকাতির অভিযোগ আনা হয়েছে। একইসঙ্গে বিজয়ী প্রতিদ্বদ্বীর ফল বাতিল এবং সংশ্লিষ্ট সংসদীয় আসনের পুরো নির্বাচন বাতিল চেয়েছেন। একই সঙ্গে পুনঃনির্বাচন নির্বাচনের নির্দেশনা চেয়েছেন। এতে বিবাদী করা হয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি), নিজ নিজ আসনের বিজয়ী প্রার্থীদের। এসব মামলা নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন হাইকোর্টের ৬টি একক বেঞ্চকে এখতিয়ার দেন। মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবীদের নিয়ে একটি প্যানেল গঠন করেছে বিএনপিবিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের মামলার বিষয়ে সরকারি দল বিব্রত নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। একই সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনঃনির্বাচন দাবি করে। ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত এমপিরা শপথও নেননি। বিএনপির নির্বাচন বিষয়ে আইনগত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর থেকে তারা মাঠ পর্যায়ে অনিয়মের নানা তথ্য সংগ্রহ করেন।
সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচনে নির্বাচিতদের গেজেট জারির ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনী অনিয়মের বিরুদ্ধে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। সেই হিসেবে গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় একদিন আগেই এসব মামলা করেন ৭৪ জন পরাজিত প্রাথী। তবে তামাদি কারণ দেখিয়ে আরো কয়েকটি মামলা কাল (রোববার) আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের আইনজীবীরা।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুৃব উদ্দিন খোকন ইনকিলাবকে বলেন, নির্বাচনে জাল ভোট, এজেন্টদের বের করে দেয়াসহ একতরফাভাবে ভোট দেয়ারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার মো.সাইফুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, নির্বাচনের অনিয়মসহ নানা অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের ৬টি একক বেঞ্চকে এখতিয়ার দেন। এখানে শুধুমাত্র নির্বাচন নিয়ে আবেদনগুলো শুনানি হবে। হাইকোর্টের ৬টি বেঞ্চ হল- বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার, বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান, বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক, বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান, বিচারপতি মাহমুদুল হক ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন। এই ছয়টি একক বেঞ্চকে নির্বাচন সংক্রান্ত সব আবেদন নিষ্পত্তির করতে বলা হয়েছে।
আইনজীবীদের নিয়ে প্যানেল গঠন বিএনপির: নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনা করতে বিএনপির ৮ আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে বিএনপি। একেক বিভাগে একেক জন আইনজীবীকে দায়িত্ব দিয়ে একটি প্যানেল গঠন করা হয়। বরিশাল বিভাগের জন্য অ্যাডভোকোট জয়নুল আবেদীন, ঢাকা বিভাগের জন্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, রাজশাহী বিভাগের জন্য ব্যারিস্টার আমিনুল হক, চট্টগ্রামে অ্যাডভোকেট মীর মো. নাসিরুদ্দিন, রংপুর বিভাগের জন্য ব্যারিস্টার নওশাদ জামির, কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, খুলনা ও ফরিদপুরের জন্য অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
সংবিধান অনুযায়ী, গেজেট জারির ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনী অনিয়মের বিরুদ্ধে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। সেই হিসেবে গতকাল শুক্রবার ছিল শেষ দিন। তবে ছুটির দিন থাকার কাল রোববার আবেদন করার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে আইনজীবীরা। আরো কয়েকটি মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। আইনজীবীরা জানিয়েছেন তামাদির কারণ দেখিয়ে রোববার আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। আবেদনে নির্বাচন বাতিল ঘোষণা, নির্বাচনে বিজয়ীদের বাতিল এবং অপর প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা।
৭৪ জন আবেদনকারী হলেন: অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা-৬, মফিজুল ইসলাম খান কামাল (মানিকগঞ্জ-৩), মেজর জেনারেল (অব.) আ আ ম স আমিন (কুড়িগ্রাম-২), আব্দুল মোমেন চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৫), সাইফুল ইসলাম ফিরোজ (ঝিনাইদহ-৪), আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী (টাঙ্গাইল-৭), অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন (বরিশাল-৩), রুমানা মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), জহির উদ্দিন স্বপন (বরিশাল-১), শাহ রিয়াজুল হান্নান (গাজীপুর-৪), নাসের রহমান (মৌলভীবাজার-৩), আব্দুল হাই (মন্সিগঞ্জ-৩), হাফিজ ইব্রাহিম (ভোলা-২), রুহুল আমিন দুলাল (পিরোজপুর-৩), ডা.দেওয়ান মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন (ঢাকা-১৯), হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (ভোলা-৩), তাসভীর উল আলম (কুড়িগ্রাম-৩), মো. সাইফুল ইসলাম (রংপুর-৬), মো. সাদেক রিয়াজ (দিনাজপুর-২), মোস্তফা মহসীন মন্টু (ঢাকা-৭), নজরুল ইসলাম আজাদ (নারায়ণগঞ্জ-২), মইনুল ইসলাম খান শান্ত (মানিকগঞ্জ-২), ইরফান ইবনে আমান অমি (ঢাকা-২), নবিউল্লাহ নবী (ঢাকা-৫), আশরাফ উদ্দিন (নরসিংদী-৫), মো. আমিরুল ইসলাম খান (সিরাগঞ্জ-৫), শহিদুল ইসলাম (টাঙ্গাইল-১), ফরহাদ হোসেন আজাদ (পঞ্চগড়-২), মো. হাসান রাজিব প্রধান (লালমনিরহাট-১), মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৬),মো. আকতারুজ্জামান মিয়া (দিনাজপুর-৪), মো.শাহজাহান মিয়া (চাাঁপাইনবাবগঞ্চ-১),মিজানুর রহমান (সুনামগঞ্জ-৫),জি কে গউছ (হবিগঞ্জ-৩), মজিবুর রহমান চৌধুরী (মৌলভীবাজার-৪), ফারুক আলম সরকার (গাইবান্ধা-৫), শফি আহমেদ চৌধুরী (সিলেট-৩), মো. আনোয়রুল হক (নেত্রকোনা-২), শাহ মো. ওয়ারেস আলী (জামালপুর-৫), নিতাই রায় চৌধুরী (মাগুরা-২),অনিন্দ্য ইসলাম অমিত (যশোর-৩), মো. আবু সুফিয়ান (চট্টগ্রাম-৮), মাসুদ অরুণ (মেহেরপুর-১), আমিন উর রশিদ (কুমিল্লা-৬), ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন (নোয়াখালী-১), শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া (খাগড়াছড়ি), সাব্বির আহমেদ (রংপুর-৩), মুন্সী রফিকুল আলম (ফেনী-১), জয়নাল আবদীন ফারুক (নোয়াখালী-২), সাচিং প্রু (বান্দরবান) শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক (চাঁদপুর-৩), আবুল খায়ের ভূঁইয়া (লক্ষীপুর-২),জাকির হোসেন সরকার (কুষ্টিয়া-৩),রকিবুল ইসলাম (খুলনা-৩),শ্যামা ওবায়েদ ইসলাম (ফরিদপুর-২), আনিসুর রহমান (মাদারীপুর-৩), আজিজুল বারি হেলাল (খুলনা-৪), শাহ মো. আবু জাফর (ফরিদপুর-১), মো. শরিফুজ্জামান (চুয়াডাঙ্গা-১), হাবিবুল ইসলাম হাবিব (সাতক্ষীরা-১), আলী নেওয়াজ মো. খৈয়ুম (রাজবাড়ী-১)।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, নির্বাচনে য়ে দুর্নীতি হয়েছে; সেইসব চ্যালেঞ্জ করে এবং নির্বাচন বাতিল চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। গণফোরামের প্রার্থী ও দলটির নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন,ভোট ডাকাতি, জালিয়াতি করে যে নির্বাচিত করা হয়েছে, সেটিকে চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচিত প্রার্থীর ফল বাতিল ঘোষণা করে আমাকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হোক। তা না হলে বিকল্প আরজি হচ্ছে, নির্বাচনটিই বাতিল করা হোক। এ নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, আমরা এখন স্যাটেলাইট রাষ্ট্রের নাগরিক। আমরা জালিয়াতির এ নির্বাচন বাতিলের দাবি করছি। বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মতো ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো হয়নি। অনেক কেন্দ্রে মৃতব্যক্তিও ভোট দিয়ে গেছে এ ধরনের তথ্য রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। একই সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনঃনির্বাচন দাবি করে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথও নেননি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Md Jahid ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৯ এএম says : 0
বিচারক অসহায় সঠিক বিচার হবে না
Total Reply(0)
অন্যায়ের প্রতিবাদী ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৯ এএম says : 0
লাভ কি সব কোর্ট তাদের পেটিকোট
Total Reply(0)
Tayebul Islam ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৯ এএম says : 0
এই দেশে বিচার দিয়ে কোন লাভ নাই। সৎ বিচার আল্লাহ এই দেশ তেকে অনেক আগে তুলে পেলছে।।
Total Reply(0)
Jahidul Islam ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৪০ এএম says : 0
দ‌েশে ক‌োন আইন ন‌েই
Total Reply(0)
Belal Hajary ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৪০ এএম says : 0
বাংলার আদালতে মামলা হা হা হা
Total Reply(0)
Bishojite Podder ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৪০ এএম says : 0
এগিয়ে চলি ডিজিটাল সোনার বাংলাদেশে!
Total Reply(0)
Jaman Sohel ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৪০ এএম says : 0
বিএনপির কি শুধু ৭৪ জন ভোটে দাড়িয়ে ছে নাকি ৩০০ জন
Total Reply(0)
Mizanur Rahman ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৪০ এএম says : 0
য‌দিও কোন ফায়দা নাই কারন কার কা‌ছে বিচার চাই‌বেন যে দে‌শে প্রধান বিচারপ‌তি‌কে হেনস্হা ক‌রে দেশ থে‌কে বের ক‌রে দেয়া হ‌য়ে‌ছে । ত‌বে লাভ একটা আছে আন্তর্জা‌তিক দৃ‌ষ্টি আকর্ষন । সে ক্ষে‌ত্রে বা‌কিরা কি ব‌সে ব‌সে ভা‌টিয়ালী গীত গাই‌ছেন ?
Total Reply(0)
Dulal Sharma ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৪১ এএম says : 0
৩৩০জনের জন্য নির্বাচনের পরাজয়ের কারণ খুঁজছে মাঠের নেতা কর্মীদের কে কিছু দিনের জন্য চাঙ্গা করতে পারে নাকি সে চিন্তা ভাবনা করে নির্বাচন কমিশন দের কে কিছু বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে বিএনপি জামায়াত ঐক্যফ্রন্টের জোটের নেতাদের মামলা করা ভাল করে এখন কোটের উপরে নতুন করে নির্বাচনের আগে ও পরে অনেক বেশি সচতুর মিথ্যাচার করেছেন বিএনপি জামায়াত ঐক্যফ্রন্টের জোটের নেতাদের । শেষ কোথায় অপেক্ষায় করতে হবে।।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন