মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

মাদক সেবন ও ব্যবসা ইসলাম ধর্মে কঠোরভাবে নিষেধ রয়েছে -স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

৩ লাখ ইয়াবা, ৩০ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বদি পরিবারের ৭ জনসহ আত্মসমর্পণ করল ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ী

বিশেষ সংবাদদাতা কক্সবাজার | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৫:৩৪ পিএম | আপডেট : ৫:৫৯ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

দোষ স্বীকার করে টেকনাফে সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবা, ৩০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৭০টি তাজা কার্তুজসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে শনিবার সকালে আত্মসমর্পণ করেন তারা। এদের মধ্যে রয়েছে এমপি বদির ৩ ভাই, ভাগিনা, ফুফাতো ভাইসহ ৭ জন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল আত্মসমর্পণকারীদের সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, মাদক ব্যবসা একটি ঘৃণিত ব্যবসা। মাদক সেবন ও এর ব্যবসা ইসলাম ধর্মে কঠোরভাবে নিষেধ রয়েছে। এই ঘৃণ্য কাজ থেকে ফিরে আসায় তিনি আত্মসমর্পণকারীদের সাধুবাদ জানিয়ে বলেন যারা এখনো আত্মসমর্পণ করেনি তাদের রেহাই নেই।

শনিবার সকাল ১০টায় টেকনাফে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় কক্সবাজার এখন দেশের একটি অন্যতম উন্নত এলাকা। দুনিয়ার মানুষ এখন এখানে কর্মসংস্থানে আসছেন। কক্সবাজারের মানুষের মাদক ব্যসার মত ঘৃন্য ব্যবসা করার প্রয়োজন পড়েনা। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে আত্মসমর্পণকারীদের পুনর্বাসনেরও ব্যবস্থা করবে সরকার।

তিনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সামাজিকভাবেও মাদক প্রতিরোধে ভূমিকা রাখার আহবান জানান উপস্থিত সবাইকে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কোনো ভাবে নিস্তার দেয়া হবে না। যারা আত্মসর্পণ করেছে তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। যারা আত্মসমর্পণ করবে না তাদেরকে খোঁজে বের করা হবে।

তিনি বলেন, যে ইয়াবা সেবন করলে এত ক্ষতি হচ্ছে সে ইয়াবা কেন আমরা প্রতিরোধ করবো না। অবশ্যই ইয়াবা প্রতিরোধ করবো। আমরা ২০২১ এর স্বপ্ন দেখছি, আমরা ২০৪১ এর স্বপ্ন দেখছি। উন্নয়ন রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের বিস্ময় হয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা থমকে যেতে চাই না। এতে কেউ বাঁধা দিলে আমরা তাকে প্রতিহত করবো।

তিনি বলেন, আমরা দেশের উন্নয়ন তরান্বিত করতে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষষণা করেছি। ইয়াবা এখন দেশকে গ্রাস করেছে। তাই যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আইন করে ইয়াবা প্রতিরোধের উদ্যোগ নিয়েছি। একই সাথে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের প্রতিহত করতে সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। তাই বলতে চাই- ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কোনোভাবেই নিস্তার দেয়া হবে না। কেউ রেহাই পাবে না। সবাইকে ধরা দিতেই হবে। যারা আত্মসমর্পণ করেনি তাদের ব্যাপারে তথ্য নেয়া হচ্ছে। তাদের খোঁজে আমাদের বাহিনী তৎপর রছে। সবাইকে ধরা দিতেই হবে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম সভাপতিত্ব চলমান এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। প্রধান আলোচক ছিলেন আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম।

বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, চট্টগ্রাম রেন্ঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম-বার, পিপিএম, অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন এন্ড ক্রাইম) মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ, কক্সবাজার জেলার চারটি আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, আলহাজ্ব আশেকউল্লাহ রফিক, আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল, শাহীন আক্তার চৌধুরী, বিজিবি’র রিজিওনাল চীফ, ব্যাটালিয়ন চীফ, জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মুুজিবুর রহমান রহমানসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন স্তরের বিপুল সুধী ও দর্শক শ্রোতা।

এতে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছেন ১০২জন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক ইয়াবা ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে ২৯জন গড়ফাদার। আইজিপি জাবেদ পাটোরির হাতে ৩লাখ ইয়াবা, ৩০টি অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। তাদেরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও আইজিপি জাবেদ পাটোরি।
আত্মসমর্পণের দিনই তাদের নামে দুটি মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করা হবে বলে জানান। এর একটি ইয়াবা মামলা, অন্যটি অস্ত্র আইনে। তবে দুটি মামলার ক্ষেত্রেই সরকারি আইনি সহায়তা পাবে আত্মসমর্পণকারীরা।

এই আত্মসমর্পণকারিদের মধ্যে যারা রয়েছেন তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা হলেন, টেকনাফের পশ্চিম লেদা এলাকার মৃত হাজী আবুল কাশেমের ছেলে নুরুল হুদা মেম্বার (৩৮), নাজিরপাড়া গ্রামের মৃত এজাহার মিয়ার ছেলে এনামুল হক ওরফে এনাম মেম্বার (২৪), বেইগ্না পাড়া এলাকার মৃত মাস্টার ছৈয়দ আহম্মদ ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে দানু মেম্বার (৩৭), গোদার বিল এলাকার আলী আহম্মদ ছেলে আব্দুর রহমান (৩২) ও জিয়াউর রহমান (২৭), পশ্চিম লেদা এলাকার হাজী আবুল কাশেমের ছেলে নুরুল কবির (৩৫), হ্নীলা পশ্চিম সিকদার পাড়ার মৃত হাজী খায়রুল বশরের ছেলে ছৈয়দ আহম্মদ ওরফে ছৈয়তু (৫৬), নাজিরপাড়ার হাজী মো. ইসলামের ছেলে আব্দুর রহমান (৩০), টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়ার মৃত এজাহার মিয়ার ছেলে শফিকুল ইসলাম প্রকাশ শফিক (২৯), নাজিরপাড়ার হাজী কালামিয়ার ছেলে সৈয়দ হোসেন (৫৫), নাইটং পাড়ার মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে মো. ইউনুছ (৪৮), পুরাতন পল্লান পাড়ার মৃত হাজী নুরুল ইসলামের ছেলে শাহ আলম (৩৫), আলীর ডেইলর হাজী খুইল্লা মিয়ার ছেলে জাফর আলম (৪৩), জাহাজপুরার মৃত হাজী আব্দুস শুক্কুরের ছেলে নুরুল আলম (২৬), হ্নীলা পশ্চিম সিকদার পাড়ার মৃত হাজী খায়রুল বশরের ছেলে রশিদ আহম্মদ ওরফে রশিদ খুলু (৫৪), হ্নীলা ফুলের ডেইল এলাকার মৃত ছৈয়দুল আমিনের ছেলে রুস্তুম আলী (৩৫), জুমপাড়ার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে শফি উল্লাহ (৩৮), মনতোলিয়া পাড়ার মোহাম্মদ ইসলামের ছৈয়দ আলম (৪০), উত্তর লম্বরীর মৃত মিয়া হোসেনের ছেলে আবদুল করিম মাঝি (৪০), রাজারছড়া এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুস (২৪), জাহেলিয়া পাড়ার শামছু মিয়ার ছেলে মো. সিরাজ (২৮), কচুবনিয়ার আবদুল খালেকের ছেলে আ. হামিদ (৩৫), নাজিরপাড়া মৃত আবুল কাশেমের ছেলে মো. রফিক (৩২), নতুন পল্লানপাড়ার মো. সালামের ছেলে মো. সেলিম (৩২), নাইট্যংপাড়ার আমিন শরীফের ছেলে মো. রহিমুল্লাহ (২৯), নাজিরপাড়ার নুরুল আলমের মো. হেলাল (৩২), চৌধুরী পাড়া গ্রামের মৃত মোজাহার মিয়ার ছেলে মো. আলম (৪৫), হ্নীলা পূর্ব পানখালী এলাকার মৃত আবুল হাসানের ছেলে নজরুল ইসলাম (৫২), তুলাতলী গ্রামের হাজী মোজাফফর আহম্মদের ছেলে নুরুল বশর ওরফে কালা ভাই (৪০), হাতিয়ার ঘোনার মো. ছিদ্দিকের ছেলে দিল মোহাম্মদ (৩৪), হাতিয়ার ঘোনা, করাচিপাড়ার আবদুল হাকিমের ছেলে মো. হাছন (৩২), মুন্ডার ডেইল গ্রামের মো. আব্দুর রহমানের ছেলে মো. সাহেদ রহমান নিপু (৩৩), শিলবুনিয়া পাড়ার হায়দার আলীর ছেলে কামরুল হাসান রাসেল (৩৫), ওলিয়াবাদ এলাকার মৃত এজাহার মিয়ার ছেলে আমিনুর রহমান ওরফে আব্দুল আমিন (৪১), একই গ্রামের মৃত ইব্র্রাহিম খলিলের ছেলে মারুফ বিন খলিল ওরফে বাবু (৩০), আলীর ডেইলের মৃত নজির আহম্মদের ছেলে সাহেদ কামাল (৩২), দক্ষিণ নয়াপাড়ার সোনা আলীর ছেলে নুর মোহাম্মদ (৪২), সদর কচুবুনিয়া এলাকার হাকিম আলীর ছেলে বদিউর রহমান (৪৭), চৌধুরী পাড়ার মৃত এজাহার মিয়া ছেলে ফয়সাল রহমান (২৯), চৌধুরী পাড়ার মৃত অংছেন ছার ছেলে মং সং থেইন ওরফে মমচি (৪৮), কুলাম পাড়া এলাকার মো. ইউনুচ নুরুল বশরের ছেলে নুরশাদ কাউন্সিলর (৩১), দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার হাজী ওসমান গণির ছেলে জুবাইর হোসেন (৩০), পূর্ব লেদার মৃত লাল মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (২৮), আলী খালী এলাকার মৃত হায়দার আলীর ছেলে মো. জামাল মেম্বার (৫২), উত্তর লেঙ্গুর বিল এলাকার জাফর আহম্মদ চেয়ারম্যানের ছেলে দিদার মিয়া (৩৫), মধ্যম জালিয়া পাড়ার আ. গফফারের ছেলে মোজাম্মেল হক (২৮), মৌলভীপাড়ার ফজল আহম্মদের ছেলে একরাম হোসেন (২৫), ডেইল পাড়ার মো. আলীর ছেলে আব্দুল আমিন (৩৪), উত্তর পাড়া, ৮নং ওয়ার্ড, শাহ পরীর দ্বীপ এলাকার মৃত এবাদুল হকের ছেলে রেজাউল করিম মেম্বার (৩৪), উত্তর আলী খালী এলাকার জামাল মেম্বারের ছেলে শাহ আজম (২৮), দক্ষিণ নয়াপাড়ার মৃত মো. আব্দুল্লাহর ছেলে আলমগীর ফয়সাল ওরফে লিটন (৩০), মধ্যম ডেইলপাড়া হাজী মো. শরীফ মো. আব্দুল্লাহ (৩৬), উত্তর শীলখালী এলাকার সোনালী মেম্বারের ছেলে মো. আবু ছৈয়দ (২৫), জাদিমুরা এলাকার আবুল মঞ্জুরের ছেলে মো. হাসান আব্দুল্লাহ (৩৪), উত্তর শীলখালীর সোনালী মেম্বারের ছেলে মো. আবু ছৈয়দ (২৫), জাদিমুরা গামের আবুল মঞ্জুরের ছেলে মো. হাসান আব্দুল্লাহ (৩৪), ঝিনাপাড়ার মৃত মো. কাসেমের ছেলে আলী আহম্মদ (৩৫), মন্ডার ডেইল গ্রামের কবির আহম্মদের ছেলে মো. সাকের মিয়া ওরফে সাকের মাঝি (২৮), রাজার ছড়া এলাকার মো. কাশেমের ছেলে হোসেন আলী (২৭), দক্ষিণ নয়াপাড়ার মু. মৌলভী আলী হোসেনের ছেলে মো. তৈয়ব (৪৬), উত্তর জায়িলাপাড়ার মৃত সৈয়দ নুরের ছেলে নুরুল বশর মিজি (৫৫), নাজিরপাড়ার মৃত কালা মিয়ার ছেলে জামাল হোছাইন (৫৩), মৌলভী পাড়ার মৃত হাজী কালা মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলী (৩৭), মৌলভী পাড়ার মৃত নুরুল হকের ছেলে আ. গনি (৩৩), উত্তর জালিয়াপাড়ার মৃত হাছান আলীর ছেলে মো. হাশেম ওরফে আংকু (৩৮)।

এছাড়াও অন্যান্যদের তালিকা ও নাম পরিচয় আজ দুপুরের মধ্যে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন