রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

৯১ বছরের যুবক করুণানিধি স্বপ্ন দেখেন ফের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার

কাল তামিলনাড়– বিধানসভা নির্বাচন

প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : 

তিনি যখন প্রথমবারের মতো রাজ্য বিধানসভায় নির্বাচিত হন তখন জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আজ নেহেরুর চতুর্থ প্রজন্ম রাজনীতিতে অথচ তিন এখনো রাজনীতির ময়দানে নটআউট। তিনি স্বপ্ন দেখেন কাল সোমবারের বিধানসভা নির্বাচনে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার দল এআইএডিএমকেকে হটিয়ে তার দল ডিএমকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে তিনি ফের মুখ্যমন্ত্রী হবেন। তিনি নিজেকে ৯১ বছরের যুবক বলেই মনে করেন।
ভারতের তামিলনাড়– রাজ্যের অবিসংবাদিত নেতা করুণানিধির বয়স এখন ৯১ বছর। এই বয়সেও তিনি স্বপ্ন দেখছেন সোমবার রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে এবং তিনি আবারও মুখ্যমন্ত্রী হবেন। তার অনেক সমালোচকই তার শরীর স্বাস্থ্যের দিকে ইঙ্গিত করে এর আগে বলেছিলেন যে ২০১৬ সালের নির্বাচন পর্যন্ত তিনি হয়তো নাও টিকতে পারেন। তিনি সমালোচক ও তার রাজনৈতিক শত্রুদের মুখে ছাই দিয়ে এখনো টিকে আছেন এবং বেশ সক্রিয়ই রয়েছেন। রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর কোন ইচ্ছাই এখনো তার নেই।
বয়সের কারণে হুইল চেয়ারে করে তিনি এখন জনসভার মঞ্চে উপস্থিত হন। তাকে এক নজর দেখতে জনসভাগুলোতে এখনো হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। তাকে এক নজর দেখার জন্য লোকজন ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। নেতাকে এক নজর দেখা, তার পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ কামনা তামিলনাড়–তে এক সাধারণ ঘটনা।
১৯২৪ সালের ৩ জুন তামিল নাড়–র থিরুভারুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষা তিনি সমাপ্ত করতে পারেনি। পরে নাম লেখান তামিল চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখক হিসেবে। তিনি ডিএমকে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৪৯ সালে ডিএমকে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৭ সালে প্রথমবারের মতো রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ পর্যন্ত ১২ বার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং সবক’টিতেই নির্বাচিত হয়েছেন। পাঁচবার তামিলনাড়– রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। এখন ষষ্ঠবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। সিনেমার চিত্রনাট্য লেখার পাশাপাশি তিনি অনেক উপন্যাস, গল্প, গান ও কবিতাও রচনা করেছেন। তামিল সাহিত্য ও সিনেমায় তার অবদান লোকজন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে।
সাধারণ মানুষ করুণানিধি সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচীর উল্লেখ করে তাকে সমর্থন করে। জি, থাংগারাজ নামের একজন বাস ড্রাইভার বলেন, ২০০৮ সালে তিনি যখন চাকরিটি পান তখন করুণানিধি ছিলেন ক্ষমতায়। তার চাকরি পাওয়াকে করুণানিধির আশীর্বাদ বলেই তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, করুণানিধি অনেক সড়ক ও সেতু নির্মাণ করেছেন। রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা আমূল পাল্টে দিয়েছেন। তিনি জনগণের প্রয়োজন সম্পর্কে সচেতন।
তিলা থিলাগাভাথি নামের ৫১ বছরের এক নারী বললেন, শিশুকাল থেকে তিনি করুণানিধির সমর্থক কারণ তার পিতামাতাও ডিএমকের সমর্থক ছিলেন। তিনি বলেন, আমার মেয়ের বিয়ের জন্য তিনি আমাকে ২০ হাজার রুপি দিয়েছিলেন যা আমি কখনো ভুলবোনা। মৃত্যু পর্যন্ত আমি করুণানিধিকে ভোট দেব।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর মতে তার জনপ্রিয়তার শিকড় তৃণমূলের অনেক গভীরে। এই রাজ্যে বিগত ছয়-সাত দশকে যা কিছু পরিবর্তন হয়েছে সবকিছুর সঙ্গে রয়েছেন করুণানিধি। এখন ১৩ বারের মতো রাজ্য বিধানসভায় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। রাজনীতিতে তার উত্তরসুরি ঠিক করা হয়েছে তার ছেলে এমকে স্ট্যালিনকে। তবে ক্ষমতার জন্য তাকে অনেকদিন অপেক্ষা করতে হবে বলেই পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। করুণানিধি বলেন, প্রকৃতি কোন কিছু ঘটালে তবেই স্ট্যালিন মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন এর আগে নয়। পুত্র স্ট্যালিনের বয়স এখন ৬৩।
দলের মুখপাত্র টিকেএস ইলাংগোভান করুণানিধি খুব বৃদ্ধ সমালোচকদের এই মন্তব্য রাবিশ বলে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, তিনি এখনো একজন যুবকের মতই সক্রিয়, তার স্মৃতি একেবারের টনটনে। এখনো তার ব্রেইন খুবই শার্প। ৪০ দশকে একজন নাস্তিক ও স্বঘোষিত যুক্তিবাদী হিসেবে তিনি দ্রাবিড় আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে বিখ্যাত হয়ে উঠেন। এই আন্দেলন ব্রাহ্মণদের বর্ণ শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় এবং তিনি রাজ্য জুড়ে হিন্দি ভাষার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ সংঘটিত করেন।
তিনি এমন এক দেশের নেতা যেখানে জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের বেশী লোকের বয়স ৩৫ বছরের নীচে। সে দেশে এমন বয়স্ক নেতাদের অব্যাহত জনপ্রিয়তা এক বড় রহস্য। ৩০ বছর বয়সী আইনজীবী সুরিথ পার্থসারথি বলেন, রাজ্যে কেন করুণানিধি এখনো ড্রাইভিং সিটে রয়েছেন তারও কারণ রয়েছে। তিনি রাজ্যে জনকল্যাণে অনেক কাজ করেছেন। বিপুল সংখ্যক মানুষ তাকে একজন অভিজ্ঞ প্রশাসক হিসেবে বিবেচনা করেন। তার মতে জনগণ তরুণ নেতৃত্ব চায়না। তারা চায় অভিজ্ঞ নেতৃত্ব। জনগণ চায় বিদ্যুত, কর্মসংস্থান ও সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠা। কে এটা দিতে পারেন জনগণ সেটাই বিবেচনা করে তার বয়স ৬০ বা ৯০ এটা তাদের কাছে বিবেচ্য নয়।
কয়েকটি সংবাদপত্র মন্তব্য করেছে যে, বর্তমান নির্বাচনই হয়তো করুণানিধির শেষ নির্বাচন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক কৃষ্ণমূর্তি ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, আমি মনে করিনা এটাই তার শেষ নির্বাচন। আরো পাঁচবছর বেঁচে থাকলে তিনি পরবর্তী নির্বাচনেও অংশ নেবেন। যতদিন বেঁচে থাকবেন তাকে ছাড়া নির্বাচন কল্পনাও করা যায়না। তাঁর বয়স ৯৯ বা ১০৯ যা-ই হোক না কেন এটা বিবেচ্য নয়, বেঁচে থাকলে তিনি রাজনীতি করবেন এবং নির্বাচনেও দাঁড়াবেন এটাই বাস্তবতা। সূত্র : বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন