ভাষা আন্দোলন গঠনে যে ক’জন তেজোদীপ্ত তরুণ ছাত্রনেতা বিশেষ অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে মুহাম্মদ দবিরুল ইসলাম অন্যতম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহপাঠী। দবিরুল ইসলাম ১৩ মার্চ ১৯২২ সালে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলাধীন বামুনিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মাওলানা তমিজউদ্দিন আহমেদ ও মাতা দখতর খানম। দবিরুল ঠাকুরগাঁও হাই স্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে চতুর্থ স্থান অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের স্বাধীকার আন্দোলন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবিরোধী ও অন্যান্য আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ায় নিয়মিত লেখাপড়ায় ছেদ পড়ে এই মেধাবী শিক্ষার্থীর। তিনি ব্রিটিশ সরকারের রোষানলে পড়েন।
দবিরুল ১৯৪৭ সালে বিএ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন শাস্ত্রে ভর্তি হন। ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন। ১৯৫৫ সালে কারাগারে থেকেই এলএলবি পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সাথে উর্ত্তীর্ণ হন। ১৯৪৮ সালে নঈমুদ্দিন আহমদকে আহ্বায়ক করে পূর্ব পাকিস্তান মুসলীগ ছাত্রলীগের প্রথম সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিতে দিনাজপুর জেলা থেকে দবিরুল ইসলাম, ফরিদপুর জেলা থেকে শেখ মুজিবর রহমান, কুমিল্লা থেকে অলি আহাদসহ বিভিন্ন জেলার ১৩ জন সদস্য হিসেবে অন্তভূর্ক্ত হন। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলন শুরু হলে দিনাজপুরের নূরুল হুদা, কাদের বক্স, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, এম আর আক্তার মুকুল, দবিরুল ইসলাম প্রমুখ নেতৃত্ব দেন।
১৯৪৯ সালের সেপ্টেম্বরে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের প্রথম কাউন্সিল অধিবেশন বসে। দবিরুল ইসলাম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে দবিরুল ইসলাম যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় পার্লামেন্টারি সেক্রেটারী (শিল্প, বাণিজ্য ও শ্রম) নিযুক্ত হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে সুগার মিল স্থাপনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিরল প্রতিভার অধিকারী দবিরুল ইসলাম ১৯৪৯ ও ১৯৫৪ সালে কারাগারে নির্যাতন ভোগ করায় হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৬১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
পৃষ্ঠপোষকতা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির অভাবে দবিরুল হারিয়ে যাচ্ছেন। ভাষা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী ত্যাগী এই ভাষাসৈনিকের অবদান নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরে স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছে তার পরিবার। দবিরুলের স্ত্রী আবেদা ইসলাম জানান, বঙ্গবন্ধুর সাথে তার স্বামীর ভালো সম্পর্ক ছিল। অথচ এখন পর্যন্ত তার স্বামীকে জাতীয়ভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। তিনি বর্তমান সরকারের কাছে কিছুই চান না। তার স্বামীর রাষ্ট্রীয় মূল্যায়ন চান। ২০১২ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই মহান ভাষাসৈনিককে মরণোত্তর সম্মাননা দেয়া হলেও তার অবদান অনুযায়ী মহান একুশে পদকসহ জাতীয় ভিত্তিক স্বীকৃতি তার প্রাপ্য বলে মনে করেন ঠাকুরগাঁওবাসী।
দবিরুল ইসলামের ছেলে আহসান হাবীব বুলবুল এবার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি টেলিফোনে ইনকিলাবকে বলেন, তার বাবা মহান ভাষাসৈনিক। তিনি বাবার অবদানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন