মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সুনামগঞ্জে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে ধীরগতি

আতঙ্কিত কৃষক

সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার ৩৭টি হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ড বোরো ফসলরক্ষায় বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুমাস পেরিয়ে গেলেও ২০ ভাগ প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু হয় নি। এসব প্রকল্প এলাকার কৃষকরা বোরো ধান গোলায় তোলা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। জেলায় সামগ্রিকভাবে ৪০ ভাগ কাজও হয়নি।

কৃষকদের অভিযোগ প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি (পিআইসি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সেকশন অফিসার (এসও) শাখা কর্মকর্তাদের যোগসাজসে বাঁধের কাজ সময় মতো শুরু করেনি পিআইসি। কৃষকদের অভিযোগে পিআইসি নদীতে পানি আসার অপেক্ষা করে। নদীতে পানির তোড়জোর না থাকলে তারা কাজ শুরু করে দেরীতে। এর কারণ নামমাত্র কাজ করে সমুদয় বিল তোলে নেওয়ার মতলব আটতে থাকে।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, নীতিমালা অনুযায়ী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন ও ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করা এবং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। এ নির্দেশনার বিপরীতে সোমবার পর্যন্ত জেলার ৫৬৬টি পিআইসির মধ্যে ২০ ভাগ পিআইসি হাওরের ফসলরক্ষা বাধের কাজ শুরুই করেনি। কাজ শুরু না করেও প্রকল্প এলাকায় কাজের বিবরণ দিয়ে অগ্রিম কাজ শুরু করার তারিখ লিখে রাখা হয়েছে সাইবোর্ডে। এ সাইনবোর্ডে গ্রলোতে তারিখের ঘর খালি রেখে মাসের ঘরে জানুয়ারি বছরের ঘরে ২০১৯ লিখে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পিআইসির বড় রকমের শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে বলেও জানান কৃষকরা।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জোয়াল ভাঙার হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ড বোরো ফসলরক্ষায় বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুমাস পেরিয়ে গেলেও ১০ ভাগ প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু হয় নি। এসব প্রকল্প এলাকার কৃষকরা বোরোধান গোলায় তোলা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এ বছর সদর উপজেলার এ হাওরটিতে আড়াই সহস্রাধিক জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেনসহ সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে। এ হাওরের তীরবর্তী নিধিরচর গ্রামের দক্ষিণ সংলগ্ন জিরাগ নদীর ক্লোজার সবেমাত্র কাজ শুরু করেছে পিআইসি। এ পিআইসির কোন সাইবোর্ড নেই।

পিআইসি সদস্য মছদ্দ আলী জানান, ২/৩ দিন আগে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫ ভাগ কাজ হয়েছে এ পিআইসিতে। সাইনবোর্ড কোথায় জানতে চাইলে ওই পিআইসির সদস্য মছদ্দর আলী এক সময় এক কথা বলছেন। কখনো বলছেন, সাইনবোর্ডটি বাড়িতে রয়েছে। পরক্ষণেই বলছনে অন্য জনের কাছে আছে। দুই ঘন্টা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তিনি এ প্রকল্পের কোথায় কাজ করা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে এ প্রকল্পটি ৪ নম্বর পিআইসি বলে জানান তিনি।

অপরদিকে ওই প্রকল্পের ইচ্ছারচরের উত্তরে নিয়ামতপুর এলাকায় নিয়ে গেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায় ওই প্রকল্পের পুরাতন বাঁধের উপর কোথাও এক ফুট আবার কোথাও দেড় ফুট ফেলা হয়েছে। তবে ওই বাঁধে নীতিমালা লঙ্ঘন করে বাঁধের নীচ থেকে মাটি তোলা হয়েছে। ওই বাঁধে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৮ টাকা। অপরদিকে জিরাগ নদীর নাফিতের খাল প্রকল্পে যা ২ নম্বর পিআইসি এ পিআইসিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮ লাখ ২৬২ টাকা। ওই প্রকল্পেও বাঁধের নীচ থেকে মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়াও এ বাধের মাটি কম্পোস্ট, স্লোপ নীতিমালা অনুযায়ী হয়নি। এ বাঁধের কাজ দেখে উপ-পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন ক্ষুব্দ হয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে সরেজমিন থেকেই পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে ফোনে বিষয়টি অবহিত করেছেন। স্থানীয় কৃষকরা জানান, ২ নম্বর পিআইসির ওই প্রকল্পটি অর্থাৎ নাফিতের খাল খরচার হাওরের জন্য অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। কিন্তু ওই প্রকল্পে যেনতেনভাবে কাজ করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, জেলায় ছোট-বড় ১৫৪ টি হাওরে বোরো ধান চাষ করা হয়। এরমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩৭ টি হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করে। চলতি মওসুমে এ জেলায় ২ লাখ ১৫ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে ।

জেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর পওর শাখা-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া জেলার ৩৭টি হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে দাবি করে জানান, এবার ৫৬৬টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৯৭ কোটি টাকা। এর প্রথম কিস্তি ২৪ কোটি টাকা পিআইসিদের দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির ২৪ কোটি টাকা চলে এসেছে। কাজের অগ্রগতি দেখে টাকা পিআইসি অনুকূলে ছাড় দেওয়া হবে। এখনও যেসব পিআইসি কাজ শুরু করেনি তাদের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন