বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

উত্তরবঙ্গের দুই আন্তঃনগর ট্রেনে ব্যাপক শিডিউল বিপর্যয়

কর্মকর্তাদের অবহেলাই দায়ী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৯:২৮ পিএম

রংপুর থেকে ঢাকামুখি রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি শনিবার রাত ৮টায় ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেনটি ছেড়েছে গতকাল রোববার সকাল ৬টা ১৮ মিনিটে। ট্রেনটি আসতে আসতে ১২ ঘণ্টা লেট। যাত্রীরা অতিষ্ঠ, বিরক্ত। উতরবঙ্গের অপর আন্তঃনগর লালমনি এক্সপ্রেস গতকাল লালমনিরহাট থেকে ছেড়েছে বেলা ১২টা ১০ মিনিটে। ছাড়ার কথা ছিল সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে। ঢাকার দিকে আসতে আসতে ট্রেনটি প্রায় ৩ ঘণ্টা লেট করে। এই ট্রেনের যাত্রীরাও বিরক্ত। ভুক্তভোগি যাত্রীদের ভাষায়, ৯টার ট্রেন কয়টায় ছাড়ে- বহুল প্রচলিত এই প্রবাদও হার মেনেছে উত্তরবঙ্গের এই দুই ট্রেনের কাছে। এখন বলতে হচ্ছে-আজকের ট্রেন কবে ছাড়বে?

রাজধানীর সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি জেলার সহজ ও সাশ্রয়ী যোগাযোগের জন্য রয়েছে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন- রংপুর ও লালমনি এক্সপ্রেস। কিন্তু ইদানীং ট্রেন দুটিতে ব্যাপক শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে যাত্রীরা যারপরনাই বিরক্ত এবং হতাশ। কর্তৃপক্ষ বলছে, ঘন ঘন বগি ও পাওয়ার কারে ত্রুটি, লোকোমোটিভ ও জনবল সংকটের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। একই কারণে এখন লোকাল ট্রেনগুলোও সময়মতো চলাচল করতে পারছে না।
জানা গেছে, শনিবার হঠাৎ করেই রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের পাওয়ার কারে ত্রুটি দেখা দেয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারায় পাওয়ার কারকে ড্যামেজ ঘোষণা করা হয়। এতে করে ট্রেনটি ঢাকা থেকে প্রায় ৯ ঘণ্টা পরে ছাড়ে। এতে করে শনিবারের ট্রেন রংপুর পৌঁছতে পৌঁছতে রোববার হয়ে যায়। ভুক্তভোগি যাত্রীরা জানান, লালমনিরহাটে অতিরিক্ত রিজার্ভ কোচ থাকার পরেও কর্তৃপক্ষ সঠিক সময়ে ট্রেন ছাড়ার কোনো উদ্যোগ না নেযায় পরিস্থিতি ক্রমে ভয়াবহ হয়েছে। অনেকেই শনিবার রাতে রংপুর থেকে ট্রেনে উঠে ভোরে ঢাকায় এসে রোববার অফিস করার কথা ছিল। ট্রেনটি ১২ ঘন্টা লেট করায় তা আর সম্ভব হয়নি। বরং অনেকেই টিকিট ফেরত দিয়ে বহু টাকা লোকসান করেছেন। আবার কেউ কেউ টিকিট ফেরতও দিতে পারেন নি।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে নিয়ন্ত্রণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি লালমনি এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছাড়ে সোয়া ৩ ঘণ্টা দেরিতে রাত ১টা ২৫ মিনিটে। লালমনিরহাট স্টেশনে পৌঁছে পরদিন দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে। ওই দিন ৩ ঘণ্টা ৫ মিনিট দেরিতে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ভুক্তভোগি যাত্রীরা জানান, মাস কয়েক আগেও ট্রেন দুটি নির্ধারিত সময় থেকে ১ থেকে দেড় ঘণ্টা দেরি করত। কিন্তু বর্তমানে নিয়মিত ৫ ঘণ্টা বা তারও বেশি দেরি হচ্ছে।
ভুক্তভোগিদের মতে, রংপুর এক্সপ্রেস ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন দুটিতে লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার পাশাপাশি কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও বগুড়া জেলার লোকজন যাতায়াত করে থাকে। নানা সমস্যা থাকার পরও সহজ ও সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে উত্তরবঙ্গের মানুষ দূরবর্তী গন্তব্যে ট্রেন দুটিকেই অগ্রাধিকার দেয়। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই ট্রেন দুটিকে বরাবরই অবহেলার চোখে দেখে।
ভুক্তভোগিদের মতে, সপ্তাহের শেষ দিনগুলোয় প্রায় ৫ ঘণ্টারও বেশি দেরিতে ট্রেন দুটি চলাচল করছে। এ বিষয়টি এখন যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। রেবেকা নামে রংপুর এক্সপ্রেসের একজন যাত্রী বলেন, রংপুর এক্সপ্রেস ধরার জন্য শনিবার সন্ধ্যায় তিনি কাউনিয়া স্টেশনে হাজির হন। স্টেশনে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর জানতে পারেন ট্রেনটি প্রায় ৯ ঘণ্টা দেরিতে আসছে। তার বাড়ি কাউনিয়া থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে। রাতে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আর উপায় ছিল না। বাধ্য হয়ে স্টেশনে বসে রাত কাটিয়ে দেন।
একই কথা বলেন আরেক যাত্রী শিউলী আক্তার। তিনি জানান, ১৬ ফেব্রুয়ারি বগুড়া স্টেশন থেকে রংপুর যাওয়ার জন্য রাত ১০টায় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন। যদিও ট্রেনটি বিকাল ৫টার দিকে বগুড়া আসার কথা ছিল। তিনি রংপুর পৌঁছান রাত প্রায় আড়াইটার দিকে। এত রাতে পরিবার-পরিজন নিয়ে তার মতো আরও অনেক যাত্রী বিপাকে পড়েন।
উত্তরবঙ্গের এ দুটি ট্রেন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা আর হতাশার ঝড় বইছে বহুদিন ধরেই। নবাব সিরাজ নামে একজন ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে ফ্যানস ফোরাম’ নামক ফেসবুকে লিখেছেন, রংপুর এক্সপ্রেস এমন একটা ট্রেন যা ১৫ ঘন্টা বিলম্বে চলে বিশ্ব রেকর্ড করেছে। গিনেস বুকের কর্তৃপক্ষ জানলে এটা গিনেস বুকে জায়গা করে নিবে। ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ নামে এক ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে-এ মাসের ১৬ তারিখ থেকে রংপুর এক্সপ্রেসের একটি রেক লালমনিরহাটে বসে আছে। আর রংপুরর এক্সপ্রেস সিঙ্গেল রেক নিয়ে সাত ঘন্টা বিলম্বে চলাচল করছে।১৯ তারিখ স্পেয়ার রেক দিয়ে রাইট টাইম করার কথা শুনেছিলাম একবার। ১৬ হতে ২২ তারিখ, এই ছয় দিনে ও পাওয়ার কার ঠিক করা সম্ভব হয় নি। অবাক করা বিষয়। লালমনিরহাট বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ৭ দিনেও ঠিক করতে পারে নি একটি পাওয়ার কার। আর আমরা যাত্রী সাধারণ তাদের গাফলতি অনায়সে মেনে নিয়ে ৭ ঘন্টা বিলম্বে ভ্রমণ করছি।
এ ব্যাপারে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিএস) সাজ্জাত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি একটি লোকোমোটিভ দিয়ে আপ ও ডাউন চালানো হচ্ছে। কোচগুলোও পুরনো হওয়ায় ঘন ঘন যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। তাছাড়া জনবল সংকটের কারণে কিছু স্টেশনে ট্রেন ক্রসিং কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতেও কিছু সময় অপচয় হয়। এসব কারণেই শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। আর আন্ত:নগর ট্রেনের সময়সূচি নড়চড়ের কারণে লোকাল ট্রেনগুলোও শিডিউলমতো চলছে না।
রংপুর এক্সপ্রেসের ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ট্রেনের পাওয়ার কার এবং কোচে যান্ত্রিক সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। এ কারণে ট্রেনটি ৫ ঘণ্টারও বেশি দেরিতে চলাচল করছে। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমি নিজেই সাড়ে ৫ ঘণ্টা দেরিতে ওই ট্রেনে দায়িত্ব পালন করে এসেছি। যেখানে আগে ট্রেন দুটি চলাচলে ১ থেকে দেড় ঘণ্টার বেশি দেরি হতো না বলে জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোহাম্মদ শাহজাহান ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
আগামী সপ্তাহে বি, বাড়িয়া থেকে আমাকে রংপুর যাইতে হবে" যেতে হবে রংপুর এক্সপ্রেশ নামক কুম্ভ কূর্ণের সোয়ারী হয়ে সঙ্গে সহযাত্রী হয়ে সঙ্গ দিবেন প্রিয়তমা স্ত্রী⭐ আমার গিন্নির সড়ক পথ একেবারেই অপছন্দ তাই এই কুম্ভ কুর্ণের যাত্রা যতই বিলম্ব হোক এতে সোয়ারী হয়ে আমাকে ভ্রমন করতেই হবে✔ উপায় নেই গোলাম হোসেন
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন