বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের বিমান হামলা

| প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার জেরে ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালিয়েছে। হামলায় কথিত জঙ্গি আস্তানা ধ্বংস করেছে বলে ভারত দাবী করেছে। পুলওয়ামায় আত্মঘাতি জঙ্গি হামলায় ভারতীয় সেনা বাহিনীর অন্ত ৪৪ সদস্য নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। সেই থেকে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের হুমকি, পাল্টা হুমকি ও চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলওয়ামা হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবেই এই হামলার জন্য জইশ-ই মোহাম্মদ গ্রুপ এবং পাকিস্তানকে দায়ী করেন নরেন্দ্র মোদি। কোনো রকম তদন্ত বা তথ্য প্রমান ছাড়াই পাকিস্তান এ ধরনের দোষারোপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিল। সেই সাথে ভারতের যে কোনো ধরনের হামলার জবাব দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছিল পাকিস্তান। অবশেষে গত মঙ্গলবার ভারতীয় বিমান বাহিনীর মিরেজ-২০০০ জঙ্গি বিমানগুলো কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে পাকিস্তানের বালাকোটে কথিত জঙ্গি আস্তানায় হামলা চালায়। ভারতের এই বিমান হামলার পর পাকিস্তানী জঙ্গি বিমানও ভারতীয় সীমান্ত রেখা অতিক্রম করেছে বলে জানা যায়। ইতিমধ্যে কাশ্মীরে ভারতীয় একাধিক জঙ্গি বিমান ধ্বংস ও ভূপাতিত হওয়ারও খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে স্পষ্টতই আরেকটি যুদ্ধের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এ ধরনের পরিস্থিতি পুরো উপমহাদেশকেই অস্থিতিশীল ও নিরাপত্তাহীন করে তুলতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। জঙ্গিবাদের সমস্যা কোনো রাষ্ট্রের একক সমস্যা নয়। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে এ সমস্যা মোকাবেলার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। কাশ্মীরের সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা অথবা যুদ্ধ সমস্যা সমাধানে কোনো ইতিবাচক ফল তো দেবেই না, উপরন্তু যুদ্ধের সিদ্ধান্ত পুরো অঞ্চলকে আরো অনিরাপদ করে তুলতে পারে।
পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা নি:সন্দেহে একটি ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা। ঘটনার তদন্ত বা পূর্বাপর বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই পাকিস্তানের উপর দোষ চাপানো এবং যুদ্ধের উস্কানী ও উত্তেজনা ছড়ানোকে পেছনে ভারতের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নরেন্দ্র মোদির একটি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে মনে করছেন ভারতের কোনো কোনো রাজনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা মমতা ব্যানার্জী নরেন্দ্র মোদির প্রতি জওয়ানদের রক্ত নিয়ে রাজনীতি না করার আহ্বান জানিয়েছেন। মমতার অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনের আগে যুদ্ধ নিয়ে জনমনে একটি হিস্টিরিয়া তৈরী করে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইছে বিজেপি। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি রাজ্যসভা নির্বাচনে বিজেপির পরাজয় থেকে অনেকেই আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির আশঙ্কা করছে। এহেন বাস্তবতায়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অভিযোগ হচ্ছে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধাবস্থা এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানীর মাধ্যমে ভোটের মাঠে একটি নতুন মেরুকরণ ঘটাতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার। বহু ভাষা ও সংস্কৃতির দেশ ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে পুঁজি করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিজেপি নানা ধরনের ইস্যু সৃষ্টি করেছে। গোরক্ষা আন্দোলন, আসামের এনআরসি ও কাশ্মীরে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টির ঘটনাকে ভারতের কোনো কোনো সেক্যুলার ও বামপন্থী মহলের পক্ষ থেকে নরেন্দ মোদির রাজনৈতিক কৌশল বলে গণ্য করা হচ্ছে। তবে প্রায় সব ক্ষেত্রেই ভারতীয় মুসলমানরাই বিজেপির মূল রাজনৈতিক টার্গেটে পরিনত হচ্ছে। গোরক্ষার নামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা,আসামের এনআরসি বা কাশ্মীরের জঙ্গি দমনের নামে নির্বিচারে মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে। গত বছর কাশ্মীরে ৩ শতাধিক নিরস্ত্র মানুষ ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতীয় রাজনৈতিক নেতাদের কোনো প্রতিবাদ বা মাথাব্যথা নেই।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে বিশ্বের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুরনো ধ্যান-ধারনার বদলে যাওয়াই ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত অঞ্চল হওয়া সত্বেও ভারতীয় উপমহাদেশের নেতাদের মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। তারা এখনো পুরনো সাম্প্রদায়িকতা ও হীন রাজনৈতিক কৌশলকে ক্ষমতায় যাওয়া বা টিকে থাকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। কাশ্মীরের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণে গণভোট তথা কাশ্মীর নাগরিকদের স্বাধীন ইচ্ছার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে বহু আগেই। গত ৭০ বছরেও কাশ্মীরের ভাগ্য নির্ধারনে গণভোটের অধিকারের স্বীকৃতি বাস্তবায়নে ভারতের অনিচ্ছা ও একরৈখিক মনোভাব সমস্যাটিকে জিইয়ে রেখেছে। কাশ্মীরকে হাতে রাখতে রাজনৈতিক সমাধানের বদলে ভারত বরাবরই সামরিক বাহিনীর উপর নির্ভর করেছে। কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে অন্তত দুইবার যুদ্ধ এবং অসংখ্য সামরিক সংঘাতের ঘটনা ঘটলেও মূল সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। কাশ্মীর ইস্যু পুরো উপমহাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বহুমুখী সম্ভাবনার ক্ষেত্রসমুহকে বাঁধাগ্রস্ত করে রেখেছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ভারতীয় উপমহাদেশ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে পিছিয়ে পড়লেও ভারত ও পাকিস্তান ইতিমধ্যে পারমানবিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশী সংখ্যক দরিদ্র মানুষের বসবাস ভারতে। ঐতিহাসিকভাবে কাশ্মীরিরা একটি স্বাধীন এনটিটি। তারা ভারত বা পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রনাধীন থাকতে চায় না। গত কয়েক দশকে দক্ষিণ সুদান, পূর্ব তিমুর সহ বিশ্বের বেশ কিছু অঞ্চলের মানুষের ভৌগলিক-রাজনৈতিক ভাগ্য আন্তজার্তিক মধ্যস্থতায় গণভোটের মধ্য দিয়ে সমাধান করা করা হয়েছে। কাশ্মীর সমস্যার সমাধানও এভাবেই হতে পারে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের মধ্য দিয়ে কোনো পক্ষেই সামরিক বা রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিজয় অর্জন সম্ভব নয়। আলোচনার মাধ্যমেই কাশ্মীর ইস্যুর সমাধানে আসতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
Ali Akbar ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
100% Agree with you. both country now owner of nuclear power. So peach talk is only better solution
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
ভারতের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেল জঙ্গিরা পাল্টা গুলি তাদের বিমান লক্ষ করে গুলি করছে ! তারা যদি ঘুমেই থাকত তাহলে এরা কারা ! নাকি বলিউডের এনিমেটেড ফিল্ম ! বিমান হামলা অত সময় নিয়ে হয়না .....
Total Reply(0)
Nahid hasan ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রচারিত ‘লাইন অব কন্ট্রোল(এলওসি) পার হয়ে হামলা’র ভিডিওটি তিন বছর আগের। গুগলে সার্চ করে এই তথ্য জানা গেছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি গণমাধ্যম জিওটিভি। মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে এলওসি লঙ্ঘনকারী ভারতীয় বিমানটিকে পাকিস্তান এয়ার ফোর্স প্রতিহত করে কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যমে সারাদিনই তিন বছর আগের ওই ভিডিওটি প্রচারিত হয় বলে দাবি করা হয় গণমাধ্যমটিতে। এতে বলা হয়, ২০১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকেই ভিডিওটি ইউটিউবে আছে এবং ভারতের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’কে অতিরঞ্জিত করতে এটি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের নাইট-টাইম ফ্লাইংয়ের একটি ভিডিও। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুরের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিমান এলওসি লঙ্ঘন করে মুজাফফারাবাদ সেক্টর হয়ে অনুপ্রবেশ করে কিন্তু পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের প্রতিরোধে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
Total Reply(0)
Al Harun ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
হতাহতের বিষয়টা এখনো ভারতের একতরফা প্রচারনা মাত্র, বিবিসি প্রতক্ষ্যদর্শীদের যে ভাষ্য প্রচার করেছে তাতে একজন আহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে গ্রামবাসী।
Total Reply(0)
Md.Imran Hossain ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
ভারতের গোয়েন্দারা এতটা শক্তিশালী যে নিজেদের দেশের ভেতর হামলা হলে রক্ষা করতে পারে না, আগে থেকে টের পায় না, অথচ পাকিস্থানের ভেতর জঙ্গীরা কি করছে সেটা খুব ভাল করে টের পায়।
Total Reply(0)
rafayet abdullah ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
সত্যিই যদি যুদ্ধ হয়, তবে বাংলাদেশ ও অনেক ক্ষতির সম্মুক্ষীন হবে।।।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
ক্ষবর হচ্ছে পাকিস্তানের ৩০০ গাছ ফেলার জন্য ভারতের দরকার হয়েছে ৬ হাজার ৩০০ কোটি রুপির সম্পদ।
Total Reply(0)
Rahul Nigam ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
সারা বিশ্ব মানুষ বাচানোর চেয়ে মানুষ মারার অস্ত্রের প্রতি বেশি পয়সা খরচ করে....ওই পয়সা গুলো দিয়ে যদি গরিব মানুষদের সাহায্য করা যেতো তাহলে হয়তো সন্ত্রাস জন্ম নিতো না। ...বেশির সন্ত্রাস ই শিক্ষিত তারা লেখা পড়া করে যখন চাকরি না পায় তখনই তারা সন্ত্রাসীর পথ বেছে নেয়। বিশ্বের প্রতিটি দেশে যদি যুবক দের চাকরি বাধ্যতামূলক করা যেতো তাহলে আমার মনে হয় না কেউ সন্ত্রাসের পথ বেছে নিবে। কিন্তু বিশ্ব আজ ওই পয়সা দিয়ে ভারি ভারি অস্ত্র কিনে নিজেদের পাল্লা ভারি করে রাখছে ,,, কিন্তু তাতে লাভ কি? এতো দামি অস্ত্র তো সহজে ব্যবহার করা হয় না অথচ বেশি টাকা খরচ করে অস্ত্র জমিয়ে রেখে টাকা গুলো আটকে রাখে। যদি এই সব অস্ত্র না কিনে বেকার সমস্যার সমাধান করা যেতো ওই অস্ত্র কেনার টাকা দিয়ে তাহলে কেউই খারাপ পথে যেতো না বলে আমি মনে করি।
Total Reply(0)
MD SAIFUL ISLAM SARKER ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
Just wondering, if India and Pakistan would have spent that money for improving the condition of poor people in Kashmir and other areas, it would be far better. War can not bring peace. Wish they sit down together and sort out the matter.
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
Modi took the initiative to make muddy water. Its his responsibility to think peace not an election.
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৬ এএম says : 0
পররাস্ট্রমন্ত্রি সুষমা বলেছেন,ভারত আর উত্তেজন চায় না!! কি বুঝলেন!!!!"?????????
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১:৫৬ এএম says : 0
Pakistan has nothing to lose. They are already looser. But war occurs India will suffer more than Pak.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন