বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

রাগ হলে চিৎকার করবেন না

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৯, ১২:১১ এএম

রাগ হলে আমরা মেজাজ হারিয়ে অনেক কথাই বলে ফেলি। যা পরে শোধারানো খুব সমস্যা হয়ে পড়ে। তাই রাগ করলে হেরে যাব এই মানসিকতা নিয়ে যদি চলা যায়, তাহলে কিছুটা হলেও আপনার জীবনের চাপগুলো অনেকটা কমে যায়। তাহলে রাগ নিয়ন্ত্রণের কয়েক ধাপ পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক। রাগ হলে সে সময় ঠিক কী করা উচিত, আর কী নয়। 

যা যা করবেন না- হ ঘুমাতে যাবেন না। রাগের মাথায় ঘুমাতে গেলে মাথায় নেতিবাচক আবেগ জমা হয়ে যায়। হ রাগের মাথায় কখনও গাড়ি চালাবেন না। গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, রাগি চালকরাই বেশি দুর্ঘটনায় পড়েন। হ রাগ হলে সেই সময় কোনও কথা বলবেন না। রাগের মাথায় খারাপ কিছু কথা বলে ফেলতে পারেন যা অন্যের খারাপ লাগতে পারে। হ রাগের মাথায় কখনওই খাবেন না। মানুষ রেগে গেলে অস্বাস্থ্যকর খাবারকেই খাবার জন্য বেছে নেয়। তাই সে ক্ষেত্রে শরীর খারাপ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। হ ফেসবুক করবেন না। রাগের মাথায় কোনও পোস্টেও খারাপ উত্তর দিয়ে ফেললে হিতে বিপরীত হতে পারে। ই-মেইল করবেন না। মাথা গরম থাকা অবস্থায় ই-মেল একেবারেই করবেন না। তাতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আর ই-মেল গ্রাহকের কাছে আপনার সম্বন্ধে ভুল ধারণা পৌঁছবে। হ রক্তচাপকে অবহেলা নয়। রাগ করলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আর যাঁদের হাই প্রেশার রয়েছে তারা কখনওই রেগে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়বেন না। হ গভীরভাবে কোনও বিষয় নিয়ে ভাববেন না। এতে মস্তিস্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।
যা যা করবেন- হ রাগ হলে, আগে সেই সময় নিজেকেই জিজ্ঞাসা করুন, সে বিষয় নিয়ে কি আপনার সত্যিই রাগ করার কোনও কারণ রয়েছে? নাকি ২৪ ঘন্টা সময় আপনি সে বিষয়টিকে নিয়ে ভাবার জন্য নিতে পারবেন। যদি, আপনার উত্তর এমনটা হয় যে আপনি ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা করতে পারবেন না। তাহলেই রাগ হলে সঙ্গে সঙ্গে তা প্রকাশ করুন। হ রাগ করে যখন কথা বলবেন, তখন একবার ভেবে নিন আপনি যেভাবে কথা বলছেন, অন্য কেউ রাগ করে আপনার সঙ্গে এইভাবে কথা বললে আপনার কেমন প্রতিক্রিয়া হত। এই কথাটা চিন্তা করে কাজ করুন। রাগ হলে, সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। বেরিয়ে খোলা জায়গায় কিছুক্ষণ হেঁটে আসুন। মন ভালো হবে। হ রাগ হলে সেই সময় প্রথমে আস্তে আস্তে গভীর শ্বাস নিন। তারপর জোরে জোরে শ্বাস নিন। আর মনে মনে বলতে থাকুন ‘রিল্যাক্স’, ‘ইটস্ ওকে’, ‘ডোন্ট ওরি’। এই প্রক্রিয়া আপনার মনকে শান্ত করবে। হ রাগ হলে প্রথমে চিন্তা করুন, কেন আপনি রেগে গেলেন। কিছুটা সময় নিয়ে এ প্রশ্নটা বারবার নিজেকে করুন আর নিজেই উত্তর বের করার চেষ্টা করুন। এটাও ভাবুন, এমন কি কিছু অতীতে ঘটেছে যার জন্য আপনি আজ খারাপ ঘটনার শিকার হলেন। হ রাগের মুহূর্তে নিজেকে হাসানোর চেষ্টা করুন। হ রাগের মুহূর্তে চুপ করে থাকার চেষ্টা করুন। একটা কথা খেয়াল রাখবেন, ‘সাইলেন্স ইজ দ্য বেস্ট অ্যানসার সামটাইমস্’। পরে সুযোগ হলে রাগের বিষয়টিকে নিয়ে আলোচনা করুন। হ জীবনের অন্যান্য অভিব্যক্তির মধ্যে রাগও একটা সাধারণ অভিব্যক্তি, এটা বোঝার চেষ্টা করুন। হ রাগের কোনো ঘটনা ঘটলে, সেই রাগের কারণ নিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন। হ রাগ হলে নিকট কারোর সঙ্গে সেই বিষয়ে আলোচনা করুন। হ রাগের মুহূর্তে রেগে না-গিয়ে, সেই ঘটনা থেকে আপনি কোনও শিক্ষা পেলেন কিনা তা খেয়াল করুন। হ যদি আপনি ক্রমগাত সব ঘটনাতেই রেগে যান, তাহলে পুরনো খারাপ ঘটনাগুলোকে ভুলে গিয়ে বর্তমান ঘটনাগুলোকে বাহবা দেওয়ার চেষ্টা করুন। হ রেগে যাওয়ার মুহূর্তে জীবনের ভালো মুহূর্তের ঘটনাগুলো মনে করার চেষ্টা করুন। হ রেগে যাওয়ার মুহূর্তে নিজের চিন্তাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করুন। হ রেগে গেলে ইচ্ছা না-হলেও নিজের পছন্দের কাজ করলে এন্ডোরফিন হরমোন শরীর থেকে বের হয়, যা মন ভালো করতে সাহায্য করে। হ রাগ হলে শরীরচর্চা করুন। হ রেগে গেলে অ্যালকোহল, ড্রাগ, সিগারেট খাবেন না। তাতে ইরিটেশন আরও বেড়ে যায়। হ এমন কোনও কাজ করুন যাতে আপনি হাসতে পারেন। খোলা আকাশের নীচে হাঁটুন এবং গভীরভাবে নিশ্বাস নিন। হ রেগে গেলে কাগজে আপনার রাগের কারণ এবং অভিব্যক্তি লিখে ফেলুন। ঞ চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকুন। হ কারোর উপর রাগ করে অন্যকে খারাপ কথা বলে ফেলবেন না। যার উপর রাগ হয়েছে তার সঙ্গে বোঝাপড়া করে মিটিয়ে নিন। তাতে একসঙ্গে অনেকগুলো সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না। হ রেগে গেলে শান্ত গলায় কথা বলার চেষ্টা করুন। রেগে গিয়ে চিৎকার করবেন না। হ যদি আপনার সব সময় রেগে যাওয়ার সমস্যা থাকে তাহলে কোনো ডাক্তারের পরামর্শ নিন। না-হলে আপনার আশপাশের লোকদের আপনার ব্যবহার অনবরত খারাপ লাগতে পারে। হ রাগ হলে শূন্য থেকে দশ পর্যন্ত কয়েকবার গুনে নিন। রাগ কোনও সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তাই রেগে না-গিয়ে বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করে বিবেচনা করুন। তাহলে সমস্যার আসল সমাধান করতে পারবেন আর সম্পর্কও একে অন্যের নষ্ট হওয়ার ভয় থাকবে না।

আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন