বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

ইসলামী কর্মতৎপরতা

প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

লন্ডনে ড. হাসান তুরাবির জীবন দর্শন নিয়ে সেমিনার
মুহাম্মদ নূরে আলম বরষণ লন্ডন থেকে : প্রগ্রেসিভ ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট ইউকের উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে সমকালীন ব্রিটিশ বাংলাদেশি মুসলিম স্কলার ও বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মুহম্মদ কামরুল হাসান বলেন, সুদানের বিখ্যাত রাজনীতিবিদ ড. হাসান তুরাবি ছিলেন সমসাময়িক মুসলিম বিশ্বের একজন মেধাবী ও সৃজনশীল চিন্তাবিদ। সুদানের মূল ধারার ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতা, বিশিষ্ট আইনজ্ঞ, বহু ভাষাবিদ ও ইসলামী আন্দোলনের পাওয়ার শেয়ারিং থিউরির জনক।
গতকাল রোববার রাতে লন্ডন মুসলিম সেন্টারের সেমিনার হলে আয়োজিত এক গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারে সদ্য প্রয়াত মুসলিম চিন্তাবিদ ড. হাসান তোরাবির জীবন ও মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র দর্শনের ওপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রগ্রেসিভ ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট ইউকের সম্বনয়কারী সাংবাদিক নূরে আলম বরষণের পরিচালনায় গবেষণা প্রবন্ধের ওপরে আলোচনা করেন, মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার বদরে আলম দিদার, এডভোকেট আব্দুর রউফ রুবেল, দ্যা গোবাল নিউজের সম্পাদক নাজমুল হোসাইন, চ্যানেল এস এর হেড অব চ্যারিটির সাংবাদিক তৌহিদুল করিম মুজাহিদ, সাংবাদিক আমিন রশীদ, মানবাধিকার কর্মী মনিরুল হক, জামিল ভূঁইয়া, আল আমিন, সাইদ মুহম্মদ বাকী, ব্যারিস্টার সাজ্জাদুল ইসলাম প্রমুখ।
অধ্যাপক ড. মুহম্মদ কামরুল হাসান বলেন, মুসলিম বিশ্বের অবিসাংবাদিত নেতা এবং সুদানের বিরোধীদলীয় ‘পপুলার কংগ্রেস পার্টির’ প্রধান হাসান আত-তুরাবি ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের কল্যাণের কথা চিন্তা করে অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করার থিউরি আবিষ্কার করেন। এই থিউরির আলোকে মুসলিম বিশ্বের অনেক ইসলামপন্থি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল দীর্ঘকালের কিছু সুফল ভোগ করে। এক সময় সুদানের সামরিক প্রেসিডেন্ট বশিরের সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ১৯৮৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন বশির। এরপর থেকেই তিনি বশির সরকারের বিরোধিতা শুরু করেন। প্রেসিডেন্ট বশিরের দীর্ঘ শাসনামলে তিনিই ছিলেন তার প্রধান সমালোচক। তিউনিশিয়ার আদলে দেশে একটি রাজনৈতিক বিপ্লবেরও স্বপ্ন দেখেছিলেন এই নেতা। তুরাবি ছিলেন একজন উদারপন্থি মুসলিম চিন্তাবিদ। তিনি ইসলামের অনেক বিষয়েই বিতর্ক এড়িয়ে চলতেন। এবং অনেক কঠোর ইসলামী বিধানের ব্যাপারে উদরতার পরিচয় দেন।
ড. কামরুল হাসান আরও বলেন, তুরাবি মনে করতেন মুসলিম রাষ্ট্রের সরকার প্রধান একজন নারীও হতে পারে। এমনকি অন্য যেকোনো ধর্মের নারী হলেও তিনি এতে কোনো সমস্যা আছে বলে বলে মনে করেন।
তুরাবি নারী অধিকারের ব্যাপারে একজন সোচ্চার মুসলিম নেতা ছিলেন। তিনি একাধারে মুফাসসির, আইনবিদ, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক বিশেষক এবং অসংখ্য বইয়ের লেখক। তার বই পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত।
ড. কামরুল হাসান বলেন, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে প্রেসিডেন্ট বশিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত। দারফুরে গণহত্যার ঘটনায় বশিরকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করেছিল আদালত। ড. তুরাবি ছিলেন সুদানের একমাত্র রাজনৈতিক নেতা যিনি ওই গ্রেফতারি পরোয়ানাকে সমর্থন করেছিলেন। অবশ্য নিজের ওই কর্মকা-ের জন্য তাকে মাসুল দিতে হয়েছে। এ ঘটনার দুদিন পরই ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে তাকে গ্রেফতার করেছিল সরকার।
এক সময়ের বন্ধু সামরিক শাসক বশিরের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর তিনি নিজের দল ‘পপুলার কংগ্রেস পার্টি’ গড়ে তুলেছিলেন। উচ্চশিক্ষিত তুরাবির ইংরেজি, ফারসি, জার্মান ও আরবি ভাষায় সমান দক্ষতা ছিল। ভাষাগত পা-িত্যের কারণেই বিদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলোতে তার কদর ছিল। খার্তুম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই তিনি ব্রাদারহুডের রাজনীতির সাথে জড়িত হন। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি সুদানের এটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি সুদানের ন্যাশনাল এসেম্বলি’র স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন।
সেমিনারে উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, বর্তমান সময়ে প্রয়োজনের আলোকে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ থিউরিগুলোকে সম্বনয় করা অতি জরুরি। ইসলামের নিয়মগুলোকে বর্তমান সময়ের আলোকে ইন্টারপেইট করতে হবে বলে মনে করতেন তুরাবি। পশ্চিমা বিশ্বের হলেই গ্রহণ করা যাবে না এমন ধারণা করা ঠিক বলে মনে করতেন না তুরাবি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন