শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভারতের পরিবেশ সন্ত্রাসের বিচার পাকিস্তান চাইবে

মারা গেছে একটি কাক ও গাছপালা, ‘এই তো বেঁচে আছি, আমাদের দেখে কি জঙ্গি মনে হয়’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে কাশ্মীরের পাকিস্তান সীমান্তের জঙ্গলে বোমা ফেলে ‘গাছ হত্যা’র ঘটনায় জাতিসংঘে ভারতের বিচার চাইবে পাকিস্তান। গাছের ওপর ভারতের এই বিমান হামলাকে ‘পরিবেশ সন্ত্রাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন পাকিস্তানের কর্মকর্তারা। ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে কাশ্মীরের পাকিস্তান অংশে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বাহিনী। হামলায় অন্তত ৩০০ জঙ্গি নিহতের দাবি করলেও এর পক্ষে কোনও প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয় দিল্লি। তবে আল-জাজিরা ও রয়টার্সের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই হামলায় কোনও মানুষ নিহত না হলেও বোমার তীব্রতা ছিল ভয়ানক। এতে ১৫টি পাইন গাছ উপড়ে গেছে। বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট চারটি গর্তও নজরে এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর। এমন পরিস্থিতিতেই শুক্রবার ভারতের বিরুদ্ধে ‘গাছ হত্যা’র বিচার চেয়ে জাতিসংঘের শরণাপন্ন হওয়ার ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মালিক আমিন আসলাম বলেছেন, ভারতীয় যুদ্ধবিমান থেকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। এর ফলে সেখানে পরিবেশের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার খতিয়ান তৈরি করছে ইসলামাবাদ। মালিক আমিন আসলাম বলেন, কাশ্মীরের জঙ্গলে ভারত যা করেছে এটি হচ্ছে পরিবেশ সন্ত্রাসবাদ। বহু পাইন গাছের মৃত্যু হয়েছে। এটি পরিবেশের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি। জাতিসংঘসহ অন্যান্য ফোরামে ভারতের ‘গাছ হত্যা’ তথা পরিবেশের ওপর হামলার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাবে পাকিস্তান। ডনের প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। অপর দিকে, ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর পক্ষ থেকে বালাকোটে হামলায় ৩০০ জন জঙ্গির খবর জানানো হলেও তা সত্য নয় বলে মনে করেন বালাকোটের বাসিন্দারা। বালাকোটের জাবা গ্রামের মানুষের বক্তব্য এমন যে- কিছুই ঘটেনি সেখানে। এই গ্রামের একজন বাসিন্দা আব্দুর রশিদ। তিনি পেশায় ভ্যানচালক। শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘কয়েকটা পাইন গাছ আর একটা কাক মরেছে! আর কিছুই হয়নি। এত জঙ্গি নাকি মরেছে, আর একটাও দেহ পাওয়া গেল না? এমন হয় নাকি!’ বাষট্টি বছরের নুরান শাহ কিন্তু সেদিন ভোরে বোমার আঘাতে সত্যি আহত হন। ডান চোখের উপরে এখনও সেই প্রমাণ স্পষ্ট। কাল নিজেরই বাড়ির দাওয়ায় বসে সংবাদমাধ্যমকে বললেন, ‘ওরা নাকি জঙ্গি মারতে বোমা ফেলেছিল! এই তো আমরা বেঁচে আছি। আমাদের কি জঙ্গি মনে হয়?’ পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদের ২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেনকে মেরে এসেছিল মার্কিন নেভি সিল। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সেই অ্যাবটাবাদ শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের শহর বালাকোট। আর এই শহর লাগোয়া পাহড়ের উপর জঙ্গলে ঘেরা গ্রাম জাবা। সুযোগ পেলেই এখানে বেড়াতে আসেন পাকিস্তানিরা। তবে এখন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই এলাকা দাপিয়ে বেড়[াচ্ছেন দেশ-বিদেশের সাংবাদিকেরা। সবাই ‘প্রমাণ’ খুঁজছেন ভারতের প্রত্যাঘাতের। এই গ্রামটিতে সব মিলিয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ লোকের বাস। ‘সন্দেহজনক’ বলতে এখানে রয়েছে একটা মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসার নাম তালিম-উল-কোরান। নুরানের মতো অনেকে বললেন, এখানে কোনও দিন কোনও জঙ্গি প্রশিক্ষণ হত না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেউ কেউ আবার একেই জইশের জঙ্গি শিবির বললেন। তবে তালিম উল কোরআন মাদ্রাসার দিকে ২০০৪-এ প্রথম আঙুল তুলেছিল উইকিলিকস। তারা দাবি, বালাকোটে জাবা গ্রামের কাছে এই মাদ্রাসা খুলে স্থানীয়দের সব ধরনের জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে জইশ। তবে এখন এখন কী অবস্থা সেই মাদ্রাসার! স্থানীয়দেরই একাংশ বলছেন, ‘স্কুলের সাইনবোর্ডে এত দিন ‘নেতা’ হিসেবে মাসুদ আজহার এবং ‘পরিচালক’ হিসেবে মাসুদের শ্যালক ইউসুফ আজহারের নাম লেখা ছিল।› কাল সেখানে গিয়ে সাংবাদিকরা দেখলেন, সাইনবোর্ড পাল্টে গিয়েছে। আর গোটা স্কুল চত্বর ঘিরে রেখেছে পাক সেনা। ভেতরে প্রবেশ নিষেধ। তবে বাইরে থেকে দেখে, এর গায়ে কোথাও আঁচড়টকুও পড়েছে বলে মনে হয়নি সংবাদমাধ্যমের! ডন, ওয়েবসাইট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন