বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পরনির্ভর নয় অর্থনীতি

চট্টগ্রামে সম্মেলনে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের অভিমত

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

‘বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন পরনির্ভরশীল নয়। দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়ন কর্মকান্ডে ও প্রকল্প বাস্তবায়নে গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগে অনাগ্রহ দেখানো সমীচীন হবে না, তবে যাচাই-বাছাই করেই বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হবে। মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা ও ভোকেশনাল শিক্ষায় অগ্রাধিকার দিয়ে ভিয়েতনাম অর্থনৈতিকভাবে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তারা এখন রফতানি নির্ভর দেশ। আমাদের পরে এসে দেশটি বর্তমানে ২৮২ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় করছে। যেখানে আমাদের রফতানি এখনও ৩৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়নি। তাছাড়া বাংলাদেশের গরীব জনগোষ্ঠির সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সর্বক্ষেত্রে ধনী-গরীরের বৈষম্য কমিয়ে আনতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে’।
গতকাল শনিবার থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিইউসি) মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের ৪র্থ দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদগণ উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। এ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- ‘বৃহত্তর চট্টগ্রামের উন্নয়ন সমস্যা সঙ্কট এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন’। সম্মেলনে অর্থনীতিবদগণ আরও বলেন, চারটি ‘জ’-এর উপর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করছে। তা হলো- জল, জঙ্গল, জনসাধারণ ও জমি। এগুলোর সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদের উন্নয়ন না হলে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজিসি অধ্যাপক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি। সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হলে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যেতো। কিন্তু সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে আমরা আন্তঃদেশিয় ভূ-রাজনীতির শিকার হয়েছি। তারপরেও চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে এখনও হল্যান্ড, আবুধাবী, মালয়েশিয়া বিনিয়োগে আগ্রহী।
বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ঋণ আর উপকার বয়ে আনবে না উল্লেখ করে ড. মইনুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকেই ক্ষুদ্র ঋণের উৎপত্তি হয়েছিল। কিছু মানুষ ক্ষুদ্র ঋণের উপকার ভোগ করলেও এ ব্যবস্থা এখন সামাজিক উন্নয়ন বাদ দিয়ে ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে। এতে বর্তমানে মানুষ ঋণের যাঁতাকলে বন্দী হয়ে পড়ছে। সূদুর অতীতে আমাদের দেশে ‘ঋণ সালিশী বোর্ড’ ছিল। এখন ক্ষুদ্র ঋণের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে আগামীতে ক্ষুদ্র ঋণের সমস্যা সমাধান করতে হয়তো সেই ‘ঋণ সালিশী বোর্ড’ আবারও ফিরিয়ে আনতে হতে পারে।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি বলেন, দুর্নীতিমুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের পূর্বশর্ত। এরজন্য অর্থনীতির ছাত্র-শিক্ষক, বিশেষজ্ঞদের সাথে অন্যান্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। তবে সংশ্লিষ্ট সকলের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সমালোচনা করতে হবে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সততা ও স্বচ্ছতা শতভাগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমাদের দেশের জিডিপির হার বর্তমানে ৭ শতাংশেরও ঊর্ধ্বে। একে দ্বিগুণ করতে হবে। ভূমিমন্ত্রী বলেন, কর্ণফুলী চট্টগ্রামের প্রাণ এবং জাতীয় অর্থনীতির হৃৎপিন্ড। এর সুরক্ষায় আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমাদের দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী প্রতিটি গ্রাম শহরের সুবিধা পাবে। এর অর্থ গ্রাম কৃষিভূমি হারাবে না, বিকশিত প্রযুক্তির সুবিধা পাবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বিদ্যুতের অভাবনীয় উৎপাদন হয়েছে। যার সুফল সাধারণ মানুষ ইতোমধ্যে ভোগ করছে। আমাদের দেশে দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে। তাই ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের উপর জোর দিতে হবে।
চট্টগ্রামের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে পাঁচ তারকা হোটেল, ইকোনোমিক জোন, ইপিজেডসহ বড় বড় স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। অসংখ্য শিল্প কারখানা স্থাপিত হয়েছে। দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ করছে শেখ হাসিনার সরকার। এর পাশাপাশি চট্টগ্রামে রিজিওনাল টুরিস্ট ইন্ডাস্ট্রিও বিকশিত হতে পারে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইরশাদ কামাল খানের সভাপতিত্বে ও এটিএম কামরুদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক একেএম ইসমাইল। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারাকাত। আরো বক্তব্য রাখেন ড. জামাল উদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম। দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রথম পর্বে অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজিত সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আতাউল করিম চৌধুরী, আমিরুল ইসলাম, জাহিদ সরওয়ার আকন্দ ও জায়েদা রওশন আরা। পরে উপস্থাপিত প্রবন্ধের ওপর বক্তব্য রাখেন অর্থনীতি সমিতির সহ-সভাপতি ড. আবুল হোসাইন, সহ-সভাপতি এ জেড এম সালেহ।
দ্বিতীয় অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্তের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. জামাল উদ্দিন আহমদ, ড. এস এম আবু জাকের, আশিকুর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন অর্থনীতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আলী আশরাফ ও ড. হান্নানা বেগম। শেষ পর্বে আয়োজিত সাধারণ সভায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এতে ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্তকে সভাপতি, এ টি এম কামরুদ্দিন চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন