শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সচল নৌযানের অভাবে অস্তিত্ব সংকটে দেশের একমাত্র অভ্যন্তরীর যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস

নাছিম উল আলম/ | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০১৯, ১১:০৩ পিএম

১৮৮৪ সালে চালু হওয়া ঢাকা-বরিশাল-খুলনা রকেট স্টিমার সার্ভিসটির নিরাপত্তা আর জৌলুশ হারিয়েছে অনেক আগে। রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল সংস্থা বিআইডব্লিউটিসি’র ৬টি যাত্রীবাহী নৌযানের ৫টিই গতকাল অচল ছিল। ৪টি প্যাডেল নৌযানের ১টি পানশালার জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে। অপর দুটি দীর্ঘদিন ধরে বিকলবস্থায় ঢাকা ঘাটে মেরামতে রয়েছে। একমাত্র সচল প্যাডেল নৌযান ‘পিএস মাহসুদ’ রবিবার সকালে বরিশাল বন্দরে পৌছার পরে কারিগরি ত্রুটির কারনে যাত্রা বাতিল করে। ২০১৪ ও ’১৫তে নির্মিত দুটি স্ক্রু-হুইল যাত্রীবাহী নৌযনের একটি যাত্রী পরিবহনে রয়েছে। অপরটি ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃরাস্ট্রীয় নৌযোযোগ ব্যাবস্থায় যোগদেয়ার লক্ষে প্রাক-প্রস্তুতিতে রয়েছে। ‘স্বেতহস্তি’ খ্যাত এসব নৌযান যাত্রী পরিবহনের চেয়ে বসিয়ে রাখলেই সংস্থার লোকশান কমে।
প্রায় আটমাস বসিয়ে রাখার পরে গতমাসের ১৮তারিখে পিএস অস্ট্রিচ জাহাজটি একটি বেসরকারী সংস্থার কাছে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা দেয়া হয়েছে। তবে ইজারাদার নৌযানটি যাত্রী পরিবহনের পরিবর্তে ভাসমান রেস্তোরা ও পানশালা হিসেবেই ব্যাবহার করবে বলে জানা গেছে। এমনকি বানিজ্যিক স্বার্থে ইজারাদার চুক্তি বহির্ভূতভাবে নৌযানটির উপরিকাঠামোরও কিছু পরিবর্তন আনছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অপর প্যাডেল হুইল জাহাজ ‘পিএস টার্ণ ও পিএস লেপচা’ বিগত তিনমাসেরও বেশী সময় ধরে সংস্থাটির ঢাকা ঘাটে মেরামতের নামে রয়েছে। মেরামত শেষে ইতোমধ্যে পিএস টার্ণ একদফা যাত্রী পরিবহনে যোগ দিলেও পথিমধ্যে বিকল হয়ে বিপুল সংখ্যক যাত্রীকে বিড়ম্বনায় ফেলে। পুরনায় নৌযানটির মেরামত শুরু হয়েছে। পিএস লেপচা জাহাজটিও মেরামতের নামে ঢাকায় পড়ে আছে তিনমাস ধরে।
এঅবস্থাতেই পিএস মাহসুদ ও এমভি বাঙালীর সাহায্যে সপ্তাহে ৩ দিন ঢাকা-চাঁদপুর-বরিশাল হয়ে মোড়েলগঞ্জ এবং একদিন খুলনা পর্যন্ত রকেট সার্ভিসটি চলাচল করছিল। কিন্তু গত শণিবার ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে চাঁদপুর হয়ে রবিবার সকালে বরিশালে পৌছার পরে বিকল হয়ে পড়ে পিএস মাহসুদ। নৌযানটির মূল ইঞ্জিনের ‘ব্যাবল গীয়ার’এ সংযূক্ত কুলার ছিদ্র হয়ে গীয়ার অয়েল বেরিয়ে বিপত্তি সৃষ্টি হয়। ফলে অচল নৌযানটির যাত্রা বাতিল করতে হয়েছে। কয়েকশ যাত্রী চরম বিড়ম্বনার শিকার হন।
তবে মাত্র ঘন্টা দুয়েকের চেষ্টায় গতকাল নৌযানটির মেরামত সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা থেকে গীয়ার অয়েল এনে মূল ইঞ্জিন চালু করে গতরাতে মাহসুদ যাত্রী নিয়ে বরিশাল বন্দর ত্যাগ করেছে।
কিন্তু রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠানটির কোন নৌযানই এখন আর যাত্রী পরিবহনের উপযোগী নয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সবগুলো প্যাডেল জাহাজের ছাদের পানি আপার ডেক থেকে শুরু করে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কক্ষে যাত্রীদের ভিজিয়ে দিচ্ছে। শৌচাগর থেকে খাবার ঘর, সবকিছুই ভাঙাচোড়া। বেসরকরী নৌযানের চেয়ে ভাড়া বেশী হলেও এসব নৌযানে এখন আর যাত্রীদের নুন্যতম সুযোগ সুবিধা নেই বলেও অভিযোগ স্পষ্ট।
অথচ সংস্থাটির যাত্রীবাহী সার্ভিস সহ সর্বত্রই জনবলের কোন কমতি নেই। অতিরিক্ত সচিবের মত কর্মকর্তা এ সংস্থার প্রধান নির্বাহী। যুগ্ম সচিব পদ মর্জাদার কর্মকর্তাগন পরিচালকের দায়িত্বে আছেন। এছাড়া বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তাÑকর্মচারী সংস্থাটির প্রতিটি বানিজিক স্তরে রয়েছেন। কিন্তু নুন্যতম যাত্রী সেবাও এখন আর অবশিষ্ট নেই এ সংস্থার নৌযানে।
অথচ কথিত মেরামত ও রক্ষরাবেক্ষনের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যায় হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ‘এমভি বাঙালী ও এমভি মধুমতি’ নামের দুটি নৌযানে জ্বালানী ব্যায় প্যাডেল জাহাজগুলোর প্রায় আড়াইগুন হলেও তা যাত্রী বান্ধব নয়। ফলে জনগনের বিপুল করের টাকায় সংগ্রহ করা নৌযান দুটি এখন সংস্থার গলার কাটা হয়ে উঠেছে। তবে এর পরেও এসব ব্যায়বহুল নৌযান পরিচালনেই সংস্থার নীতি নির্ধারক মহলে আগ্রহ বেশী। ২০১৫ থেকে ১৮ সালের শেষ ভাগ পর্যন্ত ঐ দুটি নৌযানে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা লোকশান গুনতে হয়েছে সংস্থটিকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছু একাধীক দায়িত্বশীল মহলের মতে পুরনো ৪টি পাডেল জাহাজ পরিপূর্ণ পূণর্বাশন করা হলে তা আরো অন্তত কুড়ি বছর দেশের অভ্যন্তরিন নৌপথে নির্বিঘ্নে যাত্রী পরিবহন করতে পারত। ১৯৯৫সালে পূণর্বাশনের পরে ৪টি পাডেল জাহজের ইঞ্জিনের পরিপূর্ণ কোন মেরামতও হয়নি। এসব বিষয়য়ে গতকাল সংস্থার পরিচালক-কারিগরির সাথে সেল ফোনে আালাপ করার চেষ্টা করা লে তিন মিটিং-এ ব্যস্ত থাকায় তা সম্ভব হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন