ইউনাইটেড স্টেট অব আমেরিকায়, যে সকল ক্যান্সার হয় তার মধ্যে ৬ষ্ঠ তম ক্যান্সার হলো মুখ,গলা ও মাথার। প্রতি বছর প্রায় ৪০,০০০ ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়, যা কিনা মুখ,গলা ও মাথার ক্যান্সার। ক্যান্সারের স্ক্রিনিং পরীক্ষা বা ক্যান্সার আছে কিনা তা নির্ণয় করার পরীক্ষা খুব সহজে এবং তাড়াতাড়ি করা যায় এবং এতে একেবারেই ব্যাথা পাওয়া যায় না। এটা করতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে। এখানে মুখে আলো ফেলে মুখের ভিতরের অংশ, চোয়াল, লসিকা গ্রন্থি, জিহ্বা, টনসিল, তালু ইত্যাদি দেখা যায়। থাইরয়েড গ্রন্থি এবং গলার অন্যান্য গ্রন্থিসমূহ হাত দিয়ে অনুভব করা যায়। এতে যদি কোন ধরনের অস্বাভাবিকতা দেখা যায় যেমন: গলার কণ্ঠ পরিবর্তন হয়ে গেলে, গলায় কোন ধরনের গোটা পাওয়া গেলে এবং এসব পরিবর্তনের মেয়াদ ২ সপ্তাহের বেশী হলে, তখন আরো পরীক্ষা করা হয়। এই সমস্ত অস্বাভাবিকতা গুলো নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করানো ভাল।
ধূমপান, তামাক পাতা ও অ্যালকোহল পান মুখ, গলা ও মাথার ক্যান্সারের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ । এসব উপাদান ব্যবহারে ফলে জিহ্বা, মুখ, গলা, খাদ্যনালী ও কণ্ঠনালীতে ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
শতকরা ৮৫ ভাগ ক্যান্সার হয় তামাক পাতা ব্যবহারের জন্যে। শুধু তামাক পাতা বা অ্যালকোহল পান করার চেয়ে, তামাক পাতা এবং অ্যালকোহল একসাথে ব্যবহার করা ক্যান্সারের জন্য বেশী ঝুঁকিপূর্ণ। আগে যারা কমবয়সী এবং ধূমপান করতো না তাদের মুখ এবং গলার ক্যান্সার হতো এক ধরনের ভাইরাস দিয়ে যা নাম হলো “ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস”। এখন শতকরা ২৫ভাগ বা প্রতি বছর ১০,০০০ ক্যান্সার হয়, এই হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের মত এক প্রজাতি থেকে। ডাক্তার এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ক্যান্সারের প্রকোপ এভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো ওরাল সেক্সের মাধ্যমে যৌন অভিজ্ঞতা। থাইরয়েডের ক্যান্সার যে কারও হতে পারে, যদিও কখনও কখনও বংশগত কারণে ক্যান্সার হতে পারে বা রেডিয়েশনের কারণেও ক্যান্সার হতে পারে। লসিকা গ্রন্থির ক্যান্সার কোন কারণ ছাড়াও হতে পারে।
মুখ, মাথা ও গলার ক্যান্সারের সতর্কীকরন চিহ্নসমূহ :
আমাদের মুখের ভিতরের আবরন সাধারণত: যেমন দেখা যায় বা অনুভব করা যায়, মুখ, মাথা ও গলার ক্যান্সার হলে এ অবস্থার এক বা একাধিক পরিবর্তন হয়।
যে সকল চিহ্ন এবং উপসর্গ দেখা যায় তা হলো :
মুখে ঘা হওয়া, যা সহজে ভাল হয় না এবং বাড়তে থাকে।
সবসময় মুখে ব্যথা হওয়া।
কোন চাকা অথবা সাদা, লাল বা গাঢ় রংয়ের আবরন সমূহ মুখে পাওয়া যেতে পারে।
গাল শক্ত হয়ে যায়।
জিহ্বা নাড়াতে অথবা পানি খেতে এবং ঢোক গিলতে কষ্ট হয়।
চোয়াল নাড়াতে ব্যথা হওয়া। চোয়াল ফুলে যেতে পারে।
গলায় ব্যথা হতে পারে বা গলায় কিছু আটকে আছে এমন মনে হতে পারে।
দাঁতে ব্যথা বা দাঁত পড়ে যেতে পারে।
জিহ্বা অথবা মুখের ভিতরে যে কোন জায়গা অবশ হয়ে যেতে পারে।
গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।
গলায় কোন চাকা হওয়া।
বেশির ভাগ ক্যান্সার ঠোঁটে, জিহ্বাতে অথবা মুখের ভিতরে হয়। এই ক্যান্সার মুখের ভিতরে, তালুতে, খাদ্যনালীতে, দাঁতের মাড়ি অথবা দাঁতের গোড়ায়, টনসিল অথবা কণ্ঠনালীতেও হতে পারে । (সূত্র: অ্যামেরিকান একাডেমি অব অটোল্যারিংগোলজি - হেড এন্ড নেক সার্জারী ফাউন্ডেশন)।
বাংলাদেশের প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ ক্যান্সার রোগী আসে, মাথা ও গলার ক্যান্সার নিয়ে এবং এদের মধ্যে বেশীর ভাগ রোগী হাসপাতালে আসে রোগের শেষ পর্যায়ে। প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং যথাযথ চিকিৎসায় অনেক ধরনের ক্যান্সার একদম ভাল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই জনগনের সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে এই রোগের প্রকোপ কমানো যেতে পারে। সকল মিডিয়া, সংগঠন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত চেক আপ এবং নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ দ্বারা নিয়মিত স্ক্রিনিং করা দরকার। বয়স্ক মানুষের জন্য অথবা যাদের এই রোগের লক্ষণ আছে তাদের নিয়মিত চেক আপ করা খুবই দরকার। এই রোগ চিকিৎসায় - রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি এবং অপারেশন আমাদের দেশের সব বড় বড় হাসপাতাল সমূহে নিয়মিত করা হচ্ছে।
অধ্যাপক ডাঃ এম আলমগীর চৌধুরী
নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন
বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি বিভাগ
আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,
রোড ৮, ধানমন্ডি, ঢাকা, ০১৯১৯ ২২২ ১৮২
ই-মেইলঃ alamgir.chowdhury07@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন