শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

কোড নেম এইট-পাস চার্লি!

মোহাম্মদ শাহ আলম | প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০১৯, ৩:৫৯ পিএম | আপডেট : ১০:২০ পিএম, ৮ মার্চ, ২০১৯

বি-৫৭ ক্যানবেরা বোমারু বিমান


পাকিস্তান আর ভারতের মধ্যে বর্তমান যুদ্ধাবস্থা এক নতুন মাত্রা পায় ২৭ ফেব্রুয়ারি ডগ ফাইটে ভারতের দুটি যুদ্ধ বিমান পাকিস্তানি পাইলটদের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হলে। আইএএফের ফাইটার পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান তার মিগ-২১ বিধ্বস্ত হবার পর বন্দি হন পাকিস্তানে। তার প্রত্যর্পণ নিয়ে যে নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা স্তিমিত হয়ে যায়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হন। ভারতসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম প্রচার করে অভিনন্দন বর্তমানের এই প্রত্যর্পণই আপাতত দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশংকাকে রহিত করেছে বা কমিয়ে দিয়েছে।
একদিকে ভুল কারণে হলেও উইং কমান্ডার অভিনন্দন ভারতে বীরের মর্যাদা পেয়েছেন। কিন্তু দুই বিমান ভূপাতিত করে যারা এই ঘটনায় খ্যাতি পেতে পারতেন তাদের নাম তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
অবশেষে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি দেশটির জাতীয় সংসদে তাদের পরিচয় প্রকাশ করেন। বুধবার পার্লামেন্টকে তিনি জানান, স্কোয়াড্রন লিডার হাসান সিদ্দিকি এবং উইং কমান্ডার নুমান আলী খান বিমান দুটি ভূপাতিত করেন। পাকিস্তানি বৈমানিকদের দক্ষতা অবশ্য ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময়ই ব্যাপকভাবে প্রচার পেয়েছিল। সে সময় বিশেষ খ্যাতি পেয়েছিলেন মোহাম্মদ মাহমুদ আলম (এমএম আলম)। মাত্র ১১ দিনে তিনি ৯টি (সম্ভাব্য আরও দুটি) ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে ‘ফ্লাইং এইস’ এবং ‘লিভিং ঈগল’ উপাধি লাভ করেন। এর মধ্যে ৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৫তে এক মিনিটেরও কম সময়ে তিনি তার এফ-৮৬ বিমান দিয়ে ৫টি ভারতীয় হকার হান্টারকে ঘায়েল করে রেকর্ড সৃষ্টি করেন, প্রথম চারটি ঘায়েল হয় মাত্র আধা মিনিটে; এই সাফল্যের কারণে তাকে ‘এইস ইন আ ডে’ও বলা হয়। তার পৈত্রিক ভিটা বিহারের পাটনাতে হলেও আলমের জন্ম কিন্তু কোলকাতায় ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তার পরিবার ঢাকা চলে আসে পড়াশোনা এবং বিমান বাহিনীতে যোগ দেন এখান থেকেই। পারিবারিক ভাষা উর্দু হলেও তিনি বাংলায় কথা বলতে পারতেন।
আরেক ফ্লাইং এইস/লিভিং ঈগল হলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট (তৎকালীন) সাইফুল আজম। তিনি বিশ্বের একমাত্র বৈমানিক যিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ ছাড়াও অন্য চার দেশের (জর্ডান, সিরিয়া, ইরাক এবং মিশর) বিমান বাহিনীতে যুদ্ধ বিমান চালিয়েছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান যোগাযোগ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। একটি ভারতীয় ন্যাট বিমান ঘায়েল করে ৬৫’র পাক-ভারত যুদ্ধে তার কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি সিতারা-ই-জুরাত পদক পেয়েছিলেন। জর্ডান বিমান বাহিনীর হয়ে চারটি ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করা আজমের প্রধান সাফল্য হল। একক বৈমানিক হিসেবে এতোগুলো ইসরায়েলি বিমান এখন পর্যন্ত আর কেউই ঘায়েল করতে পারেনি। ২০০০ সালে মার্কিন বিমান বাহিনী তাকে ‘বিশ্বের ২২ লিভিং ঈগলের একজন’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
পাকিস্তান বিমান বাহিনী তথা বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় এবং দুঃসাহসী বৈমানিকের নামটি কিন্তু জানা যায়নি। তার ভারতীয় প্রতিপক্ষরা তাকে সাংকেতিক নাম দিয়েছিল ‘এইট-পাস চার্লি’ (8-pass Charlie) । তার ব্যতিক্রমী ম্যান্যুভার বা কৌশলের জন্যই তার এই নাম। ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৫ রাত ১০টায় চাঁদ ওঠার আধ ঘণ্টা পর এই বৈমানিক তার বি-৫৭ ক্যানবেরা বোমারু বিমান নিয়ে ভারতীয় পাঞ্জাবের আদমপুর বিমান ঘাঁটিতে তার মিশন পরিচালনা করেন। তার পেলোড ছিল ৪০০০ পাউন্ডের আটটি বোমা। চাইলে তিনি একবারেই সব বোমা ফেলে নিরাপদে ফিরে যেতে পারতেন তা না করে তিনি প্রতি ১৫ মিনিটে ফিরে এসে একটি করে বোমা ফেলে ৮ বারে তার মিশন শেষ করে ঘাঁটিতে ফিরে যান। তার প্রতিটি আক্রমণ ছিল নিখুঁত এবং সফল। প্রথম আক্রমণেই অপারেশনাল রেডিনেস প্ল্যাটফর্মে (ওপিআর) উড্ডয়নে প্রস্তুত একটি মিগ-২১ বিমান ধ্বংস হয়। প্রতিবার বোমা ফেলার সময় বিমানটিকে ডাইভ দিয়ে অ্যাক অ্যাকের (বিমান বিধ্বংসী কামান) আওতার নিচে নিয়ে আসা হয় আবার বোমা ফেলার পর দ্রুত আওতার ওপরে উঠিয়ে নেয়া হয়।
সেদিনের মিশন শেষ হয়, যুদ্ধও শেষ হয় কিন্তু এইট-পাস চার্লির পরিচয় আর জানা যায়নি, পাকিস্তানও প্রকাশ করেনি তার নাম। এ নিয়ে অনেক গবেষণা হলেও আজ পর্যন্ত জানা যায়নি তার নাম। অনেকের ধারণা স্কোয়াড্রন লিডার নাজিব খানই এইট-পাস চার্লি; তবে তিনি নিজেই তা অস্বীকার করেছেন। অনেকের গবেষণায় এম এম আলম আর সাইফুল আজমের নামও এসেছে; তবে সেগুলোও ধারণা। ৬৫’র যুদ্ধের পর দুই প্রজন্ম চলে গেছে এর মধ্যেও এই রহস্যের কিনারা হয়নি, তাই মনে হয় বিমানযুদ্ধের ইতিহাসে এই কিংবদন্তী সাংকেতিক নাম এইট-পাস চার্লি হয়েই লিপিবদ্ধ থাকবে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন