শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

কিডনি রোগের প্রশমনে সচেতনতাই একমাত্র উপায়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৯, ৬:০৪ পিএম

কিডনি রোগের ব্যাপক প্রকোপ, এ রোগের মারাত্মক পরিণতি, অতিরিক্ত চিকিৎসার খরচ এবং সিংহভাগ কিডনি বিকল রোগীদের অর্থাভাবে প্রায় বিনা চিকিৎসায় করুণ মৃত্যু চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে সবার জন্য কিডনি স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সরকারী/বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিংবা প্রতিষ্ঠান গুলোর সমন্বিত ও পরিকল্পিত প্রয়াসের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসা করে নয় বরং প্রতিরোধেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব প্রশমন করতে হবে। এ জন্য সচেতনতাই একমাত্র উপায়।

শনিবার (৯ মার্চ) সেচ্ছাসেবী সংগঠন ক্যাম্পাস আয়োজিত এক গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। বক্তরা বলেন, ধনি-গরীব কিংবা সুবিধা বঞ্চিত শ্রেণী নির্বিশেষে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার সর্বস্তরের কিডনি রোগীদের চিকিৎসা প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করনের অঙ্গিকার এবং বাস্তবায়নের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে।

‘বিশ্ব কিডনি দিবস ২০১৯’ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে দেশের শীর্ষস্থানীয় কিডনি বিষয়ক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইট (ক্যাম্পাস), শনিবার (৯ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

বৈঠকে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি প্রফেসর ডা. হারুন অর রশিদ, বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশনের সভাপতি প্রফেসর ডা. রফিকুল আলম, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. সাইফুল্লাহিল আজম, সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিন্সিপাল মেজর জেনারেল প্রফেসর ডা. এইচ আর হারুন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং মডেল মো. নিরব হোসেন প্রমুখ।

 

ক্যাম্পসের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি প্রফেসর ডা. এম এ সামাদ এ গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালন করেন এবং তিনি কিডনি রোগ এর প্রতিরোধ, প্রতিকার এবং কিডনি রোগ চিকিৎসায় সবার জন্য সমান সুযোগ এ বিষয়ের উপায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

প্রফেসর ডা. হারুন উর রশিদ বলেন, উন্নত দেশে মোট কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের ২০-২৫ ভাগ নিকট আত্মীয়দের মধ্য থেকে হয়। অথচ বাংলাদেশে শত ভাগ নিকট আত্মীয়দের মধ্য থেকে ডোনার হওয়ার আইন রয়েছে যা পরিবর্তন হওয়া দরকার। দুর্ঘটনায় বা অকালে এবং রোগ-শোকে মৃত্যু বরণ কারীদের কিডনি গুলো সংগ্রহ করে কিডনি বিকল রোগীদের সংযোজন করে দিতে পারলে কিডনি চিকিৎসায় অনেক অগ্রগতি হবে। এখন বছরে ২০০ থেকে ২৫০ ট্রান্সপ্লান্ট হয় অথচো মৃত ব্যাক্তিদের কিডনি সংগ্রহকরে তা জিবীত রোগীদের সংযোজন করলে ১৫শ’ থেকে ২ হাজার ট্রান্সেসপ্লান্ট করা সম্ভব।

প্রফেসর ডা. রফিকুল আলম বলেন, ক্যাম্পস কিডনি রোগ প্রতিরোধে নিরলস কাজ করে দেশে ও বিদেশে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। বিশে^ ৮৫০ মিলিয়ন লোক কিডনি রোগী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এর লাইন আপে বাংলাদেশ কিডনি রোগীর প্রাদূর্ভাবে ১১৩ তম পর্যায়ে রয়েছে। কিডনি সমস্যা আজ দেশে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব রাখছে। এর পেছনে এ্যাকসেস টু ট্রিটমেন্ট বড় কারণ। তিনি বলেন, সরকার এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে আন্তরিক কারণ ইতিমধ্যে মন্ত্রনালয়ে নির্দেশনা আছে প্রত্যেকটি সরকারী হাসপাতালে কিডনি বেড স্থাপন করার।

ডা. এম এ সামাদ তার মূল প্রবন্ধে বলেন, পৃথিবী ব্যাপি কিডনি রোগের প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত ব্যাপক। বাংলাদেশে ২ কোটিরও অধিক লোক কোন না কোন কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনি বিকলের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয় বহুল বিধায় এদেশের শতকরা ১০ জন রোগী এ চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারে না। অর্থাভাবে চিকিৎসাহীন থেকে অকালে প্রাণ হারান সিংহভাগ রোগী। পক্ষান্তরে, একটু সচেতন হলে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগের উপস্থিতি ও এর কারণ শনাক্ত করে তার চিকিৎসা করা। তিনি সুস্থ্য জীবনধারা চর্চার উপর বেশী গুরুত্বদেন। নিয়মিত ব্যায়াম করা, ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা, ধুমপান না করা, পরিমিত সুসম খাবার, কাঁচা লবণ পরিহার করার তাগিদ দেন।

তিনি কিডনি রোগের প্রধান কারণ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল বলে উল্লেখ করেন। এ জন্য তিনি গরীব রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ওষুুধ প্রদানের দাবি জানান সরকারে কাছে। একই সঙ্গে সবাইকে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনার আহবান জানান।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন