বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকাস্থ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে খেলনা পিস্তল ও বোমাসদৃশ বস্তু নিয়ে বিমানে উঠে এক যুবক বিমান ছিনাতাইয়ের চেষ্টা করে। এতে বিমানবন্দরটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন ওঠে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তখন ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এ ঘটনায় পাঁচ নিরাপত্তাকর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত এবং একজনকে প্রত্যাহার করা হয়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ঘোষণা করে, শাহজালাল বিমানবন্দরের আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক টার্মিনালের নিরাপত্তাব্যবস্থা অত্যন্ত সুসংহত, নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য। গত মঙ্গলবার নিরাপদ সড়ক চাই-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন তার বৈধ অস্ত্র নিয়ে একই বিমানবন্দর দিয়ে যাওয়ার সময় স্ক্যানার মেশিনে তার অস্ত্রটি ধরা না পড়ার ঘটনা বেবিচক-এর এ বক্তব্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে। এই বিতর্কের মধ্যেই গত শুক্রবার একই বিমানবন্দরের আভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে এক যাত্রী তার বৈধ অস্ত্র নিয়ে চেকিং পার হয়েছেন। তার সাথে থাকা পিস্তল ও সাত রাউন্ড গুলি বিমানবন্দরের প্রথম চেকিংয়ে ধরা পড়েনি। পরে ঐ যাত্রী নিজ থেকে তার সঙ্গে থাকা অস্ত্র ও গুলির কথা নিরাপত্তাকর্মীদের জানিয়েছেন। বিমানবন্দরে অস্ত্র ও গুলি নিয়ে প্রবেশের সময় স্ক্যানার মেশিন ও নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে ধরা না পড়ার মতো একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। দেশের প্রধানতম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমন ভয়াবহ ঘটনা থেকে এটাই প্রমাণিত হয়, দেশের বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, একটি ঘটনা ঘটার পর বেবিচক-এর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ঠিক আছে, উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করলেও ধারাবাহিকভাবে ঘটনা ঘটে চলেছে।
একটি দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা, সৌন্দর্য ও সুব্যবস্থা থেকে দেশটি সম্পর্কে বিদেশিদের ধারণা জন্মায়। বলা যায়, বিমানবন্দর দেশের মুখ হিসেবে পরিচিত। দুঃখের বিষয়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়টি বহু বছর ধরেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রয়েছে। যাত্রী হয়রানি থেকে শুরু করে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটির মধ্য দিয়ে চলছে। আমাদের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের বিমানবন্দর যেখানে অত্যন্ত নিরাপদ, পরিপাটি এবং সুন্দর ব্যবস্থাপনাসম্পন্ন হওয়া জরুরি, সেখানে দেশি-বিদেশি যাত্রীরা বিরূপ পরিবেশ ও পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। ইতোপুর্বে যুক্তরাজ্য নিরাপত্তার ত্রুটির কারণে তার কার্গো বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করে। যুক্তরাষ্ট্রও এ বিমানবন্দর সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজও করা হয়। এতে যুক্তরাজ্য সন্তুষ্ট হয়ে তার কার্গো বিমান চলাচলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তবে সাম্প্রতিক খেলনা ও আসল অস্ত্র স্ক্যানারে ধরা না পড়ার বিমানবন্দরের নাজুক নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরে। বিমানবন্দর দেশের সবচেয়ে স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এ পথ দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র-হোক সেটা খেলনা বা আসল, তা দূরে থাক, একটি সুঁই বা ছোট্ট নেইল কাটার নিয়েও প্রবেশ নিষিদ্ধ। যাত্রীদের দেহ থেকে শুরু করে তার সঙ্গে থাকা লাগেজ ম্যানুয়ালি ও স্ক্যানার দিয়ে একাধিকবার তল্লাশী করা হয়। বিশ্বের সব বিমানবন্দরেই এ তল্লাশী হয়। অথচ আমাদের দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমনই যে, বারবার একই ধরনের ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো হুশ বা টনক নড়ছে না। ঘটনাগুলো কেবল নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক ও সুসংহত আছে বলে ঘোষণা দেয়। বাস্তবে তাদের এ ঘোষণা বারবার অসার পরিণত হচ্ছে। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তারা যেন অনেক বড় ধরনের ঘটনার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। আগ্নেয়াস্ত্র বহন সংক্রান্ত যে ঘটনাগুলো ইতোমধ্যে ঘটেছে, সেগুলো নিশ্চিতভাবেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রভাব ফেলবে। এ প্রভাব যে সুদূরপ্রসারি তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারছে কিনা, তা আমরা জানি না। বুঝতে পারলে নিশ্চয়ই উপযুক্ত নিরাপত্তার উদ্যোগ নিত। দেশে যখন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসতে শুরু করেছে। বিনিয়োগকারীরা উৎসাহী হয়ে উঠেছে, তখন বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার এমন দুর্বলতা তাদের যেমন শঙ্কায় ফেলবে, তেমনি নিরুৎসাহী করে তুলবে। বারবার এ ধরনের ঘটনার পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা, তা নিয়ে বিশ্লেষকরা সন্দেহ পোষণ করছেন। তা নাহলে বিমানবন্দরের স্ক্যানার মেশিনে কেন আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি ধরা পড়বে না?
বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং ঢেলে সাজানোর কোনো বিকল্প নেই। একটি ঘটনা ঘটবে আর কিছু লোককে সাসপেন্ড করে এ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে। যেসব স্ক্যানার মেশিন রয়েছে সেগুলো সত্যিকার অর্থে কার্যকর ও যুগোপযুগী কিনা, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এসব মেশিন অকেজো কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা স্বল্প সময়ের ব্যাপার। এগুলো যারা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন তাদের সততা ও দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া জরুরী। ইলিয়াস কাঞ্চন ও আরেক ব্যক্তি যদি নিজেদের কাছে বৈধ অস্র আছে এ ঘোষণা না দিতেন এবং তাদের জায়গায় সন্ত্রাসী থাকত, তাহলে কী ভয়াবহ ঘটনা ঘটত, তা কী ভাবা যায়? তাদের এ ঘটনা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কতটা নাজুক তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। বিমানবন্দরে কেউ অস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়বে এবং তা শনাক্ত করা যাবে না, এটা অভাবনীয়। আমরা মনে করি, বিমানবন্দরের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে মুখে বললে হবে না, অনতিবিলম্বে কার্যকর করে দেখাতে হবে। ব্যর্থতা ঢাকতে কোনো ধরনের অজুহাত কাম্য নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন