শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

তাপদাহে দুর্বিষহ সিরাজগঞ্জের জনজীবন বিদ্যুতের লুকোচুরি, গাছের ছায়াতেও স্বস্তি মিলে না

প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সৈয়দ শামীম সিরাজী, সিরাজগঞ্জ থেকে
প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সিরাজগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলার ১১টি থানার জনজীবন। কঠিন রোদ, তাপদাহ আর গরমে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সর্বকালের প্রচ- তাপদাহ ও তীব্র সূর্যতাপের আগুন ঝরা গরমে মানুষের জীবন করে তুলেছে ওষ্ঠাগত। অনেক লোক মৃত্যুবরণসহ অসংখ্য মানুষ হিটস্ট্রোক, ডায়রিয়া পানি স্বল্পতা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয় এ সময়। তিন ভাগ জল আর, এক ভাগ স্থলের নদী মাতৃক বাংলাদেশের স্বাভাবিক গ্রীষ্ম যেন এখন আর নেই। বেশ ক’বছর ধরে হাওয়ার মতো সিরাজগঞ্জের বাতাস যেন উষ্ণ, শুষ্ক, রুদ্ধ ও নির্মম হয়ে গেছে। অনেক গরমে মানুষের শরীর আর ঘামে না। ঘাম শুষে নেয় তীব্র তাপদাহে। এক সময় গ্রাম বাংলার মানুষ যেমন নদীর কুলে বট আর পাকড়ের ছায়ায় স্বস্তির বিশ্রাম নিত। অনেক মিলিয়া বাতাসে দিতো ক্লান্তির ঘুম। সে দিন যেন আর নেই। বর্তমানে গ্রীষ্মের দৃশ্যপট বদল গেছে। ছায়াতেও স্বস্তি মেলে না। পাওয়া যাচ্ছে না শীতল আবাসের ঠা-া হাওয়া। বাতাসে যেন আগুনের ঝাঁঝ মেশানো। বহমান নদীগুলো আর নদী নেই। সব নদনদী শুকিয়ে কাঠ। অনেক নদীর বাঁকে এখন বসতভিটা-বাড়িঘর আর ক্ষেত-খামার। গাড়িঘোড়া আর সাইকেল চলছে দেদারছে। সিরাজগঞ্জ জেলার মানুষ তাবদাহে জব্দ হয়ে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেও পাচ্ছে না সুফলা এক ফোঁটা বৃষ্টির যেন দেখা পাওয়া ভার। সব কিছু মিলিয়ে প্রচ- গরমে অতিষ্ঠ সিরাজগঞ্জবাসীর জনজীবন। দীর্ঘ প্রায় দেড় দুই মাস যাবৎ সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের কোনো রূপ বৃষ্টিপাতের দেখা না পাওয়ায় জেলাবাসী ও দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং লু হাওয়া এটানা খা বিশুদ্ধ পানি সংকটে, নদীনালা, খালবিল শুকিয়ে যাওয়া প্রচ- গরমে গ্রীষ্মকালীন বসানো কলুমনের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষি কাজে শ্রমিক সংকট ও শ্রমের মূল্য বৃদ্ধিধানের দারুণ ফলন হলেও লোকসানে পড়া। উঠেছে ধান কমছে দাম, হতাশ কৃষক মনে নেই হাসি ডায়রিয়া, হিটস্ট্রোক গরমজনিত রোগব্যাধি বৃদ্ধি পাওয়া নানাবিধ সমস্যায় পড়ে এ অঞ্চলের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে গত ৩০ এপ্রিল রায়গঞ্জ উপজেলায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিয়নটির আয়োজনে ঢাকা-বগুড়া মহা সড়কের ভূঁইয়াগাতী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইউনিয়নটির সভাপতি আব্দুর রহমান হাসুর সভাপতিত্বে বক্তারা অনতিবিলম্বে প্রযোজনীয় বিদ্যুৎ বরাদ্দের, লোডশেডিংমুক্ত নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানান। এদিকে খড়ায় পুরছে চলনবিল অঞ্চল। পাশাপাশি লোডশেডিং বাড়াচ্ছে ভোগান্তির মাত্রা। বিদ্যুৎ চাহিদার তিন ভাগের এক ভাগ মেটাতে পারছে না। বিদ্যুৎ বিভাগ দিনরাত মিলে অসংখ্য বার বিদ্যুৎ যাচ্ছে আর থাকছে। চলছে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলা। একটানা খড়া আর লোডশেডিংয়ের কারণে এ অঞ্চলের মানুষসহ প্রাণিকুল বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে। মাঠঘাট ফেটে চৌচির হয়ে পরেছে। পুড়ছে খেতের ফসল। ডোবা নালা, খালবিল, বিন্দু পরিমাণ পানি নেই। চলছে কাট ফাটা রোদ। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় তাপমাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। গত এক সপ্তাহে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচের দিকে নেমেই চলেছে। ফলে অগভীর নলকূপের পানি উঠছে না। সেচ যন্ত্রের মালিকেরা জমিতে পানি দিতে পারছে না। ১৫ থেকে ২০ ফিট নিচে তারা পানির পাম্প বসিয়ে পানি তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। কেউ কেউ সাবমারসিল পদ্ধতিতে জমিতে পানি দিচ্ছে। যে সমস্ত জমির ধান আগাম পেকেছে সে জমির ধান প্রচ- রোদ উপেক্ষা করে কাজ করায় শ্রমিকেরা অসুস্থ হয়ে পরেছে। ফলে শ্রমিকের মূল্যও অস্বাবাভিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রচ- গরমে ডায়রিয়াসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে পরেছে সাধারণ মানুষ। বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে অনেক কৃষক পাটের চাষ করতে পারছে না। আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল ঝড়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা মিল-কারখানার শ্রমিকেরা কাজ করতে পারছে না। এদিকে প্রচ- গরমে কিছুটা স্বস্তি পাবার জন্য গ্রীষ্মকালীন রসালো ফলের কাছে ভিড়তে পারছে না কেউ। পাগলা ঘোরার মতো লাফিয় লাফিয়ে এসব ফলের দাম বাড়ছে। তৃষ্ণার্ত মানুষ বাজারের ডাবের পানি, তরমুজ, বাঙ্গি, শসা আম, লিচু, কিনতে গিয়ে হোচট খাচ্ছে। শহরেতো বটেই গ্রামাঞ্চলের ফলমূলের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঠা-া ৫শ’ লিটার পানি বোতলের দাম ২০/২৫ টাকা হাকা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিক্রেতারা জানায়, প্রচ- গরমে এ সমস্ত রসালো ফল ঠা-া পানির দ্রব্যে এবং ফলমূলের আমদানির তুলনায় মানুষের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বাড়ছে। এদিকে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা এর মতো বিদ্যুৎ বিভাগের লুকোচুরি খেলা চলছে প্রতিনিয়ত। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেও কোনো রূপ সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সবকিছু মিলিয়ে সিরাজগণ জেলাবাসী এক অসহনীয় নিদারুণ জীবনযাপন করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন