শামসুল ইসলাম : ওমরাহ কোটা বণ্টনে কোনো নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে ওমরাহ এজেন্সিগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত কোটা বণ্টনের অভিযোগ উঠেছে। কাউকে দেড়শ’ কাউকে ১৫শ’ কাউকে ১ হাজার কাউকে ৫শ’ ওমরাহ কোটা ইস্যু করা হয়েছে। চলতি বছর জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতিকে ওমরাহ এজেন্সিগুলোর ৫শ’ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে। নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে তবে সরকার চাইলে কোটা হ্রাস বা বৃদ্ধি করতে পারবে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারী ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ জাকের হোছাইন ডি ও নং-১৬.০০০০০০.০০৩.১৮.০০৫.১৪.১৬. ২৪৬ এক চিঠিতে জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি ২০১৬ (১৪৩৭ হিঃ) আরটিক্যাল-২১.২.৩ ধারা উল্লেখ করে হজ এজেন্সি গুলোর অবৈধ কার্যক্রম রোধে প্রত্যেক এজেন্সিকে ওমরাহ কোটা ৫শ’-এর বেশি ভিসা ইস্যু না করার জন্য ঢাকাস্থ সউদী রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানান। ইতিমধ্যে অনেক বৈধ ওমরাহ এজেন্সি’র ৫শ’ কোটার ওমরাহ যাত্রী ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফিরে আসায় তারা নতুন করে অতিরিক্ত কোটা ইস্যুর অনুরোধ জানিয়ে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের কাছে লিখিত আবেদন জানান। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে সউদী আরবে ওমরার নামে মানব পাচারের অপরাধে সউদী সরকার বাংলাদেশের ওমরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। ১০৪টি ওমরাহ এজেন্সির পাঠানো যাত্রীদের মধ্যে ১১ হাজার ৪৮৫ জন ওমরাহ করতে সউদী গিয়ে আর দেশে ফেরত আসেনি। এসব এজেন্সির অভিযোগ তদন্ত করে ৯৫টি এজেন্সিকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬৯টি এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল, জামানত বাজেয়াপ্তসহ জরিমানা করা হয়। শুধু জরিমানা দেওয়া হয় ২৬টি এজেন্সিকে। আর ৯টি এজেন্সির অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নিদের্শে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (হজ-২) মো. শহিদুল্লাহ তালুকদার ২৩টি ওমরাহ এজেন্সির অনুকূলে অতিরিক্ত ওমরাহ কোটা বরাদ্দ দেন। নতুন কোটা বরাদ্দপ্রাপ্ত এজেন্সিগুলো হচ্ছেÑ
মেয়র হজ কাফেলা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (৫০০ জন), ইউরো বেঙ্গল ট্রাভেলস অ্যান্ড টুরিজম (১৫০০ জন), আল-মাহমুদ ট্রাভেলস (১৫০০ জন), বলাকা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (১০০০ জন), ইউনিয়ন ট্রাভেলস লি. (৫০০ জন), মেগপাই ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (১৫০ জন), গালফ ট্রাভেলস (১০০০ জন), পিয়াংকা ট্রের্ডাস অ্যান্ড ট্রাভেলস (প্রা.) লি. (১৫০ জন), হারাম ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (১৫০ জন), এম /এস এস কে এয়ার ইন্টারন্যাশনাল (১৫০ জন), ইস্টার্ন নূর এয়ার (১৫০ জন), জম জম ইন্টারন্যাশনাল (২৫০ জন), এডভ্যান্স ট্রাভেল প্লানার লিঃ (১৫০ জন), এম/এস সানফ্লাওয়ার এয়ার লিংকার্স (১৫০ জন), আলী এয়ার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (২০০ জন), এমকেআর এভিয়েশন সার্ভিসেস (১৫০ জন), মুজদালেফ এভিয়েশন (১০০০ জন), এয়ার ট্রিপ ইন্টারন্যাশনাল লিঃ (২০০ জন), ইনামুন এভিয়েশন লিঃ (৫০০ জন), চ্যালেঞ্জার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিঃ (২৫০ জন), গ্রান্ড মিডিয়া ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (২০০ জন), প্রগতী ট্রাভেলস (২৫০ জন) ও এয়ার মেটকো ইন্টারন্যাশনাল (২০০ জন)।
ওমরাহ এজেন্সিগুলোর অনুকূলে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অতিরিক্ত কোটা বরাদ্দ প্রসঙ্গে গতকাল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আব্দুল জলিল ইনকিলাবকে বলেন, অতিরিক্ত কোটা বরাদ্দের জন্য কয়েকটি ওমরাহ এজেন্সি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন জানিয়েছিল। এসব আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মমন্ত্রী অতিরিক্ত কোটা বরাদ্দ দিয়েছেন। এ বিষয়টি মন্ত্রীর এখতিয়ার। আমি অতিরিক্ত কোটা বরাদ্দের সময়ে সউদী আরবে সফরে ছিলাম। জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতির কথা উল্লেখ করে ধর্ম সচিব আব্দুল জলিল বলেন, নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে সরকার ওমরাহ কোটা হ্রাস বৃদ্ধি করতে পারবে। তিনি বলেন, কোটা বৃদ্ধিতে ভুল হোক আর শুদ্ধ হোক কোটা বৃদ্ধির বিষয়টি ধর্মমন্ত্রীর এখতিয়ার। উনার বাইরে আমি যেতে পারব না। এদিকে, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেছেন, ওমরাহ এজেন্সিগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই অতিরিক্ত কোটা বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়নি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (হজ) মোহাম্মদ জাকের হোছাইনের সাথে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।
ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাসের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সংখ্যায় কোটা বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে। পবিত্র ওমরাহ পালনের নামে মানবপাচারের অভিযোগে লাইসেন্স বাতিলসহ শাস্তিপ্রাপ্ত এজেন্সিসমূহের রিভিউ পর্যালোচনা শেষে ১৯টি এজেন্সির শাস্তি কমানো হয়েছে এবং একটিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
তবে তালিকার শীর্ষে থাকা হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর (হাব) সভাপতি, একাধিক সহ-সভাপতি, মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব এবং সাবেক ও বর্তমান আরও অনেক নেতার এজেন্সিসহ অধিকাংশ শাস্তিপ্রাপ্ত এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল, জামানত বাজেয়াপ্তসহ জরিমানা বহাল রয়েছে। মানবপাচারের অভিযোগ থাকায় দীর্ঘদিন বাংলাদেশের জন্য ওমরাহ ভিসা বন্ধ রাখে সউদী আরব সরকার। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তা আবার উন্মুক্ত করেছে।
বিগত ১৮ নভেম্বর সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ওমরাহর নামে মানবপাচারের অভিযোগে শাস্তিপ্রাপ্ত এজেন্সিগুলোর তালিকা প্রকাশ করেন। সেদিন তিনি জানান, শাস্তিপ্রাপ্ত এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওমরাহ হজ এজেন্সিগুলোর মালিকরা শাস্তি মওকুফের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ে রিভিউ আবেদন করেন। রিভিউ শেষে গত ১৫ মার্চ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (হজ-২) মো. শহীদুল্লাহ তালুকদার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে শাস্তিপ্রাপ্ত ১৯টি এজেন্সির শাস্তি কমিয়ে আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। আর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে অরবিটালস ট্রাভেল এজেন্সি নামে একটি হজ এজেন্সিকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন