(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
এ আয়াত থেকে স্পষ্ট হলো, কারো কাছে কোন পদ বা দায়িত্ব অর্পণ করতে হলে তার যোগ্যতার দিকে খেয়াল করা জরুরি। যোগ্যতার জন্যে শর্ত হলো, প্রথমত দেখতে হবে, সে শক্তিশালী কি না। অর্থাৎ তার বোধ ও দৈহিক অবস্থা এতটা মজবুত কিনা যে, সে নিজ কর্তব্য পালন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দাপ্তরিক কার্যক্রমকে বিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বিন্যস্তভাবে পরিচালনার দক্ষতা রাখে। দ্বিতীয়ত হলো, বিশ্বস্ত হওয়া। কুরআন মাজীদ অন্যত্র দায়িত্বের জন্যে বিশ্বস্ত হওয়াকে যোগ্যতার অংশ সাব্যস্ত করেছে।সুরা নিসায় বর্ণিত রয়েছে, আমানতকে তার যোগ্য ব্যক্তির কাছে সোর্পদ করো। এখানে আমানত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শাসনসংক্রান্ত দায়িত্ব তথা পদমর্যাদা।
এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, মজলিস আমানতদারীর সাথে হওয়া উচিত। উদ্দেশ্য হলো, মজলিসে যে কথা আলোচনা হয় সেটা মজলিসের আমানত। ঠিক এভাবেই সরকারি বিষয়ে যে কোন গোপন কথা, তথ্য বা আইন রয়েছে সেগুলো সব রাষ্ট্রীয় পদের আমানক। আর যে আমানতের খেয়ানত করে তাকে হাদিসে মুনাফিক বলা হয়েছে।এ কারণে খেয়ানতকারী ব্যক্তি দায়িত্বের যোগ্য হতে পারে না।
রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও সম্পদ হলো, আমানত। এই আমানত সোর্পদ করার মূলনীতি ইসলামী শরীয়া স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে। ইসলামী শিক্ষামতে পদ সোর্পদ করার মানদন্ড হলো যোগ্যতা। যার মাঝে যোগ্যতা রয়েছে সে ব্যক্তিই ঐ কাজের জন্যে উপযুক্ত। এজন্যে বিভিন্ন বিভাগে কর্মী নিয়োগ করার সময় অঞ্চলভিত্তিক, সংখ্যালঘু হিসেবে, নারী অথবা মৃত চাকুরীজীবির সন্তানদের জন্যে যে কোটাপ্রথা রয়েছে, তা সুন্নাহর আলোকে তখনই বৈধ হবে, যখন এই গুরুদায়িত্ব আঞ্জাম দেয়ার জন্যে উপযুক্ত যোগ্যতা তাদের মাঝে থাকবে। যোগ্যতাশূন্য অবস্থায় কোটাপ্রথার ব্যবহার জায়েয নেই। হাদিস শরীফে রয়েছে: যখন কাজের দায়িত্ব অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে সোর্পদ করা হয় তখন কেয়ামতের অপেক্ষা করো।
নিম্নে আলোচিত বৈশিষ্ট্যসমূহ সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে বিদ্যমান থাকা জরুরি।উপরক্ত ইসলামী রাষ্ট্রের কর্মকর্তা, দায়িত্বপ্রাপ্তগণ, অফিসার ও কর্মচারীবৃন্দের জন্য বিশেষভাবে জরুরি।
তাকওয়া অর্থ খোদাভীতি ও পরহেযগারী। তাকওয়ার অপরিহার্য দাবি হলো, দায়িত্বকবোধ। অর্থাৎ প্রত্যেক কর্তা ও দায়িত্বশীল ব্যক্তির নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পরিপূর্ণ আঞ্জাম দেয়ার অনুভুতি থাকা। যখন পদের অধিকারীদের মধ্যে তাকওয়া পয়দা হবে, তখন তারা দুনিয়া ও পার্থিব সমুদয় বস্তু থেকে বিমুখ হয়ে কর্তব্য আঞ্জাম দেয়ার মাঝে পরিপূর্ণ সময় ব্যয় করতে ব্যস্ত থাকবে। সরকারি চাকুরিজীবি, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জন্যে যতকঠিন থেকে কঠিনতর আইন করা হোক না কেন, তাকওয়া অর্জন না করা পর্যন্ত তাদের মধ্যে সুচারুরুপে দায়িত্বপালন করার মানসিকতা তৈরি হবে না। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে,সবচেয়ে উত্তম পাথেয় হলো, তাকওয়া। আর হে জ্ঞানীগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর।উমর বিন আবদুল আযীয রহ. অধিকাংশ সময় কাঁদতেন। তার স্ত্রী জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, যখন আমি নিজের বিষয়ে চিন্তা করি, এই উম্মতের ছোট-বড়, সাদা- কালো সকলের বিষয়ে আমি দায়িত্বশীল। দরিদ্র, অসহায়, বন্দী ও হারিয়ে যাওয়া মুসাফিরসহ রাষ্ট্রের অন্য সকলের দায়িত্ব আমার কাঁধে। এটা তো নিশ্চিত যে, আল্লাহ তাদের সকলের বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করবেন। যদি আমি আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) কে উত্তর না দিতে পারি...? এ চিন্তা আমার মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে; ফলে আমি কান্না শুরু করি।
পরিভাষায় ঘুষ বলা হয়: প্রত্যেক এমন বস্তু যা একজন অপরজনকে প্রদান করে, একে সে তার জন্যে হালাল নয় এমন কোন কিছু অর্জনের মাধ্যমে হিসেবে ব্যবহার করে। ইসলামী শরীয়াতে ঘুষ গ্রহণ সম্পূর্ণ হারাম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক ঘুষ প্রদানকারী ও গ্রহণকারীর উপর। পক্ষান্তরে হাদিয়া বা উপঢৌকন বলা হয় : উপঢৌকন হলো ঐ সম্পদ, যা সম্মান করার ভিত্তিতে অন্যকে দেয়া হয় বা অন্যের কাছে পাঠানো হয়। শরীয়াতে উপঢৌকন দেয়া নেয়া বৈধ। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: তোমরা পরস্পরে একে অপরকে হাদিয়া দাও, কেননা তা অন্তরের বিদ্বেষকে দূর করে। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন