(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
নামাজের রূহানী উদ্দেশ ও লক্ষ্য হচ্ছে এই যে, পরম কৌশলী মহান স্রষ্টা, বিশ্বভূবনের প্রতিপালনকারী, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত প্রদানকারী আল্লাহ পাকের অগণিত দয়া ও অনুকম্পার শোকরগুজারী আমরা অন্তর ও ভাষার দ্বারা আদায় করব, যেন দেহ ও প্রাণ এবং চিন্তা ও চেতনার সর্বত্র তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নিজের দৈন্যতা ও শক্তিহীনতার দৃঢ়বিশ্বাস অর্জিত হয়। একই সাথে আল্লাহর মহব্বত দেহ ও মনের প্রতিটি রন্ধে বিকশিত হয়ে উঠে এবং আল্লাহপাকের হাজের-নাজের হওয়ার ধারণা চিরস্থায়ী বিশ্বাসের আকারে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যে আমাদের প্রতিটি ইচ্ছা, আকাঙ্খা, দৈহিক প্রতিক্রিয়া-কলাপের সময় তাঁর সদা সচেতন দৃষ্টি আমাদেরকে প্রত্যক্ষ করছে। যাতে করে অপক্রিয়া-কলাপের লজ্জা ও অনুশোচনা আমাদের মাঝে ফুটে উঠে এবং আমরা তা সার্বিকভাবে পরিহার ও বর্জন করতে যত্মবান হই এবং যাবতীয় অপ-বস্তুুকে পরিহার করে চলি।
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের কিতাবুল ঈমান অধ্যায়ে বর্ণিত আছে, একবার রাসূলুল্লাহ (সা:) সাহাবীদের একটি জমায়াতের মাঝে বসেছিলেন। এমন সময় একজন প্রশ্নকারী ব্যক্তি এসে নামাজের হাকীকত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। তিনি প্রত্যুত্তরে এর হাকীকত বিশ্লেষণ করলেন। আগন্তুক পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এহসান কি? তিনি উত্তর করলেন, ‘তুমি আল্লাহ পাকের এবাদত এমনভাবে আদায় করবে, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। কিন্তুু যদিও তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ না, কিন্তুু তিনি অবশ্যই তোমাকে দেখতে পান।” অনুরূপভাবে একব্যক্তিকে নামাজের আদব শিক্ষা দিতে গিয়ে তিনি বললেন, “নামাজের হালতে কেউ যেন সামনের দিকে থুথু নিক্ষেপ না করে। কেননা, ঐ সময় সে স্বীয় প্রতিপালকের সাথে গোপন পরামর্শে লিপ্ত থাকে। (সহীহ বুখারী : কিতাবুস সালাত; সহীহ মুসলিম : বাবুল মাসজিদ; মুসনাদে আহমাদ : ৪ খ: ২৪ পৃ:)
হযরত ইবনে ওমর (রা:) হতে বর্ণিত আছে যে, এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সা:) এতেকাফের হালতে অবস্থান করছিলেন। তখন লোকজন পৃথক পৃথক তারাবীহের নামাজ পাঠ করছিল। এমন সময় তিনি মাথা মোবারক বের করে বললেন, “হে লোক সকল! নামাজী যখন নামাজ পড়ে তখন স্বীয় প্রতিপালকের সাথে গোপন কথা বলে। তার লক্ষ্য করা উচিৎ কি বস্তু সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে। তোমরা নামাজের হালতে একে অন্যের আওয়াজকে দাবিয়ো না।” (মোসনাদে আহমাদ) এ সকল শিক্ষা হতে অনুমান করা যাবে যে, নামাজের স্বভাব-সম্পন্ন একজন খাঁটি নামাজীর দেহ ও মনের উপর কি রকম মানসিক প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব আপতিত হতে পারে। এমন কি তার আখলাক ও স্বভাবে কি সব গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এজন্য এই লক্ষ্যমাত্রাকে আল-কুরআনে এভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, “এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা কর, কেননা, নামাজ লজ্জাহীনতা ও অনিষ্টকারীতার কথা ও কাজ হতে বিরত রাখে, “এবং অবশ্যই আল্লাহর জিকির সর্বশ্রেষ্ঠ বস্তু।” (সূরা আনকাবুত : রুকু-৫)
এই আয়াতে নামাজের দুটি হেকজমতের কথা বলা হয়েছে। (১) নামাজ অমঙ্গল ও লজ্জাহীনতাসুলভ কাজ হতে বিরত রাখে। বস্তুত: লজ্জাহীনতা ও অমঙ্গলকর কার্যাবলী থেকে বেঁচে থাকার নাম তাজকিয়া এবং পরিচ্ছন্নতা অর্থাৎ নেতিবাচক অবস্থা হতে ইতিবাচক অবস্থায় উত্তরণ যার বিধি-বিধান মানুষের মঞ্জিলে মাকসুদ এবং যথার্থ কামিয়াবীর চাবিকাঠি। তাই আল-কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, “সে কামিয়াবী অর্জন করেছে যে পরিচ্ছন্নতা লাভে ধন্য হয়েছে এবং স্বীয় প্রতিপালকের নাম স্মরণের মাধ্যমে নামাজ আদায় করেছে।” (সূরা আ’লা) এই আয়াতের দ্বারা বুঝা যায় যে, মানুষের কামিয়াবী ও পবিত্রতা অর্জনের সঠিক পন্থা হচ্ছে এই যে, স্বীয় প্রতিপালকের নাম স্মরণ করবে অর্থাৎ নামাজ আদায় করবে। অপর এক আয়াতে এই মর্মটি আরোও সুস্পষ্টরূপে ফুটে উঠেছে। এরশাদ হচ্ছে, “তুমি কেবল তাদেরকেই সতর্ক করতে পার, যারা তাদের প্রতিপালককে না দেখে ভয় করে এবং সালাত কায়েম করে, যে কেউ নিজেকে পরিশোধন করে সেতো পরিশোধন করে নিজের কল্যাণের জন্যই, আল্লাহর নিকটেইতো প্রত্যাবর্তন।” (সূরা ফাত্বির : রুকু-৩) এর দ্বারা বুঝা যায় যে, নামাজ মানুষকে তার চারিত্রিক দুর্বলতা হতে রক্ষা করে, মানসিক অমঙ্গলের হাত হতে রক্ষা করে এবং তার রূহানী উন্নতির পরিমন্ডলকে বিস্তৃত করে তোলে। আল-কুরআনে এরশাদ হচ্ছে, “মানুষকে অতিমাত্রায় অস্থিরচিত্তরূপে সৃষ্টি করা হয়েছে; যখন তাকে বিপদ স্পর্শ করে তখন সে হা-হুতাশ করে, আর যখন তাকে কল্যাণ স্পর্শ করে তখন সে হয় অতি কৃপণ; তবে নামাজ আদায়কারী ব্যতীত যারা স্বীয় নামাজে সর্বদা নিষ্ঠাবান।” (সূরা মায়ারিজ : রুকু-১) এক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই লক্ষ্য করেছেন যে, নামাজ আদায়কারীদের জন্য আল-কুরআন কত সব বরকতের বেশারত প্রদান করেছে। নামাজের এ সকল শুভফল ও বরকত অনুসারে একবার রাসূলুল্লাহ (সা:) একটি উদাহরণের মাধ্যমে সাহাবাদের লক্ষ্য করে বললেন, “যদি কোন লোকের গৃহের সামনে একটি স্বচ্ছ প্রবহমান নদী থাকে, যাতে সে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে তারপর তার দেহে কি কোন ময়লা থাকবে? সাহাবীগণ আরজ করলেন, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এরশাদ হলো, “নামাজও এভাবে গোনাহসমূহ ধুয়ে মুছে লীন করে দেয় যেভাবে পানি ময়লাকে সাফ করে।” (কানজুল উম্মাল : ৪খন্ড, পৃ: ৬৭-৬৮)
একবার একজন বেদুঈন মুসলমান এসে স্বীয় গোনাহ মাফের তদবীর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তখন এই আয়াত নাযিল হয়, “দিনের দুই প্রান্তে ও রাতের প্রথমাংশে নামাজ কায়েম করবে, সৎকর্ম অবশ্যই অসৎকর্ম মিটিয়ে দেয়, যারা উপদেশকে গ্রহণ করে তা তাদের জন্য একটি উপদেশ।” (সূরা হুদ : রুকু-১০) এই বিস্তৃত আলোচনার দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, ধর্ম স্বীয় অনুসারীদের মাঝে কি ধরনের অনুপ্রেরণা পয়দা করতে চায়। এর মূল উৎস নামাজের মাঝেই নিহিত আছে। যা সহীহ আদব ও শর্তাবলীসহ আদায় করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা:) নামাজকে দ্বীনের ইমারতের মূল ভিত্তি হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। মূল ভিত্তি ভেঙ্গে গেলে ইমারত ধ্বসে যাওয়া অবধারিত।
নামাযের আদব ও শর্তাবলীর প্রয়োজনীয়তা :
আমাদের এই বস্তুময় পৃথিবীর কিছু নিয়ম-কানুন আছে, যার পাবন্দী ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমাদের কাজ-কর্মের সঠিক ফলাফল লাভ করা যায়। অনুরূপভাবে মানুষের আভ্যন্তরীণ জগৎ যাকে মাযহাব অন্তরের অবস্থা এবং ইন্দ্রিয়ানুভূতির দর্শন, অথবা মন ও মানসিকতার অবস্থা বলা হয়, এর জন্যও কিছু কানুন এবং কারণসমূহ আছে। যার পাবন্দী ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দিল ও দেমাগ, প্রাণ ও রূহের প্রত্যাশিত কর্মকান্ড সামনে এসে যায় এবং এগুলোর সঠিক ফলও লাভ করা যায়। সাইকোলোজির (মনোবিজ্ঞান) আবিষ্কার ও উন্নতির মাধ্যমে এই বাঁধন বিলকুল খুলে গেছে। মনোবিজ্ঞান বলছে, “আমরা নিজেদের অথবা অন্যদের মাঝে যে প্রকার অনুরাগ, অনুভূতি ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে চাই এবং এগুলোর উপযোগী আকার, আকৃতি এবং পরিবেশ গ্রহণ না করি, তাহলে এগুলো সৃষ্টি করার মূলে মোটেই সার্থকতা পাওয়া যাবে না। আমাদের সাংস্কৃতিক, সামগ্রিক এবং ব্যবহারিক নিয়মনীতিসমূহ ঐ সকল বিধি-বিধান মোতাবেকই সৃষ্টি হয়েছে এবং সে নিয়ম-নীতি অনুসারেই প্রত্যেক প্রকার ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং সামগ্রিক উদ্দেশ্যাবলী পরিপূর্ণতার লক্ষ্যে রুসম ও রেওয়াজ, নিয়ম ও কায়দা সুনির্দিষ্ট আছে। উপাসনালয়, গীর্জা, মঠ ইত্যাদির মাঝে ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্বের বিকাশ ও পবিত্রতা পয়দা করার মাকসুদ নিহিত থাকে। পুজারী এবং কাহিনীকারদের নির্দিষ্ট লেবাস-পোশাক, খাস-রুসুম ও শিষ্টচার, নি:শব্দ-নীরবতা, আদব ও লেহাজ, ঘণ্টার অভিযোগ ধ্বনি, নিয়োগ ও বরখাস্তের নির্দিষ্ট পদ্ধতি প্রয়োজনীয় মনে করা হয়। রাজকীয় ভয়-ভীতি সৃষ্টি করার জন্য শাহী জৌলুশ এবং রাষ্ট্রীয় দরবারগুলোর মাঝে সেনাবাহিনীর পাহারা, শক্ত-সামর্থ্য লাঠি, বর্শাধারী, নকীব ও শাস্ত্রী, অগ্রবর্তীদের নীল বিদ্যুৎময় ঝলমলে পোশাক, উন্মুক্ত তরবারী, দীর্ঘ লম্বা বর্শা, তখত ও তাজ, পতাকা ও কেতন, বিভিন্ন মর্যাদাশীল ব্যক্তিসত্তা, কাড়া-নাকাড়ার শব্দ প্রতি মুহূর্তে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রহরীদের ভীতিপ্রদ ধ্বনি ও শব্দাবলীর প্রয়োজন। কোনও শিক্ষা ও কাজের প্রতি আকর্ষণ পয়দা করার জন্য পরিবেশ ও পরিস্থিতি শান্ত ও নিশ্চুপ থাকা, স্থান ও অধিষ্ঠানের পবিত্রতার যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি, শোর-গোল, শহর ও বাজার হতে দূরে অবস্থান করার আবশ্যকতাও একান্তভাবে প্রত্যাশিত। নব বিবাহের আনন্দানুষ্ঠানের জনা রং, রূপ, রস, গন্ধ এবং হাসি-খুশীর অবতারণা হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। এ সকল প্রাকৃতিক ও আত্মিক পরিমন্ডলের প্রতি লক্ষ্য রেখে ধর্মীয় কার্যাবলীর মাঝেও কতিপয় প্রতিক্রিয়াশীল নীতি ও আদর্শাবলীর প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। নামাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে, অন্তরের নম্রতা ও দৈন্যতা, তওবাহ ও আত্মসমর্পণ, লজ্জা ও শ্লীলতা, আনুগত্য ও বন্দেগী, আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও কিবরিয়াই এবং স্বীয় শক্তিহীনতা ও দুর্বলতাকে প্রকাশ করা, অধিকন্তু দেল ও দেমাগ এবং মন ও প্রাণে পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা ও নির্মলতা পয়দা করা। এ কারণে নামাজের জন্য এমন কিছু নিয়ম-নীতি ও আরকান নির্দিষ্ট করা হয়েছে, যার দ্বারা মানুষের মাঝে এ জাতীয় অনুপ্রেরণাকে উজ্জীবিত করা যায় এবং তা পরিবর্ধিত করা যায়। যেমন নামাজ আদায়কারী একথা মনে করে যে, সে শাহানশাহে আলমের দরবারে দাঁড়িয়েছে, হস্তদ্বয় আবদ্ধ, নজর নিন্মমুখ; সুতরাং তার কাজ-কর্ম, নকল ও হরকতে থাকতে হবে আদব ও শিষ্টাচার। তদুপরি নামাজের স্থান, পরিধেয় বসন ও শরীরও হবে পবিত্র। অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে সে নিজের কামনা-বাসনা পেশ করবে। এই বাহ্যিক যাবতীয় অবস্থার প্রভাব মানুষের আভ্যন্তরীণ অবস্থার উপরও পতিত হয় এবং এরই ফলশ্রুতিতে রূহানী ফয়েজ ও বরকতের সামর্থ্য ও শক্তি পয়দা হয়। মনে করুন, যদি বাহ্যিক পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি সতর্কতা অবলম্বন না করা হয়, তাহলে অন্তরের পরিচ্ছন্নতা ও নির্মলতার ধারণা তার মাঝে কিভাবে প্রতিক্রিয়াশীল হতে পারে? এটাই হচ্ছে সিদ্ধ আইন যা মানুষের প্রত্যেক নিয়মতান্ত্রিকতা ও ইচ্ছা-আকাঙ্খার মাঝে প্রবহমান রয়েছে। অভ্যন্তর প্রতিষ্ঠার জন্য বাহ্যিক দিক প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা একান্ত দরকার।
এই নিয়ম-নীতির নিরিখে একাকী ফরজ নামাজ থেকে জমায়াতের নামাজ, গৃহের নামাজ হতে মসজিদের নামাজ অধিক উত্তম। কেননা, জামায়াতের পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা এবং মসজিদের দৃশাবলী অন্তরের অবস্থাকে সচেতন করে তোলে। একারণেই সকল বড় বড় কাজের মাঝে ঐকমত্য এবং আইনের অভিন্নতার প্রতি খেয়াল রাখা হয়। এই নিয়মতান্ত্রিকতার ভিত্তিতে বিদ্যায়তনগুলোর নিয়ম-শৃঙ্খলা এবং এগুলোর শ্রেণীবিন্যাস, খেলা-ধূলায় উভয়পক্ষের পৃথক রংয়ের পোশাক, সৈন্যদের একই রংয়ের জামা-কাপড় ও একই নিয়ম-মাফিক চলা- ফেরাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। তাছাড়া একই অস্ত্রশস্ত্র, হাতিয়ার এবং শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজন আছে। এতেকরেই এই বাহ্যিক উপকরণাদির প্রভাব জমায়াত বা দলের আভ্যন্তরীণ লক্ষ্যমাত্রার উপরও পতিত হয়। আর এটাও সম্ভব যে, জমায়াতে কতিপয় ব্যক্তি এমন হবেন যারা মূল অবস্থার সাতে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। তাদের মূল অবস্থার প্রভাব অন্যদেরকেও প্রভাবিত করবে। এভাবে একজন হতে দ্বিতীয়জন এবং দ্বিতীয়জন হতে তৃতীয়জন প্রভাবিত হয়ে গোটা জমায়াতের লোকজন প্রভাবিত হয়ে পড়বে। এজন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একজনের হাসি দেখে অপরজন হাসে এবং একজনের কান্নার ফলে অপরজন কাঁদে। বহুলোকের সমাবেশে প্রায়শ:ই সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। সুতরাং এই নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে ইসলাম স্বীয় ইবাদাতের ক্ষেত্রে এসকল সহজাত ও আভ্যন্তরীণ নিয়ম-নীতির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছে। নামাজের আদবসমূহ, শর্তাবলী ও আরকান এরই নামফলক মাত্র।
জিকির, দোয়া ও তাসবীহের দু’টি তরীকা :
একথাটি বার বার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে যে, নামাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে একাগ্রতা ও নিবিষ্টচিত্ততা, আল্লাহর জিকির, হামদ, সানা, স্বীয় গোনাহের জন্য লজ্জা প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা। অনুরূপভাবে অন্যান্য পবিত্র অনুপ্রেরণার উন্মেষও এরই মাঝে নিহিত আছে। এসকল ক্রিয়াকলাপ মূলত: মানুষের অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত। যার জন্য জাহেরী আরকানের প্রয়োজন নেই। এ জন্য ইসলাম স্বীয় এবাদতগুলোকে দু’শ্রেণীতে বিন্যাস করেছে। (১) এমন কিছু কর্মকান্ড যেগুলোকে মানুষ সর্বাবস্থায় কোনরকম বাধ্যবাধকতা ও শর্ত-সাবুদ ছাড়াই আদায় করতে পারে। এগুলোর নাম হচ্ছে, সাধারণ তাসবীহ-তাহলীল এবং আল্লাহর জিকির। যার জন্য না সময় ও কালের বাধ্য-বাধকতা আছে, না স্থান ও মহলের শর্তাবলী আছে, না উঠা-বসার পাবন্দী আছে। এই শ্রেণীর এবাদত প্রতি মুহূর্তে, প্রত্যেক সুরতে আঞ্জাম পেতে পারে। সুতরাং এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করছেন, “তোমরা আল্লাহকে দাঁড়িয়ে, বসে এবং শায়িতাবস্থায় স্মরণ কর।” (সূরা নিসা) রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর ফয়েজ ও সোহবতে সাহাবায়ে কেরামের অবস্থাও ছিল তাই। আল্লাহ পাক তাদের প্রশংসা করে ঘোষণা করেছেন- “যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করেন।” (আলে ইমরান : রুকু-২০) দুনিয়ার কর্মব্যস্ততা এবং বাহ্যিক কাজকারবারও তাদেরকে এই অবশ্য কর্তব্য থেকে গাফেল রাখতে পারেনি। ইরশাদ হচ্ছে, “তারা এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসায়িক কায়কারবার ও ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যস্ততা আল্লাহর স্মরণ হতে গাফেল করতে পারেনি।” (সূরা নূর : রুকু-৫)
(চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন