শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

বিশ্বের বৃহত্তম কারাগার গাজার জীবনযাত্রা

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

ইসরাইলের উপকূলীয় মহাসড়কের দক্ষিণে গাড়ি চালিয়ে সামনে এগোলে আপনার সামনে যে গাজা উপত্যকা আসছে, সে রকম কোনো নিদর্শন দেখতে পাবেন না। ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী সরু একখণ্ড ভূখন্ডে কুড়ি লাখের বেশি লোকের বসবাস। কিন্তু যে কেউ উপত্যকাটি এড়িয়ে ডানদিকে গাড়ি ঘুরিয়ে দিতে পারেন।
উপত্যকাটিতে ভ্রমণে মূলত কূটনীতিক, সহায়তাকর্মী ও সাংবাদিকরা বিধিনিষিধের মুখোমুখি হন। ইসরাইলের সর্বশেষ স্টপিজটি একটি সেবাকেন্দ্র। লোহিতসাগরমুখী পর্যটক ও যাত্রীরা সেখানে ল্যাটেই কফি পান ও ক্রোয়াস্যাং চকোলেট সেবন করেন। মার্কিন টাইপের একটি কফি হাউসে এসব বিক্রি করা হয়। গাড়ির দিকে কয়েক কদম হাঁটলে গাজার অস্তিত্বের কেবল একটি নিদর্শন তাদের চোখে পড়বে। দক্ষিণ আকাশে একটি সাদা গোলকণ্ড রশিতে বাঁধা এই নজরদারি বেলুন দিয়ে ছিটমহলটিতে ইসরাইলি সেনাবাহিনী সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করে।
একমাত্র সড়কটি ধরে নিচের দিকে গেলে সবুজ মাঠগুলো চোখে পড়বে। ইসরাইল থেকে গাজা ভূখণ্ডে ঢোকা ও বের হওয়ার একমাত্র স্থলপথ হচ্ছে এই ইরেজ ক্রসিং। দেখতে অব্যবহৃত বিমানবন্দরের মতো। ভেতরে কেবল একজোড়া কাউন্টার খোলা আছে। পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণকক্ষ পার হলে কংক্রিটের দেয়াল কেটে তৈরি ঘূর্ণিফটক দিয়ে বের হতে হবে। এর পর ৯০০ মিটার দীর্ঘ খাঁচায়-ঢাকা হাঁটাপথ। এটুকু পার হলেই সামনে পড়বে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কারাগারটি।
ইসরাইলিরা এসে ফিলিস্তিনিদের জায়গা দখল করেছেন। উজ্জ্বল সাদা চিহ্নিত নতুন বাঁধানো রাস্তা বালু দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে। কড়া রোদ পড়ে যাতে ফাটল ধরেছে। এর পর গাড়ির বদলে ঢক ঢক করা রিকশা কিংবা দুই চাকার গাধার গাড়িতে উঠতে হবে। গাজা শহরের ২২ বছর বয়সী যুবক খালিদ আল নেইরব এ ভূখণ্ডকে ‘মেধাবীদের সমাধি ক্ষেত্র’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। উপত্যকাটির এমন একটি প্রজন্মের অংশ তিনি, যাদের শিক্ষাজীবনের মৃত্যু ঘটেছে। যারা বেড়ায় ঘেরা একখণ্ড জমিতে একটা জীবন পার করে দিয়েছেন।
যদিও এটা তাদের পূর্বপুরুষদের জীবনের মতো না। যখন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ইসরাইলে কাজ করতেন, কিন্তু একজন ইসরাইলির সঙ্গেও তাদের দেখা হতো না।
ইসরাইলের সঙ্গে গাজার ইতিমধ্যে তিন-তিনটি যুদ্ধ হয়ে গেছে। এতে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে তাদের জীবন। এ ছাড়া গাজার শাসক হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের নিয়মিত লড়াই চলছেই। ফিলিস্তিনের অন্যান্য উপদলের সঙ্গেও ইহুদি রাষ্ট্রটির সংঘাত অহরহ। খালিদ ও তার সমবয়সীরা একটা বড় ধরনের অর্থনৈতিক ধাক্কার মুখোমুখি। সেখানকার ৭০ শতাংশ যুবক বেকার। গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। উপত্যকাটির লোকজনকে বিষাক্ত পানি পান করতে বাধ্য করা হচ্ছে। অনবরত বিদ্যুৎ সংকটে তাদের জীবন দুর্বিষহ।
গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিবেশী মিসরও ভয়াবহ অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। ২৫ মাইল দীর্ঘ এ ভূখণ্ডে কোনো পণ্য প্রবেশ করতে পারছে না। ২০০৫ সালে দখলদারিত্বের কথা স্মরণ করে ইসরাইল জানিয়েছে, নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই গাজা ভূখণ্ড অবরোধ করে রেখেছে দেশটি। কিন্তু জাতিসংঘ এটিকে নাগরিকদের সামষ্টিক শাস্তি হিসেবে উল্লেখ করেছে। এটি এমন একটি জীবন, যাতে প্রতি শুক্রবার তারা সীমান্তবেষ্টনীতে গিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
নিজেদের বাপ-দাদার ভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার দাবিতে গত এক বছর ধরে তারা এ বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিক্ষোভ থেকে অবরোধ শিথিল করার দাবি জানানো হচ্ছে। কিন্তু ইসরাইলি স্নাইপাররা তাজা গুলি তার জবাব দিচ্ছে, যাতে এ পর্যন্ত ১৮০ জনের বেশি নিহত ও ছয় হাজার লোক আহত হয়েছেন।
মানুষ কেন স্বেচ্ছায় সব কিছুর ঝুঁকি নিতে পারছে, খালিদও তা বোঝেন। গাজার অধিকাংশ নাগরিকদের মতো তিনিও একটি শরণার্থী পরিবারে জন্ম নিয়েছেন।
১৯৪৮ সালে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় তাদের পূর্বপুরুষদের নিজেদের বসতবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। কেউ কেউ আগভাগে প্রাণভয়ে পালিয়ে এসেছেন।
কৈশর থেকেই কবিতা লেখায় অভ্যস্ত খালিদ। তিনি র‌্যাপ সংগীত গাইতে পারেন। এখন একটি মাল্টিমিডিয়া কোর্সের ওপর স্নাতক শেষ করেছেন। তিনি গাজার জীবনের অবসাদের শিকার।
গার্ডিয়ানকে সেটিই বললেন। তিনি বলেন, ভেবে দেখুন, কোথাও আপনি নিয়মিত যাচ্ছেন, একই লোকের সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হচ্ছে। কিন্তু আপনি যদি ভ্রমণ করতে চান, তবে পারছেন না, তখন কেমন লাগবে। তবে দফায় দফায় বোমা হামলার মধ্যে খালিদ নিজের পছন্দসই একটা জীবন কাটাতে পারছেন। তিনি তার বন্ধুর অ্যাপার্টমেন্টে ঘুমান। দেরিতে ঘুম থেকে জাগেন। এর পর কোক খেয়ে মিউজিক ভিডিও সম্পাদনায় বসেন। তিনি মূলত একটি বিরল বেতনের চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
যখন তার হাতে নগদ অর্থ আসে, তখন ছোট্ট শহরটির কেন্দ্রে একটি স্টুডিওতে তিনি র‌্যাপ সংগীত রেকর্ড করেন। এ ছাড়া তিনি বাজির খেলা খেলেন। কিন্তু গাজার সব তরুণের মতো নিজের জীবনের ওপর তার তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই। যেখানে ছোট্ট একটি কাজ করতে গেলেও অবরোধের প্রভাব পড়ে। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন