চট্টগ্রাম ব্যুরো : নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাড. কামরুল ইসলাম কওমি মাদরাসা শিক্ষা ও ছাত্রদের সম্পর্কে চরম বিদ্বেষপূর্ণ ও অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ এনে এর তীব্র নিন্দা এবং অবিলম্বে তাদের মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী। সেই সাথে দৈনিক ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমীমা হোসেন কর্তৃক ওয়াজ, তাবলীগ ও আযানবিরোধী বক্তব্যেরও তীব্র নিন্দা এবং বিচার দাবি করেছেন।
তিনি দেশের আলেম সমাজ ও মুসলমানদের প্রতি সকল ইসলামবিদ্বেষীকে সামাজিকভাবে বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল (বুধবার) এক বিবৃতিতে হেফাজত আমীর আল্লামা শফী এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাড. কামরুল ইসলাম কওমি মাদরাসার শিক্ষা ও ছাত্রদের সম্পর্কে অবমাননাকর ও কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তাতে জাতির সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে তারা এ দেশ থেকে মাদরাসা শিক্ষা তথা ইসলামী শিক্ষা ধ্বংস করে সমাজ ও দেশ থেকে ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও চেতনাবোধকে মুছে দিতে চান। দীর্ঘদিন এই দুই জনসহ আরো কয়েকজন মন্ত্রী থেমে থেমে কওমী মাদরাসা শিক্ষা-বিরোধী বক্তব্য দিয়ে ওলামা-মাশায়েখ, মাদরাসা ছাত্র ও তৌহিদী জনতার অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে যাচ্ছেন।
হেফাজত আমীর বলেন, নৌ ও খাদ্যমন্ত্রীর মাদরাসা-বিরোধী বক্তব্যের দু’দিনের মাথায় আরেক মন্ত্রীর স্ত্রী দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমীমা হোসেন কর্তৃক ঢাকার এক মেয়রের উপস্থিতিতে ওয়াজ, তাবলীগ ও আযান বিরোধী বক্তব্যেই প্রমাণিত হয়, তাদের সবার বক্তব্য একই সূত্রে গাঁথা। তারা ঈমান-আক্বীদা ও ইসলামবিরোধী এবং নাস্তিক্যবাদী আদর্শ বিস্তারের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
আল্লামা শফী উল্লেখ করেন, দীর্ঘদিন ধরেই ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে যে, সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসের ধারা বিলোপ, রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি এবং ধর্মহীন শিক্ষানীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মূলত সরকার এদেশে নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। নৌপরিবহন মন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী ও পরিবেশ মন্ত্রীর স্ত্রীসহ আরো কয়েকজন মন্ত্রীর ধারাবাহিক ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আদর্শবিরোধী বক্তব্যের বিরুদ্ধে সরকারের কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় এমন আশংকা আরো জোরালো হয়েছে। হেফাজত আমীর মন্ত্রিসভা থেকে উপরোক্ত দুই মন্ত্রীকে অপসারণ করে ইত্তেফাক সম্পাদকসহ তাদের তিন জনকেই বিচারের কাঠগড়ায় হাজির করানোর জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। তিনি বলেন, অবিলম্বে ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে কঠোর আইন পাস করে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের লাগাম টেনে ধরুন। তিনি বলেন, জনগণের কাছে সরকারকে প্রমাণ করতে হবে, তারা ইসলামী চেতনাবোধ মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত নাস্তিক্যবাদীদের সহযোগী হয়ে কাজ করছে না।
বিবৃতিতে হেফাজত আমীর দেশের আলেম সমাজ, মসজিদের ইমাম-খতীবসহ ইসলামী নেতৃবৃন্দ ও মুসলমানদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, আল্লাহ-রাসূলের (সা.) অবমাননা, মাদরাসা শিক্ষা, ওলামা-মাশায়েখ এবং ইসলামী আদর্শ ও চেতনা বিরোধী বক্তব্য-বিবৃতিদাতাসহ সকল নাস্তিক্যবাদী ও তাদের সহযোগীদের সামাজিকভাবে সম্পূর্ণ বয়কট করা শুরু করুন। তাদের পারিবারিক কোন অনুষ্ঠানে কেউ শরিক হবেন না। কোন আলেম তাদের বিয়ে পড়াবেন না। তাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে কেউ আবদ্ধ হবেন না। কোন আর্থিক লেনদেন, ব্যবসায়িক সম্পর্ক করবেন না। তারা মারা গেলে তাদের জানাযায় কোন আলেম ও সাধারণ মুসলমান শরিক হবেন না। এটা ঈমানের ন্যূনতম চাহিদা। হেফাজত আমীর ধর্ম অবমাননা-বিরোধী কঠোর আইন পাসসহ নাস্তিক্যবাদ ও ইসলামবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে হেফাজতের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের ওলামায়ে কেরাম, মসজিদের খতীব ও ইমামদের প্রতি আহ্বান জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন