শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অনিশ্চিত মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

বাংলাদেশিরা মাথায় গ্রেফতার আতঙ্ক নিয়ে কাজ করছেন

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

মালয়েশিয়ায় প্রায় ৭ লাখ বাংলাদেশী বর্তমানে কর্মরত। প্রতি বছর দেশে বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স আসছে। কিন্তু প্রবাসী কিছু কর্মীর অনৈতিক কর্মকান্ডে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে দেখা দিয়েছে অশনি সঙ্কেত। খুলছে না শ্রমবাজারের দ্বার। হাজার হাজার বাংলাদেশী পালিয়ে থেকে কাজ করে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে নতুন করে বাংলাদেশীদের পাঠানোর প্রক্রিয়া। অথচ দেশটিতে প্রচুর বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা রয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে কাজের জন্য মালয়েশিয়ায় যাওয়া কিছু প্রতারকের কবলে পড়ে বাংলাদেশী অনেকেই অবৈধভাবে পালিয়ে থেকে বিভিন্ন কোম্পানীতে কাজ করছেন। প্রবাসী কর্মী নিয়ন্ত্রণে দেশটির সর্বত্রই চলছে অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপক ধরপাকড়। এতে করে সেখানে কর্মরত বাংলাদেশীরা গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন। মালয়েশিয়ান ম্যানুফ্যাকচারিং এসোসিয়েশনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের অনুমতি দিতে দেশটির মানবসম্পদ বিষয়কমন্ত্রী এম কুলাসেগারানের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন। অন্যথায় তাদের ফ্যাক্টরি অন্য দেশে স্থানান্তর করতে বাধ্য হবেন বলে জানিয়ে দেন। অথচ সেখানে চলছে উল্টো চিত্র।
মালয়েশিয়ার পেনাং থেকে প্রবাসী ব্যবসায়ী হোসেন রিপন জানান, দেশটিতে চলমান অভিযানে গ্রেফতার হচ্ছেন বৈধ বাংলাদেশিরাও। নামবিহীন দালালের মাধ্যমে বৈধ হয়ে অন্যত্র কাজের মধ্যেই গ্রেফতার হয়ে জেলে যেতে হচ্ছে তাদের। দেশটির অভিবাসন বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী যে মালিকের নামে ভিসা করা হয়েছে, সেই মালিকের অধীনেই কাজ করতে হবে। অন্যথায় তাদেরকে অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে। আর অন্যত্র কাজ করা অবস্থায় ধরা পড়লে যেতে হবে জেলে।
দশ রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেটের কর্মকান্ডে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। তারা বাংলাদেশ ছাড়া সোর্স কান্ট্রির অন্যান্য ১২টি দেশ থেকে জনশক্তি আমদানি করছে। কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হলেই দেশটির শ্রমবাজারের দ্বার উন্মুক্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। মালয়েশিয়া থেকে একাধিক সূত্র এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে, মালয়েশিয়ায় বিদেশী কর্মী নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় স্বাধীন কমিটির প্রতিবেদন শিগগিরই মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। সাতটি প্রধান নীতির ওপর ভিত্তি করে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সাতটি বিষয় হচ্ছে, জাতীয় নীতি, নিয়োগ নীতি, কর্মসংস্থান নীতি, প্রত্যাবর্তন নীতি, অনথিভুক্ত কর্মীদের নিয়মিতকরণ, স্থায়ী ও উদ্বাস্তু এবং ন্যায়বিচারের অ্যাক্সেস।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী এম কুলাসেগারান সাংবাদিকদের বলেছেন, বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত স্বাধীন কমিটির (জেকেবিপিপিএ) পরামর্শ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগিরই তা কার্যকরের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। গত ১৪ মার্চ এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মোহাম্মদ জেকেবিপিপিএ’র ১২ সদস্য এবং কমিটির সভাপতি হিসেবে সাবেক আপিল আদালতের এক বিচারককে নিযুক্ত করেছেন।
একই দিনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও বিদেশী কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত গঠিত স্বাধীন কমিটির অন্যতম সদস্য দাতো মোস্তফা বাংলাদেশী জনশক্তি রফতানিকারক ও ইয়াম্বু ট্রেড ইন্টারন্যাাশনালের ওভারসীজ নির্বাহী পরিচালক মো. দেলোওয়ার হোসেনকে বলেছেন, খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া শুরু হবে। মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারান শিগগিরই কর্মী নেয়ার ঘোষণা দিবেন।
গত রোববার বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, মালয়েশিয়া সরকার কোন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে তাদের সিদ্ধান্তের ওপর। সেখানকার মানবসম্পদমন্ত্রী বাংলাদেশী প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদকে আমন্ত্রণ জানালেই কর্মী নিয়োগের দ্বার উন্মুক্ত হবে।
দেশটির অভিবাসন বিভাগের ঘোষণা অনুযায়ী মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের কোনোভাবেই অবস্থান করতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে দেশটির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তারা চলমান অভিযান অব্যাহত রেখেছে। মালয় পুলিশের অভিযানে প্রতিনিয়ত গ্রেফতার হচ্ছে প্রবাসী কর্মীরা। বাংলাদেশী বা অন্যান্য দেশের জনবহুল এলাকাগুলোতে গ্রেফতার অভিযান জোরদার করা হচ্ছে।
কুয়ালালামপুরের পার্শ্ববর্তী সেলাঙ্গরের সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজারে গত ৩ মার্চ চালানো হয় বিশেষ অভিযান। এ অভিযানে আটক হন ১৩ বাংলাদেশিসহ ৭৩ জন অবৈধ বিদেশি। এছাড়া গত ১ মার্চ মালয়েশিয়ার মালাক্কায় অভিযানে ২২ বাংলাদেশিসহ ৩১ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়, চাকরির শর্ত লঙ্ঘন করায় কয়েকজন মালিককেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতা গ্রহণের পর কয়েকগুণ বেশি অর্থ নিয়ে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দেন। নতুন প্রক্রিয়ায় সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সীর মাধ্যমে কর্মী নেয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।
অতি সম্প্রতি প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ায় এক মালয়েশিয়ান তরুণীর মুখে ধারাল ছুরি দিয়ে আঘাত করে বাংলাদেশী যুবক সাইদুল ইসলাম। ধারালো অস্ত্র ব্যবহার ও মালয়েশিয়ান তরুণীকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করায় মালয় আদালত প্রবাসী সাইদুল ইসলামকে ২০ বছরের কারাদন্ড দেয়। এ ঘটনা ছাড়াও বেশ কিছু বাংলাদেশীর অপরাধ কর্মকান্ডে সেখানে অবস্থানরত স্বদেশী শ্রমিকরা চাপে রয়েছে।
কুয়ালালামপুর থেকে ভেস্ট-মাকের্টিং এসডিএন বিএইচডি’র পরিচালক রুহুল আমিন জানান, মালয়েশিয়ায় কতিপয় প্রবাসী বাংলাদেশী নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় দেশের ভাব-মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। গত মাসে এ দুটি ঘটনার সূত্র ধরে আরও কিছু ঘটনার পেছনে বাংলাদেশী নাগরিকদের সম্পৃক্ততা কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য করছে মালয়েশিয়া সরকারকে।
তিনি বলেন, এ ধরনের কর্মকান্ড অব্যাহত থাকলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা কতিপয় সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। এর মধ্যে পিআর প্রাপ্তদের পিআর বাতিলকরণ, বিভিন্ন প্রকারের ভিসা প্রদান বন্ধ, ইমিগ্রেশনে অহরহ বাংলাদেশীদের আটকে দিয়ে দেশে ফেরত এবং অভ্যন্তরে কর্মরত বাংলাদেশীদের ধরপাকড় বাড়ানো হতে পারে। তিনি প্রতারণার শিকার হাজার হাজার অবৈধ বাংলাদেশীরা যাতে বৈধতা পায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন