শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

গোদাগাড়ীতে শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন

সরকারী হয়েছে ৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৯, ৫:৩০ পিএম

গত ১০ বছরে গোদাগাড়ীর শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় সাফল্য এসেছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রজেক্টর বিতরণ, প্রতিষ্ঠান জাতীয় করণ, ভবন নির্মাণ, প্রতিষ্ঠানে মাঠ সংস্কার, শহীদ মিনার নির্মাণ, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ৭১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয়েছে। গত বছর উপজেলা পরিষদের নতুন হল রুমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শিমুল আকতারের সভাপতিত্বে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ ইসহাক উপস্থিত থেকে উপজেলার ৫০ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৮ মাদ্রাসা এবং ৩ কলেজের প্রতিষ্ঠানে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বিতরণ করেন। এতে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। একই বছর ৭১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২টি করে আলমারী দেয়া হয়েছে।

৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি (জাতীয়করণ) হওয়া ছাড়াও আমুল পরিবর্তন ঘটেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে। গত ১০ বছরে গোদাগাড়ীতে প্রাথমিক থেকে স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান সেকায়েপ প্রকল্পের মাধ্যমে গরীব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের উপ-বৃত্তি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, অনার্স কোর্স প্রবর্তন এবং সন্ত্রাস মুক্ত শিক্ষাঙ্গন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এছাড়াও বর্তমান সরকার কোন শিশু যেন প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় তার জন্য প্রত্যেক পরিবারের প্রত্যেক সন্তানের জন্য প্রতিমাসে ১০০ টাকা, একই পরিবারের দুই সন্তান হলে ২০০ টাকা, তিন সন্তান হলে ২৫০ টাকা এবং চার সন্তান হলে ৩০০ টাকা করে প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন। যা শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এছাড়াও শিশুদের মনের বিকাশ এবং শ্রেণী কক্ষকে শিশু বান্ধব করার জন্য উপকরণ সরবরাহ ও শ্রেণী কক্ষ সজ্জিত করণ বাবদ মোট ২ কোটি ১৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। জোট সরকারের সময় শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠু এবং যথাযথ করার জন্য এরূপ কোনও কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি।
বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকারের রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরীর প্রচেষ্টায় গোদাগাড়ী উপজেলায় সেকায়েপ প্রকল্পের মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেকায়েপ প্রকল্পের উক্ত বরাদ্দকৃত অর্থ হতে প্রতি বছর গোদাগাড়ী উপজেলার ৯০টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও কলেজ পর্যায়ের ২০ হাজার ৫৪৬ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৩ কোটি টাকার শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। অপরদিকে, সোকায়েপ ভুক্ত ৫৫টি স্কুলে বিজ্ঞান, গণিত ও ইংরেজী বিষয়ে অতিরিক্ত ক্লাস টিচারের মাধ্যমে কম মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উদ্যোগ নেয়া হয়। এছাড়াও ক্লাস গ্রহণকারী প্রায় ১৫০-১৬০ জন শিক্ষককে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা বেতন হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন গরীব শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছে অন্যদিকে কর্মহীন শিক্ষিত বেকারদের কর্ম সংস্থান হয়েছে।সরকারি হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ৮৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোদাগাড়ী কলেজ, গোদাগাড়ী স্কুল এন্ড কলেজ সরকারী হয়েছে। ফলে শিক্ষার মানও বৃদ্ধি পাচ্ছে । প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরীর নেতৃত্বে এ উপজেলায় বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে শিক্ষায় বড় সাফল্য এসেছে বলে মনে করছেন সেখানকার শিক্ষক সমাজ। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য এলজিইডির মাধ্যমে ১৫টি নতুন ভবন এবং এমপি আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী মহোদয়ের বিশেষ বরাদ্দ টিআর প্রকল্পের মাধ্যমে ১৪টি বিদ্যালয় ভবন নির্মিত হয়েছে। যেখানে ব্যয় হয়েছে ৮ কোটি ৫৭ লক্ষ ২ হাজার ৭৯৭ টাকা। এছাড়াও ২০০৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ৩৫ হাজার ১৫১ জন। এর মধ্যে বালক ১৭ হাজার ৬৫ জন বালিকা ১৮ হাজার ৮৬ জন। ২০১৭ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ১৯৮ জন। এর মধ্যে বালক ২২ হাজার ৬৫১জন এবং বালিকা ২৩ হাজার ৫৯৭ জন। ২০০১ সালের পূর্বে গোদাগাড়ী উপজেলায় শিক্ষার হার ছিলো ৪২.১, বর্তমানে শিক্ষার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮.৩ এ। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার শতভাগ এবং ঝড়ে পরার হার মাত্র ৪.৪৪ ভাগ। জ্ঞান ভিত্তিক তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর (ডিজিটাল) বাংলাদেশ গড়াল লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিক্ষাকে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করে গোদাগাড়ী উপজেলার ৭টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। গোদাগাড়ী উপজেলায় বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। এসব নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষাকে নিশ্চিত করার জন্য প্রতি বছর ২২৫ জন শিক্ষার্থীর প্রতি জনকে ৬০০ টাকা করে শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। নৃ-গোষ্ঠীর সন্তানদের উচ্চ শিক্ষাকে নিশ্চিত করার জন্য এইচ,এস,সি এবং ¯্নাতক পর্যায়েও বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। যার ফলে গোদাগাড়ী উপজেলার নৃ-গোষ্ঠীর সন্তানরা শিক্ষা দীক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে।

উপজেলার ১৬৫টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার প্রদান করা হয়েছে। ৪৬টি বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া প্রদান করা হয়েছে। ল্যাপটপ প্রদান করা হয়েছে ১৯ টি বিদ্যালয়ে। ইন্টারনেট সংযোগের জন্য মডেম প্রদান করা হয়েছে ১১টি বিদ্যালয়ে। ফলে জোট সরকারের এনালগ পদ্ধতির পরিবর্তে শিক্ষা ব্যবস্থায় সংযুক্ত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি। যা বর্তমান প্রজন্মকে শিক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণসহ আগামীতে বর্হিরবিশ্বের সাথে তাল মেলাতে নিজেদের যোগ্য করে তুলতে সাহায্য করবে। বর্তমান সরকারের শিক্ষানীতি সম্প্রসারনের অংশ হিসেবে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ হতে এমপি আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরীর প্রচেষ্টায় গোদাগাড়ী কলেজে সমাজ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স কোর্স প্রবর্তিত হয়। পরবর্তিতে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ হতে হিসাব বিজ্ঞান, মার্কেটিং, বাংলা এবং মনোবিজ্ঞান বিষয়গুলো অনার্স কোর্সের অন্তর্ভূক্ত হয়। ছটি বিষয়ে বর্তমানে ৩০৯ জন শিক্ষার্থী বাড়ির ভাত খেয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পাচ্ছে।বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ জাতীয়করণের অংশ হিসেবে উপজেলার গোদাগাড়ী ডিগ্রী কলেজ ও গোদাগাড়ী স্কুল এ্যন্ড কলেজ সরকারি হয়েছে। এতে শিক্ষার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি গোদাগাড়ী কলেজের ১০৪ জন শিক্ষক-কর্মচারীর জীবনমান উন্নতি হবে। গোদাগাড়ী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাবিয়ার রহমান সাবু বলেন, বর্তমান সরকারের শিক্ষায় উদারিকরণ এবং জাতীয়করণ কার্যক্রম শিক্ষা ব্যবস্থায় গতি এনেছে। শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়ন উন্নত হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী দেয়ার চিন্তাই করেনি। বর্তমান সরকার প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ জন করে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগ দিয়েছেন। এদের প্রত্যেকের জন্য প্রতিমাসে বেতন নির্ধারণ করেছেন ১৫ হাজার ৫৫০ টাকা। ফলে গোদাগাড়ী উপজেলার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬৫ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুর বলেন, সেকায়েপ প্রকল্পের অর্থ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করছে। স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরীর শিক্ষা ক্ষেত্রে গৃহীত বিভিন্ন কর্মকান্ডের প্রশংসা করে বলেন, এ পর্যন্ত দেশে যতগুলো সরকার এসেছে তার মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার সবচেয়ে বেশী শিক্ষা বান্ধব। সরকারের সহযোগিতায় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর নেতৃত্বে গোদাগাড়ীতে শিক্ষা ক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন এই প্রধান শিক্ষক।রাজশাহী-১ আসনের সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছে। আমরা আগামী দিনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শিক্ষাসহ সকল সেক্টরে উন্নয়ন অব্যহত রাখতে চাই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন