বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বেসরকারি বিনিয়োগে গতি বাড়াবে

‘ব্যাংক ঋণে সরল সুদ’ অর্থমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

চক্রবৃদ্ধি সুদে বিপর্যস্তরা আবার ব্যবসায় ফিরবেন

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক মন্দা সত্তে¡ও বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে সাত শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। গত অর্থ বছরে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে এবং চলতি অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এবার বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে এক হাজার ৯০৯ ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য, খাদ্য, শিক্ষাসহ প্রায় সকল খাতে অগ্রগতি অর্জন করেছে। গত ১০ বছর পূর্বের বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেশের মধ্যে অনেক পার্থক্য বিরাজ করছে। অর্থনীতির নানা খাতের অর্জনে বাংলাদেশ চীন-ভারতের সমকক্ষ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। অন্যান্য দেশের উপরে অবস্থান করছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে রূপান্তরিত হয়েছে। বিনিয়োগের জন্যও উত্তম স্থান বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দিনে দিনে শুধু সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অগ্রগতির সকল খাতে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। আর এক্ষেত্রে ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে দেশের অর্থনীতি। আর অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে দেশের বেসরকারি খাত। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের পেছনে এখন পর্যন্ত সিংহভাগ অবদান বেসরকারি খাতের। সামনের দিনেও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাত চালকের আসনে থাকবে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বেসরকারি খাত এগিয়ে না আসলে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়তো। আর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী অর্থ বছরে ব্যাংক ঋণের সরল সুদ হার বাস্তবায়নের কথা বলেছেন। এতে এতোদিন যারা ব্যাংক ঋণে চক্রবৃদ্ধি সুদে বিপর্যস্ত হয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছিলেন তারা আবার ব্যবসায় ফেরার সুযোগ পাবেন। যা দেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং বেসরকারি বিনিয়োগে গতি ফেরাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও দেশের অর্থনীতিবিদরা অর্থনৈতিক খাতকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা ও সুশাসন নিশ্চিত করাকে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন।
যদিও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, ‘যারা এখন বিনিয়োগ করছেন না, তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। আগামী কয়েক বছরে অনেকেই ফিরবেন। যে যেখানেই গিয়ে থাকুক না কেন, তারা ফিরে আসবেই। আমি ফিরিয়ে আনব।’ একই সঙ্গে ‘শুধু দেশের বিনিয়োগকারী নয়, বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদেরও আনা হবে। যারা বিদেশে টাকা-পয়সা নিয়ে গেছে, আমি আশা করি, তাদের ফেরত পাব। ব্যবসায়ীরা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, ‘কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে যদি উন্নতি হয়, তাহলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ অনেক আসবে। উৎপাদন খাতকে বিকশিত করবে। সেবা খাতকে অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যাব। যে খাতের জন্য যা প্রয়োজন, তাদের তা-ই দেব। দেশের অর্থনীতিকে নতুন মাত্রা দেব।’ এছাড়াও গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালনা পরিষদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে জানিয়েছেন আগামী বাজেটে ব্যাংক ঋণে চক্রবৃদ্ধি সুদহার থাকছে না। বিশ্বের কোথায় ব্যাংক ঋণের চক্রবৃদ্ধি সুদ নেই। সবাই সরল সুদ নেয়। তাই আমরাও আগামী বাজেটের পর থেকে ব্যাংক ঋণের সরল সুদ হার বাস্তবায়ন করবো। অর্থমন্ত্রীর এই উদ্যোগে ব্যবসায়ীরাও দারুণ খুশি। এ সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী উল্লেখ করে তারা বলেছেন, এতে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে। একই সঙ্গে যারা চক্রবৃদ্ধি সুদে বিপর্যস্ত হয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছিলেন তারা আবার ব্যবসায় ফেরার সুযোগ পাবেন।
সূত্র মতে, ব্যাংক ঋণের অন্যতম ব্যবহারকারী উদ্যোক্তারা দীর্ঘদিন ধরেই চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ আরোপের পদ্ধতি বাতিল করে সরল হারে সুদ আরোপ পদ্ধতি চালু করার দাবি করে আসছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছিল না। অবশেষে অর্থমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়া অনেক ব্যবসায়ী আবার ব্যবসায় ফেরার ইঙ্গিত পেয়েছেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় স্বপ্ন দেখছেন ২০৪১ সালে বিশ্বের সেরা ২০টি অর্থনৈতিক দেশের কাতারে যাওয়ার। তিনি বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪১ তম সেরা অর্থনীতির দেশের তালিকায় রয়েছে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ৫৮তম অর্থনীতির দেশের তালিকায় ছিল সেখান থেকে ১৭ ধাপ এগিয়ে ৪১ তম ধাপে উন্নীত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ২০৪১ সাল আসতে এখনো ২১ বছর বাকি। এই ২১ বছরে বাংলাদেশে ২১তম ধাপ অতিক্রম করে ২০৪১ সালে বিশ্বের শীর্ষ ২০ অর্থনৈতিক দেশে পরিণত হবে। এই অর্জনের মধ্য দিয়ে ২০৪১ সালে আমরা জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে পারবে, এটা হবে বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় গৌরবের। আর এ সব অর্জনে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে বেসরকারি বিনিয়োগ। যদিও বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ এখনো সেভাবে আসেনি বলে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে ‘আগামী বছর বিনিয়োগ আসবে। উন্মোচিত হয়নি, এমন অনেক সম্ভবনার দ্বার উন্মোচন হবে। বিনিয়োগ আসতে হবে। এটা করতে যে ধরনের প্রণোদনা দেয়া প্রয়োজন, সেটা দেয়া হবে। তাদেরকে প্রতিযোগী সক্ষম করে তুলবো বলেছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল’।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ঋণের সুদ বছর ভিত্তিতেই হিসাব করার নিয়ম। গ্রাহকদের সঙ্গে এভাবেই কথা হয়। কিন্ত প্রায়োগিক ক্ষেত্রে তা একেক ব্যাংক একেক ভাবে করে। তাই আগামী অর্থবছর থেকে ঋণে সরল সুদহার বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।
যদিও বিনিয়োগ কম বিষয়টি মানতে নারাজ বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, এখানে শতাংশের হিসাবে দেখলে হবে না। দেখতে হবে ভলিয়ম। শতাংশে হিসাবে বিনিয়োগ কম হয়েছে বলে মনে হলেও টাকার অংকে অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায় দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ তিনগুণ বেড়েছে। কর্মসংস্থানও সে হারে বেড়েছে। তবে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় উৎপাদন বাড়লেও কর্মসংস্থান সে হারে বাড়ছে না। এজন্য সবাইকে দক্ষ তরে গড়ে তুলতে হবে।
দেশের তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ঋণে সরল সুদহার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। দীর্ঘদিন পর একটি ভালো উদ্যোগ। এতে করে অনেক ব্যবসায়ী নতুন করে আবার ব্যবসায় ফিরবেন। যা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।
বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, নতুন পদ্ধতি চালু হলে ঋণের সুদহার কমবে। এতে কমে যাবে ঋণের খরচ, কমবে ব্যবসা খরচও। ফলে পণ্যের দাম কমবে, এতে ভোক্তারা লাভবান হবেন। রফতানির ক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়বে। মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি চাপ কমবে। সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন