বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মানুষ এখন প্রাণখুলে হাসতে বা কাঁদতেও ভুলে গেছে: রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৯, ১:০৯ পিএম

সরকার নিজে গুম-খুনের নির্দেশ দিয়ে দানবরুপে জনগণের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দেশ বর্তমান ও অনাগত দিনের দু:শ্চিন্তা, অনিশ্চয়তা, হতাশায় ভরে গেছে। সরকার বেআইনী পথে হাঁটছে বলেই এই শ্বাসরোধী পরিবেশ। কারণ বিরোধী দল ও মতের প্রতি সরকার ও সরকারপ্রধান এর ক্ষোভ-ঘৃনা ও ধ্বংস করার মানসিকতার জন্যই এখন ভয়াবহ অরাজক পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। অদৃশ্য করা, আটক করে কাস্টডিতে হাত-পায়ের নখ তুলে ফেলা, পায়ে-হাতে গুলি করে পঙ্গু করার যে সংস্কৃতি তৈরী হয়েছে তাতে মানুষ এখন প্রাণখুলে হাসতে বা কাঁদতেও ভুলে গেছে।
রোববার বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার গত এক দশকের বেশী সময় ধরে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। ক্ষমতার পৌষ মাস যাতে কোনদিনই শেষ না হয়, সেই নীতি অবলম্বন করেই দেশ চালাচ্ছেন প্ররধানমন্ত্রী। আর সেজন্য নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য বিরোধীদল ও মতকে দমন করতে এমন কোন বর্বর ও নির্দয় পন্থা নেই যা করছেন না। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সংগঠন প্রকাশ্যে কিংবা তাদের গোপন সংস্থাগুলোর মাধ্যমে এই গুম-খুন করা হচ্ছে। এই গুম-খুনের সাথে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজনও জড়িত বলে তথ্য-প্রমানসহ বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। নিজেদের ব্যবসায়িক কারনেও গুম করা হচ্ছে মানুষকে।
তিনি বলেন, কোন মানুষেরই জীবনের নিরাপত্তা নেই। ঘর থেকে বেরুলে তিনি আবার ঘরে ফিরতে পারবেন কি না তার কোন গ্যারান্টি নেই। কারন সরকারের গোপন সংস্থার লোকজন ওৎ পেতে আছে। খবরের কাগজ খুললেই গুম অত:পর ক্রসফায়ার বা বেওয়ারিশ লাশের খবর সেন্সরশীপের পরেও প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে আসছে। আর এসব খবরে সারাজাতি আতংকিত ও স্তম্ভিত।
রিজভী বলেন, বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা’র ইনভেষ্টিগেটিভ ইউনিট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টার বিরুদ্ধে তিনজনকে গুম করার অভিযোগ উঠেছে। প্রচ্ছায়া লিমিটেডের ৩ কর্মচারীকে আইনের অপব্যবহার করে তুলে নিয়ে গুম করা হয়েছে। সম্প্রতি এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাংলাদেশে আলজাজিরা ব্লক করে দিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ থেকে এখন আর তাদের ওয়েব সাইটটিতে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। এর মাধ্যমে সরকার আবারও প্রমান করলো সত্যকে গলা টিপে রাখতে চায় তারা। বাকশাল পুণ:প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে গণমাধ্যমকে হত্যা করছে তারা। শুধুমাত্র সত্য প্রকাশের কারনে চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামী টিভি, পিস টিভি বন্ধ করে দিয়েছে। ‘আমার দেশ’সহ বহু প্রিন্ট মিডিয়া বন্ধ করা হয়েছে। স্বৈরাচার দীর্ঘায়িত হলে নাৎসীবাদের উত্তরণ ঘটে। এ সরকারও নাৎসীবাদের উপাসক।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ক্ষমতাসীনরাই যদি নিজেদের স্বার্থের কারণে মানুষকে অদৃশ্য করে তাহলে মনুষ্যত্বহীনতার এই ভয়ংকর মূর্তি দেখে সাধারণ মানুষ কি বেঁচে থাকার কোন রাস্তা খুঁজে পাবে ? ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরাই যদি সহজাত বিচার-বুদ্ধি হারিয়ে গুম-খুনের সওদাগরীতে মেতে থাকে তাহলে মানবাধিকারের আর্তনাদ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাবে না-যা সভ্য সমাজে অনভিপ্রেত। বিরোধী দলবিহীন একতরফা নির্বাচন, মিডনাইট নির্বাচন ইত্যাদির সাফল্যে আত্মহারা হওয়ার জন্যই শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টার মতোই ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের মাথায় আঁধার নেমেছে। আর এজন্যই তারা গুম-খুনের খেলায় বেপরোয়া ভাব দেখাচ্ছে। অবৈধ ক্ষমতার অহংকার মানুষকে বিবেকশুন্য করে তোলে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিএনপি ও সরকার বিরোধী অসংখ্য নেতা-কর্মীকে এখনো গুম করে রাখা হয়েছে। দেশটাকে এখন শেখ হাসিনা ‘গুমরাজ্য’ বানিয়েছেন। ‘গুমঘর’ থেকে কেউ কেউ সৌভাগ্যক্রমে ফিরে আসলেও অনেকের স্ত্রী-সন্তান-মা-বাবা-স্বজনরা দিনরাত চোখের পানিতে বুক ভাসাচ্ছেন হারিয়ে যাওয়া তাদের প্রিয়জনদের জন্য। তারা কার কাছে বিচার চাইবে ? কার কাছে যাবে?
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রায় প্রতিটি সভা সমাবেশ পঁচাত্তরে মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের শিকার তাঁর পিতা-মাতা-ভাইদের জন্য কাঁদেন। তখন তাঁর কি একবারও মনে হয় না তাঁর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে গুম খুন হওয়া পরিবারের কান্নার কথা। এই গুম-খুন বন্ধ করুন। গুম হওয়ার ১৫ মাস পর ফিরে এসেছেন সাবেক কূটনীতিক মারুফ জামান। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরু, হুমায়ন কবীর পারভেজ, সাজেদুল ইসলাম, মাহবুব হাসান, মাজহারুল ইসলাম, আদনান চৌধুরী, পারভেজ হোসেনসহ প্রায় হাজার খানেক মানুষকে। এখনও নিরুদ্দেশ হয়ে আছেন বিগ্রেডিয়ার আবদুল্লাহিল আমান আজমী, ব্যারিস্টার আহমদ বিন কাশেম (আরমান)। এ সমস্ত গুম হওয়া মানুষের জন্য তাদের মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানরা কাঁদছেন। কিন্তু সরকার অনুভুতিশুণ্য, বোধহীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন