বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মানুষ এখন প্রাণখুলে হাসতে বা কাঁদতেও ভুলে গেছে : সংবাদ সম্মেলনে রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

সরকার নিজে গুম-খুনের নির্দেশ দিয়ে দানবরূপে জনগণের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দেশ বর্তমান ও অনাগত দিনের দুশ্চিন্তা, অনিশ্চয়তা, হতাশায় ভরে গেছে। সরকার বেআইনি পথে হাঁটছে বলেই এই শ্বাসরোধী পরিবেশ। কারণ বিরোধী দল ও মতের প্রতি সরকার ও সরকারপ্রধানের ক্ষোভ-ঘৃণা ও ধ্বংস করার মানসিকতার জন্যই এখন ভয়াবহ অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অদৃশ্য করা, আটক করে কাস্টডিতে হাত-পায়ের নখ তুলে ফেলা, হাত-পায়ে গুলি করে পঙ্গু করার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে তাতে মানুষ এখন প্রাণখুলে হাসতে বা কাঁদতেও ভুলে গেছে। গতকাল বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার গত এক দশকের বেশি সময় ধরে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। ক্ষমতার পৌষ মাস যাতে কোনোদিনই শেষ না হয় সেই নীতি অবলম্বন করেই দেশ চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। আর সে জন্য নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য বিরোধী দল ও মতকে দমন করতে এমন কোনো বর্বর ও নির্দয় পন্থা নেই, যা করছেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সংগঠন প্রকাশ্যে কিংবা তাদের গোপন সংস্থাগুলোর মাধ্যমে এই গুম-খুন করা হচ্ছে। এই গুম-খুনের সাথে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজনও জড়িত বলে তথ্য-প্রমাণসহ বিদেশি সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। নিজেদের ব্যবসায়িক কারণেও মানুষকে গুম করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, কোনো মানুষেরই জীবনের নিরাপত্তা নেই। ঘর থেকে বেরোলে তিনি আবার ঘরে ফিরতে পারবেন কি না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। কারণ সরকারের গোপন সংস্থার লোকজন ওঁৎ পেতে আছে। খবরের কাগজ খুললেই গুম অতঃপর ক্রসফায়ার বা বেওয়ারিশ লাশের খবর সেন্সরশিপের পরও প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে আসছে। আর এসব খবরে সারা জাতি আতঙ্কিত ও স্তম্ভিত।
রিজভী বলেন, বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টার বিরুদ্ধে তিনজনকে গুম করার অভিযোগ উঠেছে। প্রচ্ছায়া লিমিটেডের ৩ কর্মচারীকে আইনের অপব্যবহার করে তুলে নিয়ে গুম করা হয়েছে। স¤প্রতি এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাংলাদেশে আলজাজিরা বøক করে দিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ থেকে এখন আর তাদের ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। এর মাধ্যমে সরকার আবারও প্রমাণ করল সত্যকে গলা টিপে রাখতে চায় তারা। বাকশাল পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে গণমাধ্যমকে হত্যা করছে তারা। শুধু সত্য প্রকাশের কারণে চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামী টিভি, পিস টিভিসহ বহু প্রিন্ট মিডিয়া বন্ধ করা হয়েছে। স্বৈরাচার দীর্ঘায়িত হলে নাৎসিবাদের উত্তরণ ঘটে। এ সরকারও নাৎসিবাদের উপাসক।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ক্ষমতাসীনরাই যদি নিজেদের স্বার্থের কারণে মানুষকে অদৃশ্য করে তাহলে মনুষ্যত্বহীনতার এই ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখে সাধারণ মানুষ কি বেঁচে থাকার কোনো রাস্তা খুঁজে পাবে? ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরাই যদি সহজাত বিচার-বুদ্ধি হারিয়ে গুম-খুনের সওদাগরিতে মেতে থাকে তাহলে মানবাধিকারের আর্তনাদ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাবে নাÑ যা সভ্য সমাজে অনভিপ্রেত। বিরোধী দলবিহীন একতরফা নির্বাচন, মিডনাইট নির্বাচন ইত্যাদির সাফল্যে আত্মহারা হওয়ার জন্যই শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টার মতোই ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের মাথায় আঁধার নেমেছে। আর এ জন্যই তারা গুম-খুনের খেলায় বেপরোয়া ভাব দেখাচ্ছে। অবৈধ ক্ষমতার অহঙ্কার মানুষকে বিবেকশূন্য করে তোলে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিএনপি ও সরকারবিরোধী অসংখ্য নেতা-কর্মীকে এখনো গুম করে রাখা হয়েছে। ‘গুমঘর’ থেকে কেউ কেউ সৌভাগ্যক্রমে ফিরে এলেও অনেকের স্ত্রী-সন্তান-মা-বাবা-স্বজনরা দিনরাত চোখের পানিতে বুক ভাসাচ্ছেন প্রিয়জনদের জন্য। তারা কার কাছে বিচার চাইবে? কার কাছে যাবে?
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রায় প্রতিটি সভা-সমাবেশে পঁচাত্তরে মর্মান্তিক হত্যাকাÐের শিকার তার পিতা-মাতা-ভাইদের জন্য কাঁদেন। তখন তার কি একবারও মনে হয় না তার রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে গুম-খুন হওয়া পরিবারের কান্নার কথা।
তিনি বলেন, গুম হওয়ার ১৫ মাস পর ফিরে এসেছেন সাবেক কূটনীতিক মারুফ জামান। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরু, হুমায়ন কবীর পারভেজ, সাজেদুল ইসলাম, মাহবুব হাসান, মাজহারুল ইসলাম, আদনান চৌধুরী, পারভেজ হোসেনসহ বিএনপি ও সরকারবিরোধী অসংখ্য মানুষকে এখনো গুম করে রাখা হয়েছে। এখনও নিরুদ্দেশ হয়ে আছেন ব্রিগেডিয়ার আবদুল্লাহিল আমান আজমী, ব্যারিস্টার আহমদ বিন কাশেম (আরমান)। এসব গুম হওয়া মানুষের জন্য তাদের মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানরা কাঁদছেন। কিন্তু সরকার অনুভূতিশূন্য, বোধহীন।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে রিজভী বলেন, এই নির্বাচনে ভোটার যাচ্ছে না, ভোটারশূন্য কেন্দ্র। খাসির মাংস দিয়ে খিচুড়ি খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে ক্ষমতাসীনরা, তারপরও ভোটারদের কেন্দ্রে নিতে পারছে না।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, নাজমুল হক নান্নু, কেন্দ্রীয় নেতা এ বি এম মোশাররফ হোসেন, মনির হোসেন প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন