মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

আমরা কি দেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মূল্যায়ন করতে পারছি?

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

যে দেশে গুণীর কদর হয় না, সে দেশে গুণী জন্ম নেয় না। আমাদের দেশে গুণীর জন্ম হলেও তাদের কদর কমই হয়। সরকারী-বেসরকারী কোনো ক্ষেত্রেই তাদের যথাযথ মূল্যায়ণ হতে দেখা যায় না। তারপরও অনেক বিজ্ঞানী ও গবেষক পৃষ্ঠপোষকতার আশায় বসে না থেকে শুধু তাদের মেধা চর্চায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। অবার অনেকে অবমূল্যায়নের বেদনা নিয়ে বিদেশে পাড়ি জামান। ভিনদেশে তাদের কদরের কমতি নেই। তাদের পরম আদর-যতে্ন লালন করা হয়। দেশের সম্পদ বিদেশি সম্পদে পরিণত হয়। ব্রেইন ড্রেইন বা মেধা পাচারের এই প্রক্রিয়া বহু বছর ধরে চলে আসছে। দেশে যে মেধার ঘাটতি নেই বা কোনো কালে ছিল না, বিদেশে তাদের গবেষণালব্ধ একেকটি বিস্ময়কর কাজ তার সাক্ষী হয়ে আছে। বিভিন্ন দেশে আমাদের কৃতি সন্তানদের বিজ্ঞানের আবিষ্কার দেখে যেমন গর্ববোধ হয়, তেমনি মনে হরিষে বিষাদের সৃষ্টি হয়। আফসোস হয়, তাদের এ কাজের সুফল আমরা ভোগ করতে পারছি না। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতে হচ্ছে। কয়েক বছর আগে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষক সায়মা বেগম চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় অগ্রগতি ইউনিভার্সাল ফ্লু ভ্যাকসিন তৈরির ফর্মুলা আবিষ্কার করে বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন। তার আগে লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ড. হাসান শহীদ ও শাকির আহমদ বিশ্বের প্রথম সৌরচালিত হেলিকপ্টার উদ্ভাবন করে অনন্য নজির স্থাপন করেন। নামিবিয়ার মরু অঞ্চলে মাছ চাষের প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করে সে দেশে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করেছেন মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য গবেষণা ও মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে বিজ্ঞানী তাহের খান বিষমুক্ত খাবার ও মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করে যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য বাজারজাতে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. শুভ রায় বিশ্বে প্রথম কৃত্রিম কিডনী তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। স্পেকট্রোমিটার নামে মানুষের শরীরে যে কোনো ধরনের বিস্ফোরক উপাদান সহজে শনাক্তকরণ মেশিন আবিষ্কার করে যুক্তরাষ্ট্রে হইচই ফেলে দিয়েছেন বিজ্ঞানী ড. আনিসুর রহমান। দেশের বাইরে এমন অনেক বাংলাদেশি আছেন, যারা বিজ্ঞানভিত্তিক আবিষ্কার ও উদ্ভাবন করে সংশ্লিষ্ট দেশে অবদান রেখে চলেছেন। কয়েক বছর আগে দেশে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম তোষা পাটের পর দেশি পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করে বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। তিনি পেঁপের জেনোম সিকোয়েন্সিং উৎঘাটন করে চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি থেকে রক্ষার কৌশলও আবিষ্কার করেছেন। আবার এমনও উদ্ভাবনী শক্তির মানুষ রয়েছেন যারা স্কুলের গণ্ডি না পেরিয়েও বিস্ময়কর আবিষ্কার করেছেন। যেমন একই জমিতে বছরে ৪ বারে ৬৪টি ফসল ও মাছচাষের মাধ্যমে ৮ লাখ টাকা আয়ের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন যশোরের অষ্টম শ্রেণি পাস মোস্তফা আলী। দেশে-বিদেশে এমন আরও অনেক বাংলাদেশি গবেষক ও বিজ্ঞানী রয়েছেন, যারা নিরলস মেধা খাটিয়ে নতুন নতুন আবিষ্কার করে চলেছেন। দুঃখের বিষয়, বিদেশে তাদের এই আবিষ্কারের সুফল আমরা পাচ্ছি না, দাবীও করতে পারছি না। দেশে যারা আবিষ্কার করছেন, তারাও যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন না।
দুই.
একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের চেহারা স্থায়ীভাবে বদলে দিতে বিজ্ঞানের একটি-দুটি আবিষ্কারই যথেষ্ট। আমাদের দেশে কৃষি ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী-গবেষকরা যেসব পদ্ধতি আবিষ্কার করে চলেছেন, কার্যক্ষেত্রে এগুলোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে জীবনমান স্থায়ীভাবে বদলে যেতে পারে। এজন্য প্রয়োজন সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা। সরকার কি তা করতে পারছে? রাষ্ট্রের সম্পদ আবিষ্কারক এবং তাদের আবিষ্কারকে কি যথাযথভাবে লালন ও সংরক্ষণ করতে পারছে? এদিকে সরকারের যথাযথ মনোযোগ আছে বলে মনে হয় না। গুরুত্বপূর্ণ কোনো আবিষ্কার হলে সাড়ম্বরে ঘোষণা দিয়েই যেন দায়িত্ব শেষ করে। পরবর্তীতে আবিষ্কারের কি হলো, কতটুকু এগুলো, সরকার তার বাস্তব প্রয়োগে কি ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার খোঁজ পাওয়া যায় না। বাস্তবতা হচ্ছে, যেসব বিজ্ঞানী কৃষি, তথ্য ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নিয়োজিত তাদের প্রতি সরকার যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না। তাদের গবেষণার জন্য যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন, তা তারা পাচ্ছেন না। পদে পদে বঞ্চিত হচ্ছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৯২ সালের পর থেকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) ১১৫ জন বিজ্ঞানী চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ৫০ জন এবং ২০০১ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ৬৫ জন চাকরি ছেড়েছেন। তারা বঞ্চনা ও হতাশার শিকার হয়ে গবেষণা কাজে ইস্তফা দিয়েছেন। অনেকে বিদেশে চলে গেছেন। বর্তমানে যারা আছেন তাদের অনেকেই দেশের বাইরে চলে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। চাকরি ছেড়ে যাওয়া এক বিজ্ঞানী বলেছেন, বিজ্ঞানীদের বেতনকাঠামো দেশে খুব বেশি ভালো নয়। তারপরও দেশের টানে বিজ্ঞানীরা সরকারি প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান। কিন্তু যোগ্যতা থাকার পরও তারা যদি পদোন্নতি না পান, তাহলে কেন থাকবেন? ব্রি’র ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন ড. শেখ তানভীর হাসান। একটি উদ্ভাবনের জন্য তিনি ৭৬টি দেশের দেড় হাজার বিজ্ঞানীর মধ্যে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অর্গানিক ফার্মিং ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড (ওফিয়া) পেয়েছেন। পদোন্নতি না পেয়ে ২০০৮ সালে হতাশা নিয়ে চাকরি ছেড়ে বেসরকারি একটি সংস্থার উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। তিনি দেশ ছেড়ে না গেলেও গবেষক থেকে উপদেষ্টা হন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দেশ তার কাছ থেকে আর কিছু পেল না, একজন বিজ্ঞানী হারালো। বিজ্ঞানী ও গবেষকদের যদি তাদের চাকরি ও সুযোগ-সুবিধা বা জীবনযাপনের দুঃশ্চিন্তায় থাকতে হয়, তবে তার পক্ষে কি নিমগ্ন হয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব? বলার অপেক্ষা রাখে না, শুধু গবেষণা নয়, সৃষ্টিশীল কোন কাজই দুঃশ্চিন্তা নিয়ে করা যায় না। এজন্য প্রয়োজন চিন্তামুক্ত ও নির্ভার জীবনের নিশ্চয়তা। ২০০৮ সালে নোবেলজয়ী সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানী ড. রিচার্ড আর. আর্নস্ট বাংলাদেশে এসেছিলেন। এক সেমিনারে বলেছিলেন, ল্যাবরেটরি ও গবেষণার সঙ্গে যার যোগাযোগ নেই, তার বিজ্ঞানী থাকার কোনো সার্থকতা নেই। বিজ্ঞানীদের গবেষণা ও উদ্ভাবনে মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হয়। দেশের মানুষ কী খাবে, কীভাবে খাবে, কী ব্যবহার করবে-এসব প্রশ্ন নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করাই তার দায়িত্ব। কোনো দেশের বিজ্ঞানীরা এসব প্রশ্নের সমাধান দিতে পারলেই ওই দেশ সার্বিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে। কৃষি ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেমন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দায়িত্ব বিজ্ঞানীদের, তেমনি খাদ্য ও ব্যবহার্য দ্রব্যের প্রক্রিয়াজাতকরণের দায়িত্বও তাদের। এই দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে জাতীয় অগ্রগতিও থমকে দাঁড়াবে। মি. আর্নস্টের এই বক্তব্য একজন বিজ্ঞানীর দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং স্বাভাবিক। তবে তিনি যে পরিবেশ পরিস্থিতি ও সুযোগ-সুবিধার মধ্যে থেকে গবেষণা কর্ম চালিয়েছেন এবং নোবেলজয়ী হয়েছেন, আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা তা কল্পনাও করতে পারেন না। বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, আমার বাসায় কোন টেলিভিশন নেই। অর্থাৎ তার গবেষণা কর্ম বিঘিœত হতে পারে, এমন কোনো পরিবেশ তিনি সৃষ্টি হতে দেননি। একজন বিজ্ঞানীর গবেষণার জন্য যে ধরনের পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন, তিনি তাই পেয়েছিলেন। তাকে প্রতিনিয়ত চাকরি ও কীভাবে জীবনযাপন করবেন, এ নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি। তিনি আত্মনিবেদিত হয়ে গবেষণাকর্ম চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। বিজ্ঞানী ও গবেষকদের এই আত্মনিবেদিত হয়ে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে আমাদের সরকারগুলো বরাবরই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। এই ব্যর্থতার মাশুল দিচ্ছে পুরো জাতি। বিজ্ঞানীরা হতাশ হয়ে চাকরি ছেড়ে অন্য পেশায় বা বিদেশ চলে যাচ্ছেন। দেশ পিছিয়ে পড়ছে এবং কৃতি সন্তানদের হারাচ্ছে। আবার তারাই কেউ কেউ বিদেশ গিয়ে যখন পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, তখন তাদের মেধার স্ফূরণ ঘটতে দেখা যায়। একের পর এক বিস্ময়কর আবিষ্কার দিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন। দেশে বসে আমরা গর্ববোধ করলেও এতে দেশের কোনো উপকার হয় না।
তিন.
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেসব দেশ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়েছে, তাদের সক্ষমতার পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের অবদান অসীম। তাদের একের পর এক আবিষ্কার দেশগুলোকে সমৃদ্ধ করেছে। গত কয়েক দশকে চীন ও ভারত বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় অর্থনৈতিকভাবে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেছে। ব্রিটেনের রয়েল সায়েন্স সোসাইটির বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিনে উল্লেখ করা হয়েছে, খুব দ্রুতই বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে। চীন হবে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশ্বের এক নম্বর দেশ। দেশটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে অসামান্য উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা মূল অবদান রাখছে। ভারত বিদেশে অবস্থানরত তাদের কৃতি সন্তানদের দেশে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। দেশে ফিরে তাদের গবেষণা দেশের কাজে লাগাতে বলেছে। তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, প্রতিযোগিতামূলক অর্থনৈতিক বিশ্বে বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশের সরকার যখন তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি হিসেবে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীকে আঁকড়ে ধরছে, তখন আমাদের সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কেবল ক্ষমতাসীন হওয়ার পেছনে ছুটছে, যাতে দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করার ধ্বংসাত্মক মনোভাব ছাড়া কিছু নেই। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি যে গবেষক ও বিজ্ঞানী হতে পারে, বিষয়টি সরকার ও বিরোধী দল কেউই যথাযথভাবে উপলব্ধি করছে না। তাদের এজেন্ডায় এসব সূর্য সন্তানদের লালন ও তাদের আবিষ্কারকে কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে দেশকে এগিয়ে নেয়ায় কোনো দিক নির্দেশনা থাকে না। ক্ষমতাসীন হওয়া রাজনৈতিক দলের স্বাভাবিক লক্ষ্য হলেও উন্নত বিশ্বে রাজনৈতিক দলের ক্ষমতাসীন হওয়ার মূল লক্ষ্য থাকে অর্থনৈতিক উন্নতির মাধ্যমে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে থাকে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত উন্নয়নের লক্ষ্য। তাদের কর্মসূচী ও কর্মকাণ্ডে দেশের সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক উন্নয়ন খাতগুলোকে এগিয়ে নেয়ার কোনো এজেন্ডা থাকে না। থাকলেও তা জনসাধারণ জানতে পারে না। দেশের টেকসই উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতা ধরে রাখার বিকল্প নেই। যারাই এ কাজে মনোযোগ ও গুরুত্ব দিয়েছে, তারাই এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার এত বছরে আমাদের দেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাজে লাগাতে পারলে এতদিনে খাদ্য ও কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে তা রপ্তানি করা যেত। জাতীয় স্বার্থে বিজ্ঞানী ও গবেষক এবং তাদের উদ্ভাবনকে সংরক্ষণ ও কাজে লাগানো প্রয়োজন হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে তেমন কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কেবল যখনই বিস্ময়কর কোনো আবিষ্কার হয়, তখন এ নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। সরকারের তরফ থেকেও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ঘোষণা আসে। কিছুদিন যেতেই বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার বিষয়টি আড়ালে চলে যায়।
চার.
বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের সাড়া জাগানো আবিষ্কারের পর ২০১০ সালে সরকারের তরফ থেকে বিজ্ঞানীদের দেশে ধরে রাখার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগের কথা শোনা গিয়েছিল। আন্তর্জাতিক বেতন কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে আলাদা বেতন কাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি বিজ্ঞানীদের অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি এবং নতুন করে ৪ হাজার বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী তৈরি করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এসব উদ্যোগ ইতিবাচক হলেও বাস্তবায়ন কতটা হচ্ছে, তার খবরাখবর এখন আর পাওয়া যায় না। এসব উদ্যোগ কি কেবল কথার কথায় পরিণত হয়েছে, নাকি বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা দেশবাসী জানতে পারছে না। ড. রিচার্ড বলেছেন, বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে হবে। জীবনমুখী করে তুলতে হবে। বাংলাদেশকে এগুতে হলে মৌলিক বিজ্ঞানের গবেষণার ওপর জোর দিতে হবে। একজন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীর এ কথা উপেক্ষার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নকামী দেশকে এগুতে হলে ভেতরের শক্তিকে কাজে লাগানো অপরিহার্য। যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তাদের উপলব্ধি করতে হবে, উন্নয়নের অন্যতম শক্তি বিজ্ঞানী ও গবেষক। তাদেরকে এবং তাদের উদ্ভাবনী শক্তিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন ধারার অগ্রভাগে রাখতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। তারা যাতে নিশ্চিন্তে ও নির্বিঘে্ন গবেষণা কর্ম চালিয়ে যেতে পারে এবং বিদেশ চলে না যায়, এজন্য যে ধরনের সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন, তাই দিতে হবে। বিদেশে যেসব বিজ্ঞানী ও গবেষক রয়েছেন, তাদের উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে ফিরে আসতে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞানী, গবেষক ও তাদের উদ্ভাবনকে সুরক্ষা, সংরক্ষণ এবং কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি ব্যবস্থাপনা এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলোকেও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে উদাসীনতা ও শৈথিল্য কাম্য হতে পারে না।
darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Mohib Billah ২৯ মার্চ, ২০১৯, ১২:২৯ এএম says : 0
অত্যন্ত সময়োপযোগী ও বাস্তবধর্মী লিখা। আমাদের দেশে আজ গবেষণা না করে তোষামদ করলেই কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বেশি কদর পাওয়া যায়।
Total Reply(0)
Al Mamun ২৯ মার্চ, ২০১৯, ১০:০৬ এএম says : 0
.... Be are reading this kinds of articles from childhood, Stop publish this.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন