বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী নৌযানের পরীক্ষামূলক পরিচালন শুরু

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৯, ৯:২২ এএম

রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসি‘র যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি মধুমতি’ শুক্রবার রাত ৮টার দিকে ঢাকা থেকে যাত্রা করে সকাল ৯টার দিকে পিরোজপুরের চরখালী এলাকা অতিক্রম করছিল। নৌযানটিতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বিআইডব্লিউটিসি ও টিএ‘র একাধিক কর্মকর্তা ছাড়াও প্রায় ৮৫জন টিকেটধারী যাত্রী রয়েছেন।

ঢাকা-মংলা-কোলকাতা রুটে পরীক্ষামূলকভাবে পরিচালনে এমভি মধুমতি আজ বিকেল নাগাদ মংলা পৌঁছে সেখান থেকে পুরনো চালনা হয়ে সুন্দরবনের আংটিহারাতে কাস্টমস ও ইমিগ্রেসন-এর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে প্রায় ২৫কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণে ভারত নৌ সীমান্তে প্রবেশ করার কথা রয়েছে। তবে ভারত নৌ সীমানা থেকে কোলকাতা পর্যন্ত নৌপথে রাত্রীকালীর চলাচলে নৌ-সংকেত ব্যবস্থা নেই বলে জানা গেছে। এর ফলে মধুমতি আগামীকাল (রবিবার) দুপুরের পরে কোলকাতাতে পৌছার ব্যাপারে সন্দিহান দায়িত্বশীল মহল। এমনকি নৌযানটি রাতে কোথায় নোঙরে থাকবে তাও এখনো ঠিক হয়নি।

প্রায় ৭০ বছর পরে দুই দেশের সরকার প্রধানের সিদ্ধান্তের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আন্তঃদেশীয় নৌপথে এ যাত্রীবাহী সার্ভিসের পরীক্ষামূলক পরিচালন-এর আনুষ্ঠানিক সূচনা হল। কোলকাতা থেকেও অনুরূপ একটি যাত্রীবাহী নৌযান বাংলাদেশে আসছে। ১৮৭৪ সালে এ উপমহাদেশে বাষ্পীয় প্যাডেল জাহাজ চালু করে বৃটিশ আইজিএন এবং আরএসএন কোম্পানী। দেশ বিভাগের পরে ১৯৪৮ সালে ভারত-বাংলাদেশ নৌযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে বৃটিশ-ভারতের ‘আইজিএন’ ও ‘আরএসএন কোম্পানী’র কয়লা চালিত বাষ্পীয় প্যাডেল হুইল জাহাজের সাহায্যে বরিশাল থেকে কোলকাতা রুটে যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান পরিচালিত হত। এছাড়াও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিবারের নৌযানও বরিশাল-কোলকাতা রুটে পরিচালিত হত। কিন্তু সুন্দরবনের গহীন অরন্যে তাদের একটি নৌযান ডুবির প্রেক্ষিত তা বন্ধ হয়ে যায়। বৃটিশ ব্যক্তি মালিকানাধীন ‘ফ্লোটিলা নেভিগেশন’র নৌযানও এ নৌপথে যাত্রী পরিবহন করত দেশ বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত।

কিন্তু দেশ বিভাগের পরে এ সব সার্ভিসই বন্ধ হয়ে যায়। পরিবর্তীতে নারায়নগঞ্জ ও বরিশাল হয়ে রকেট স্টিমারের সাথে খুলনা থেকে কোলকাতাগামী ট্রেনের সংযোগ চালু ছিল ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাক-ভারত যুদ্ধ পর্যন্ত। নারায়নগঞ্জ থেকে গোয়ালন্দমুখী স্টিমারের সাথে কোলকাতাগামী ট্রেনেরও সংযোগ সার্ভিস চালু ছিল ঐ যুদ্ধপূর্ব সময় পর্যন্ত। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে ভারত-বাংলাদেশ নৌ প্রটোকলের আওতায় কোলকাতা থেকে আংটিহারা-মোংলা-বরিশাল হয়ে ভারতের আসামের ডিব্রুগর পর্যন্ত পণ্যবাহী নৌযানের চলাচল অব্যাহত রয়েছে।
পূর্ব সিদ্ধান্তনুযায়ী রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশী পতাকাবাহী নৌযানটি কোলকাতার হাওড়া এলাকার ঘাটে পৌঁছার কথা রয়েছে। তবে কোলকাতাগামী এ নৌযানটি বিভাগীয় সদর ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্বম বরিশাল বন্দরে যাত্রা বিরতি না করায় ক্ষুদ্ধ দক্ষিণাঞ্চলের সাধারন মানুষ।

ফিরতি পথে নৌযানটি সোমবার দুপুরে কোলকাতা থেকে রওয়ানা হয়ে অনুরূপভাবে আংটিহারা’তে সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে মোংলা হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধা নাগাদ ঢাকায় পৌঁছার কথা রয়েছে। তবে এসবই নির্ভও করবে ভারতীয় নৌপথে রাত্রীকালীন নৌযোগাযোগের ওপর। পরিক্ষামূলক এ যাত্রায়ও যাত্রী পরিবহনে ইতোপূর্বে সংস্থাটির পক্ষ থেকে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও প্রচার করা হয়। তবে কবে নাগাদ ঢাকা-কোলকাতা নৌপথে বানিজ্যিক নৌযান চলাচল শুরু হবে তা নশ্চিত করে বলতে না পারলেও বিআইডব্লিউটিসি‘র দায়িত্বশীল মহল ঈদেও পরে এলক্ষে সব প্রস্তুতি গ্রহন করতে চাচ্ছেন। বিষয়টি অবশ্য পররাষ্ট্র ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপরও অনেকটা নির্ভরশীল বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

তবে ইতোমধ্যে এ রুটে যাত্রী ভাড়া নিয়েও কিছুটা আপত্তি উঠতে শুরু করেছে। ভ্রমণকর বাদে দুই শয্যার ফ্যামিলি কেবিন বা ভিআইপি স্যুটের ভাড়া নির্ধারন করা হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। প্রথম শ্রেণীর দুই শয্যার ভাড়া দশ হাজার এবং একক শয্যার কক্ষের ভাড়া ৫ হাজার নির্ধরিত হয়েছে। এর বাইরে ১৫% ভ্যাট ও ৫শ’ টাকা করে ভ্রমন করও পরিশোধ করতে হবে সব যাত্রীকে। যা আকাশ পথে ঢাকা-কোলকাতা-ঢাকা আকাশ পথে ভ্রমনের চেয়েও অনেক বেশী। ডেক ভাড়া থাকছে দেড় হাজার টাকা। তবে ডেকের যাত্রীদের জন্য ভ্যাট না থাকলেও ভ্রমন কর ৫শ টাকা পরিশাধ করতে হবে।
২০১৫ সালে প্রায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সাড়ে ৭শ’ যাত্রী বহনক্ষম ‘এমভি মধুমতি’ নৌযানটির যাত্রী বহন ক্ষমতা সাড়ে ৭শ‘। প্রায় ২৪৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪১ ফুট প্রস্থ নৌযানটির দোতালায় ৪টি ভিআইপি কক্ষে ৮ জন, ১৮টি দুই শয্যার প্রথম শ্রেণীর বাতানুকুল কক্ষে ৩৬ জন ও ৪টি একক শয্যার কক্ষে ৪ জন যাত্রী ভ্রমনের সুবিধা রয়েছে। এছাড়া তৃতীয় তলায় ১৬টি দুই শয্যার কক্ষে ৩২ জন ও ১৮টি সেমি ডবল কেবিনে সম পরিমান যাত্রী ভ্রমন সুবিধা রয়েছে। ৫.২৪৮ ফুট লাডেড ড্রাফটের দ্বিস্তর তলা বিশিষ্ট এ নৌযানটিতে ২শ টন পণ্য পরিবহনেরও সুবিধা রয়েছে। জাপানের ইয়নমার ব্রান্ডের ১১৮৪ অশ্বশক্তির দুটি করে ইঞ্জিন সমৃদ্ধ এ নৌযানটি ঘন্টায় ১১ নটিক্যাল মাইল বা ২০.৩৭ কিলোমিটার নৌপথ অতিক্রমে সক্ষম বলে বিআইডব্লিউটিসির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। তবে প্রায় ১২শ টন ওজনের এ নৌযানটি অতিরিক্ত জ্বালানী ব্যয় ও যাত্রীবান্ধব না হওয়ায় তাতে ভ্রমনে এ পর্যন্ত যাত্রীদের তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘এমভি বাঙালী ও এমভি মধুমতি’ নৌযান দুটি যথাক্রমে ২০১৪-এর এপ্রিল ও ২০১৫-এর মে মাসে চালু হলেও গত ডিসেম্বর পর্যন্ত তার পরিচালন লোকসান প্রায় ১৫ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। ফলে এসব নৌযান সংস্থাটির জন্য ইতোমধ্যে দুঃশ্চিন্তার বিষয়ে পরিনত হয়েছে।

তবে ‘ইলেক্ট্রো-হাইড্রেলিক স্টিয়ারিং সিস্টেম’র অত্যাধুনিক ব্রীজ ইকুইপমেন্ট সম্বলিত ‘এমভি মধুমতি’ অভ্যন্তরীন যাত্রী পরিবহন থেকে প্রত্যাহার করে আন্তঃদেশীয় সার্ভিসে নিয়োজিত করায় লোকসান কতটুকু হ্রাস পাবে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ এখনই কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন