বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

জাদুকরী মেসি, রেকর্ডের মেসি

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বল পায়ে আয়াতকার সবুজ গালিচায় শিল্প রচনা করাতেই তার যত আনন্দ। ফুটবল মাঠে তার এমন সৃষ্টিশীল মুহূর্তের সাক্ষী অনেকবারই হয়েছে ফুটবল বিশ্ব। আন্তর্জাতিক বিরতি কাটিয়ে ক্লাব ফুটবলে ফিরে আবারো তেমনি এক মুহূর্ত উপহার দিলেন সময়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি। বার্সেলোনাও দারুণ জয়ে লা লিগা শিরোপা ধরে রাখার মিশনে এগিয়ে গেছে আরো এক ধাপ।
ঘরের মাঠ ন্যু ক্যাম্পে কাতালান ডার্বি ম্যাচ। কোনভাবেই প্রতিপক্ষ এস্পানিওলের জাল আবিষ্কার করা যাচ্ছে না। লুইস সুয়ারেজ, লিওনেল মেসি, ফিলিপ কুতিনহো, ইভান রাকিটিচদের আক্রমণ প্রতিপক্ষের ডি বক্সে গিয়ে খেই হারাচ্ছে। এভাবে ম্যাচের বয়স গিয়ে ঠেকেছে এক চতুর্থাংশের শেষভাগে। এমন সময় ডি বক্সের ঠিক বাইরে ফি-কিক পেয়ে গেল বার্সেলোনা। শুধু ন্যু ক্যাম্প কেন, প্রযুক্তির কল্যাণে মাঠের বাইরে থেকেও এই ম্যাচে চোখ রাখা পুরো বিশ্বের ফুটবল ভক্তদের নড়েচড়ে বসার কথা। ইদানিং ফ্রি-কিক থেকে গোল করাটা যে অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন ফুটবল জাদুকর! মেসির সঙ্গে শট নেয়ার পজিশনে দাঁড়ালেন সুয়ারেজও। কিন্তু কারো বুঝতে বাকি নেই শটটা শেষ পর্যন্ত নেবেন মেসিই। কিন্তু কোন উপায়ে?
মেসি যে শটটা নিলেন তা সাধারণের আওতায় পড়ে না, অনেকটা ‘পানেন ধরণের’। চিপ ফ্রি-কিক শট বলা যেতে পারে। প্রচীরের উপর দিয়ে বল জালের দিকে ভেসে যেতে দেখে অনেকটা পছনে দৌড়ে হেড দিয়ে ক্লিয়ার করতে চাইলেন এস্পানিওল মিডফিল্ডার ভিক্টোর সানচেস। বল তার মাথাতে লাগলেও তার প্রচেষ্টা সফল হলো না। বল গিয়ে আশ্রয় নেয় জালে। নু ক্যম্পের দর্শকদের চোখে তখন বিষ্ময়। লিগ মৌসুমে এটি তার পঞ্চম ফ্রি-কিক গোল। পরে আরো এক গোল করে ২-০ ব্যবধানের জয় নিশ্চিত করেন আর্জেন্টাইন তারকা।
ম্যাচ শেষে এমন জাদুকরী ফ্রি-কিক নিয়ে বিজয়ী দলের কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দের মন্তব্য, ‘এমন একটি ফ্রি-কিক সে (মেসি) মারতে পারে এ ব্যপারে আমার কোন ধারণা ছিল না। আমাদের পরিকল্পনা ছিল ঠিকই কিন্তু ফ্রি-কিক মারাটা সবসময়ই তার ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে আমার কোন মতামতের প্রয়োজন নেই।’
স্থানীয় সময় পরশু বিকালে বার্সেলোনার হয়ে ৬৭৫তম ম্যাচ খেলতে মাঠে নেমেছিলেন মেসি। যার মাধ্যমে ক্লাবের হয়ে সর্বকালের সর্বাধিক ম্যাচ খেলার তালিকায় আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থান উঠে এসেছেন ৩১ বছর বয়সী। তার থেকে ১০২টি ম্যাচ বেশি খেলে এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন জার্ভি হার্নান্দেজ। একই দিনে মেসি ছুঁয়েছেন সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াসের সবচেয়ে বেশি লা লিগা ম্যাচ জয়ের রেকর্ড (৩৩৪ ম্যাচ)।
আর্জেন্টিনার হয়ে ভেনিজুয়েলার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ দিয়ে গত সপ্তায় জাতীয় দলে ফেরেন মেসি। ম্যাচটি অবশ্য ৩-১ গোলে পরাজিত হয় আর্জেন্টিনা। পুরোনো কুঁচকির চোট উঁকি দেওয়ায় মরক্কোর বিপক্ষে পরের ম্যাচে ছিলেন বিশ্রামে। তবে শনিবার একাদশেই ছিলেন তিনি। এই ম্যাচে মেসির ওপর জাতীয় দলের পারফরমেন্স কোন প্রভাব ফেলেনি বলে জানান ভালভার্দে, ‘যে কোন দলেই মেসি খেলুক না কেন সেটা তার জন্য কোন বিষয় নয়। অস্ট্রেলিয়ায় খেললেও সে একই খেলোয়াড় থাকবে। তাকে পেয়ে আমরা সত্যিই সৌভাগ্যবান। একজন কোচ হিসেবেও এটা আমার সৌভাগ্য।’
বলের দখল নিয়ে আধিপত্য দেখালেও গোলের জন্য এদিন দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে বার্সেলোনাকে। ৭০ মিনিট পর্যন্ত বেশ চিন্তায় কাটে বার্সা সমর্থকদের। এস্পানিওলও মন্দ খেলেছিল বলা যাবে না। এরপরই ব্যবধান গড়ে দেয় মেসির সেই জাদুকরী মুহূর্ত।
৮৯তম মিনিটে তার গোলেই ব্যবধান দ্বিগুণ করে স্বাগতিকরা। মাঝমাঠ থেকে রাকিটিসের লম্বা করে বাড়ানো বল অনেকটা এগিয়ে নিয়ে কাট ব্যাক করেন ম্যালকম। সরাসরি গড়ানো শটে বল লক্ষ্যে পৌঁছে দেন মেসি। চলতি লিগ মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতার এটি ৩১তম গোল, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা সুয়ারেজের চেয়ে যা ১৩টি বেশি। আর সব প্রতিযোগিতা মিলে মৌসুমে মেসির গোল সংখ্যা দাঁড়ালো ৪১টি। এ নিয়ে টানা দশ মৌসুম চল্লিশোর্ধো গোল করলেন পাঁচ বারের বর্ষসেরা তারকা। শেষ চার ম্যাচে করলেন আট গোল।
মেসির এমন পারফম্যান্সে অবশ্য অবাক নন সতীয় সার্জিও বুসকেটস, ‘বাইরে থেকে দেখলে মেসির পারফরম্যান্স হয়তো অবাক করার মতো। কিন্তু তার এমন পারফরম্যান্স আমাদের অবাক করে না।’ কারণটাও জানালেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার, ‘অনুশীলনে সে যা করে, সেটা ম্যাচে করা আরও কঠিন। কিন্তু আমরা এমনটা দেখে অভ্যস্ত।’ লিগে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জয় পেয়ে খুশি বার্সা কোচ, ‘তারা ছিল রক্ষণাত্মক। আর আমাদের খেলার জন্য খুব বেশি জায়গা দেয়নি।’
দিনের পরের ম্যাচে আলাভেসকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দেয় পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। ফিটনেস সমস্যার সঙ্গে লড়তে থাকা দিয়াগো কস্তা পান গোলের দেখা। জালের দেখা পেয়েছেন সাউল নিগুয়েজ, আলভারো মোরাতা ও থমাস লিমারও।
২৯ ম্যাচে ২১ জয় ও ছয় ড্রয়ে ৬৯ পয়েন্ট বার্সেলোনার। সমান ম্যাচ খেলে ১০ পয়েন্ট পিছনে অ্যাটলেটিকো। এক ম্যাচ কম খেলে তৃতীয় স্থানে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের পয়েন্ট ৫৪।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন