মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত

শিবচর (মাদারীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী স্থানান্তরের সিদ্ধান্তে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারী দালাল চক্র। কার্যকরী এমন সিদ্ধান্তে সরকারের অন্তত ২শ’ থেকে আড়াইশ’ কোটি টাকা লোপাটের হাত থেকে রক্ষা পেল। এরফলে প্রশাসনিক জটিলতাও নিরসন হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। নতুন করে অবৈধ স্থাপনা রোধে নতুন প্রস্তাবিত এলাকায় আনসার মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
জানা যায়, গত বছরের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী’র ভিত্তিপ্রস্তর করেন। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯শ’ ১১ কোটি টাকা। প্রকল্পটির জন্য মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুরে ৬০ একর ও শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবায় ৪৮ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়। জেলা প্রশাসন থেকে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট উপজেলা ভ‚মি অফিসে রেকর্ডি ভূমির মালিকদের দাগ ভিত্তিক তথ্য চাওয়া হয়েছে। এমন তথ্য নাওডোবা ও কুতুবপুরে ছড়িয়ে পড়লে ওই জমির মালিক ও এক শ্রেণির দালাল চক্র ঘরসহ স্থাপনা নির্মাণ ও গাছ লাগানো শুরু করে। প্রতিদিন শত শত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয় ক্ষতিপূরণে বাড়তি টাকার আশায়। এনিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে প্রশাসনের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর গত ২৭ জানুয়ারি ৭২ ঘন্টার সময় বেঁধে দিয়ে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে মাইকিং করে প্রশাসন। ৩১ জানুয়ারি তাঁত বোর্ডের ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। এরপ্রায় দেড় মাস পর ১৩ মার্চ শিবচরের কুতুবপুর উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে প্রশাসন। ৮০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু জাজিরার নাওডোবায় শত শত অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। ফলে সরকারের শত শত কোটি টাকা লোপাটের শঙ্কা দেখা দেয়।
এমন পরিস্থিতিতে গত ২৪ মার্চ পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, সংলগ্ন সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রকল্পটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। শুধুমাত্র শিবচরের কুতুবপুরেই প্রকল্পটির সম্ভাব্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়। গত ২৬ মার্চ চীফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
স্থানীয় জমির আলিম মিয়া বলেন, তাঁতপল্লী হওয়ার কথা শুনে একটি দালাল চক্র অসংখ্য ঘর-বাড়ি নির্মাণ ও গাছপালা লাগিয়েছে। চীফ হুইপের নির্দেশে আমাদের কুতুবপুর এলাকার সকল অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। কিন্তু শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা এলাকার একটি ঘরও ভাঙা হয়নি তাই এখন নাকি শুধুমাত্র কুতুবপুরেই হবে তাঁতপল্লী। এজন্য সরকারকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।
আরেক জমির মালিক কাদের মাদবর বলেন, তাঁতপল্লীর জন্য আমরা হাঁসিমুখে সরকারকে জমি দিবো। কিন্তু সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবী আমরা যেন জমির ন্যায্য মূল্য পাই।
মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সজল নূর বলেন, তাঁতপল্লীর সম্ভাব্য স্থান থেকে আমরা যে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করেছি সেই ঘরগুলো যদি ক্ষতিপূরণের আওতায় আনা লাগতো তাহলে কমপক্ষে একশ’ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের জন্য ব্যয় হতো। এর থেকেও বেশি স্থাপনা জাজিরা অংশে রয়েছে যা সরানো হয়নি। তাই শুধুমাত্র শিবচরেই তাঁতপল্লী নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, দুই উপজেলার জমিতে তাঁতপল্লী নির্মাণের কথা থাকলেও জাজিরা উপজেলায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করায় এখন শুধু শিবচর উপজেলাতেই তাঁতপল্লী নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ইতমধ্যেই এখানে প্রায় ১শ’ ২০ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন করে যাতে সম্ভাব্য এলাকায় অবৈধ স্থাপনা না উঠাতে পারে চক্রটি সেজন্য আনসার মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ।
চীফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী বলেন, আমাদের নির্দেশনায় মাদারীপুরের প্রশাসন অবৈধ সকল স্থাপনা ভেঙে ফেলেছে। কিন্তু শরীয়তপুরের প্রশাসন কোন কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। আর দুই জেলায় এমন একটি প্রকল্প করতে গেলে শুধু এই অনিয়মই নয়, ভবিৎষতে আরো সমস্যা হবে। যেমন আইনশৃংখলা অবনতি হলে নিয়ন্ত্রণে জটিলতা সৃষ্টি হবে। তাই সংসদীয় কমিটি, বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সবাই একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আমরা ‘শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী’ এক উপজেলায় করবো। আর এ জন্য মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করি আগামী দুই মাসের মধ্যেই আমরা কাজ শুরু করতে পারবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন