শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

কঠোর শরিয়া আইন চালু হলো ব্রুনাইতে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৩৭ পিএম

ব্রুনাইয়ের শরিয়া আইনে সমকামিতার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড চালু করা হলো বুধবার থেকে৷ আন্তর্জাতিক মহলের তীব্র আপত্তি এবং জাতিসংঘ একে ‘নিষ্ঠুর ও অমানবিক' বললেও দেশটির সুলতান তাঁর অবস্থানে অনড়৷

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুলতানি শাসনতন্ত্রের দেশ ব্রুনাইয়ের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি সেখানকার সুলতান হাসানাল বোলকিয়াহর আমলে এই আইনের কঠোর প্রয়োগ চালু হলো৷ পূর্ব বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এটিই প্রথম দেশ, যেটি সৌদি আরব ও ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের মতো জাতীয় পর্যায়ে শরিয়া পেনাল কোড পুরোপুরিভাবে প্রয়োগ করা শুরু করেছে৷

সুলতানের ভাষণ

শবে মেরাজ উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে ব্রুনাইয়ের সুলতান এই পেনাল কোডের কথা উল্লেখ করেননি৷ তবে ইসলামের কঠোর শিক্ষার কথা বলেছেন৷ ‘‘আমি চাই এদেশে ইসলামের শিক্ষা আরো শক্তিশালী হোক,'' রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ানে দেয়া এক বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন তিনি৷ ‘‘আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে ব্রুনাই দেশটি সবসময় আল্লাহর ইবাদতে নিজেদের উৎসর্গ করেছে,'' যোগ করেন সুলতান৷

প্রায় পাঁচ দশক ধরে ক্ষমতার শিখরে থাকা সুলতান আরো বলেন যে তাঁর দেশ একটি ‘ন্যায্য ও সুখী' দেশ৷

শাস্তির বিধান

এর আগে, ২০১৪ সালে ব্রুনাইতে শরিয়া পেনাল কোড চালু করেন সুলতান বোলকিয়াহ৷ তবে তা সীমাবদ্ধ ছিল জরিমানা কিংবা জেলের বিধান প্রয়োগের মাধ্যমে৷ ব্যভিচার বা শুক্রবারের জুম্মার নামাজে অংশ না নেয়ার জন্য জরিমানা ও জেলের বিধান চালু করা হয়৷

এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকার সংগঠন ‘দ্য ব্রুনাই প্রজেক্ট'-এর কর্মী ম্যাথু উল্ফে বলেন, ‘‘ব্রুনাইতে সমকামের শাস্তি ব্রিটিশ ঔপনেশিবেশিক আমল থেকে৷ সেখানে সমকামের শাস্তি ১০ বছরের জেল৷ তবে আমার জানা মতে, এই আইন কখনো প্রয়োগ করা হয়নি৷''

কিন্তু এখন শরিয়া পেনাল কোডের সবচেয়ে বড় শাস্তি হলো ব্যভিচারী, সমকামী ও ধর্ষকদের বেত্রাঘাত ও পাথর ছুড়ে হত্যা, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার কারণে প্রয়োগ করতে এতদিন দেরি করেছে ব্রুনাই সরকার৷

তেলসমৃদ্ধ ব্রুনাইতে ৪ লাখ ৩০ হাজার মানুষের বাস৷ এদের দুই-তৃতীয়াংশ মুসলিম জনগোষ্ঠী৷ নতুন পেনাল কোডে এমন আইনও আছে, যা মুসলিম ও মুসলিম নন, সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷

আতঙ্কে ব্রুনাইয়ের এলজিবিটিরা

বার্তা সংস্থা এএফপি'কে দেয়া সাক্ষাৎকারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩৩ বছর বয়সি ব্রুনাইয়ের এক বাসিন্দা বলেন, নতুন আইনগুলো ‘অন্যায্য, নিষ্ঠুর ও অগ্রহণযোগ্য'৷ ‘‘এই আইন আমার সুখ ও স্বাধীনতা কেড়ে নিল এবং আমাকে হতাশায় ডুবিয়ে দিল,'' এএফপি'কে বলেন তিনি৷

গত বছর ব্রুনাই থেকে ক্যানাডায় পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন জুলহেলমি বিন মোহামাদ৷ তিনি একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী৷ এএফপি'কে তিনি বলেন যে, দেশটির এলজিবিটি সম্প্রদায় এমনিতেই গোপন জীবনযাপন করেন৷ তার ওপর এই আইনে তাঁরা এখন খুবই ভীত৷ ‘‘কেউ কেউ খুবই আতঙ্কিত এবং তাঁরা বিপরীতকামী নন, এমনটি প্রকাশ হবার আগেই দেশ থেকে পালিয়ে যেতে চান,'' বলেন ১৯ বছর বয়সি এই নারী৷

আন্তর্জাতিক মহলের শঙ্কা

আন্তর্জাতিক মহল এই শাস্তির বিধান নিয়ে তীব্র শঙ্কা জানিয়েছে৷ জাতিসংঘ একে ‘নিষ্ঠুর ও অমানবিক' বলেছে৷ মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন বলেছেন, ‘‘এই শাস্তির বিধান ‘বর্বর ও প্রাচীন', এবং এটি এমন কিছু কাজের জন্য, যা অপরাধ নয়৷''

ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে নতুন অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি সাজায় ‘নির্যাতনের মাত্রা, নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতা' নিয়ে তীব্র শঙ্কা প্রকাশ করেছে৷

এছাড়া বিখ্যাত অভিনেতা জর্জ ক্লুনি ও পপস্টার এলটন জনের মতো তারকারাও তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে এর বিরুদ্ধে সবাইকে দাঁড়াবার আহ্বান জানিয়েছেন৷

মানবাধিকার কর্মী উল্ফে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার মনে হয় না, ব্রুনাইয়ের জনগণ এই আইন চালুর ব্যাপারে কোনো চাপ দিয়েছে, এবং সরকারও এ ব্যাপারে জনগণের সঙ্গে আলোচনা করেনি৷ অবশ্যই সেখানে অনেক মানুষ এই আইন ও তার প্রয়োগ নিয়ে উৎকন্ঠায় আছেন৷ তাই কেন এই আইনের ব্যাপারে সরকার আগ্রহী হয়ে উঠল তা পরিষ্কার নয়৷''

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন