শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সবার মধ্যে মিথির স্মৃতিটুকু থাক

মো. মনসুর আলী, আদমদীঘি (বগুড়া) থেকে | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর বনানী এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে যারা নিহত হয়েছেন তাদের একজন হলেন বগুড়ার আদমদীঘির তানজিলা মৌলি মিথি। ঘটনার পর থেকে তার পরিবারে শোকের কান্না থামছে না। একমাত্র মেয়ের মৃত্যুর শোকে তার মা-বাবা পাথর হয়ে গেছেন।
মিথির মা-বাবা জানান, মেয়েটি গত মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বাড়িতে এসে একটি আনন্দঘনো অনুষ্ঠানে যোগদানের কথা বলেছিল। সে তার কথা ঠিকই রেখেছে। অনুষ্ঠানের নির্দিষ্ট দিনের আগেই মিথি বাড়িতে এসেছে। আগে যতবার ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছিল তার সঙ্গে এবারের কোনো মিল নেই। পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখা ছাড়া তার কোনো কাজ ছিল না। আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ-খবর নিতে ছুটে যেত এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে। চোখের পানি মুছতে মুছতে মা-বাবা বললেন, মিথি ঠিকই বাড়িতে ফিরেছে। তবে একেবারে নিথর দেহে। লাম আসার পর আনন্দের পরির্বতে বাড়িতে চলে শোক আর কান্না। একমাত্র মেয়ের মৃত্যুশোকে পাথর হয়ে গেছে মা-বাবার মন। বাবা অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান মাসুদ স্বাভাবিকভাবে বগুড়ার আদালতে ফিরলেও কথা বলছেন খুব কম। মা ইয়াছনি বেগম ভুলতে পারছেন না মেয়ের স্মৃতিগুলো। একমাত্র মেয়ের শয়ন ঘরে তার ব্যবহারের কাপড়, বই পুস্তক আর শখের জিনিসপত্র আগের মতোই সাজানো রয়েছে। ঘরের ভেতরের দিকে চোখ গেলেই মা-বাবা কাঁদেন। তাদেরকে কেউই মেয়ের শোক ভুলানোর কথা বলতে পারছেন না। মা-বাবার পাশাপশি তার বন্ধু-বান্ধবী এবং সহপাটি শিক্ষার্থীরাও অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না।
অকালে এভাবে মিথির চলে যাওয়া কেউই মেনে নিতে পারছেন না। ‘কোথায় গেলিরে ফিরে আয়না বোন’। এমন মন্তব্য করে ফেসবুকে লিখছেন তার বান্ধবী এবং সহপাটি শিক্ষার্থীরা। গত সোমবার তার জন্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়ার আয়োজন করা হয়। সান্তাহার শহরসহ নানা স্থানে এখন নিহত মিথি ও তার শোকার্ত পরিবারকে নিয়ে অনেককে আলোচনা ও দোয়া করতে দেখা গেছে। স্বজনদের কথা, মিথি শান্ত স্বভাবের মেধাবী ছাত্রী। ২০১২ সালে সান্তাহার শহীদ আহসানুল হক ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে পড়াশোনার জন্য ঢাকায় যান। বর্তমান ঢাকার এশিয়ান ইউনিভাসির্টিতে বিবিএ ৫১ ব্যাচের শিক্ষর্থী ছিলেন। এফ আর টাওয়াওে আগুন লাগার মাত্র ৮ মাস আগে মিথির বিয়ে হয় কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায়। স্বামী রায়হানুল ইসলাম ইমন বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলায় চাকরি করেন।
বিয়ের পর থেকে মিথি স্বামীর সঙ্গে ঢাকার মিরপুরে বসবাস করতেন। তিনি নিজেও গ্রামীণ ফোনের কাষ্টমার কেয়ারে চাকরি করতেন। চলতি বছরের শুরুতে সে চাকরি ছেড়ে ট্যুরিজাম কোম্পানীতে যোগদান করেন। বনানীর এফ আর টাওয়ারের ১০ তালায় প্রতিদিন অফিস করতেন। ট্রাভেলিং ও অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ ছিল মিথির। মৃত্যুর মাত্র কয়েক দিন আগে নেপাল ঘুরে এসেছেন। নেপাল এয়ারলাইন্সে নতুন চাকরির অফার পান।
গত ২ এপ্রিল বাড়িতে এসে এক অনুষ্ঠানে যোগদান ও মা-বাবার সাথে দেখা করেই মিথির নতুন চাকরিতে যোগদানের কথাছিল। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরির পাশাপশি স্বামীর সংসার আর মা-বাবাকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে থাকার। কিন্তু নতুন চাকরিতে যোগদান ও স্বামীর সংসার করার স্বপ্ন পূরণ হলো না। এফ আর টাওয়ারের আগুনে সেই স্বপ্ন অঙ্গার হয়ে গাছে। মা-বাবা ও ৮ মাসের সংসার, আত্মীয়-স্বজন সবার জন্য মিথি রেখে গেছেন নিজের স্মৃতিটুকু।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
বরুন জামাল ৫ এপ্রিল, ২০১৯, ৪:১৪ এএম says : 0
আসুন আমরা তার জন্য দোয়া করি।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন