জয়পুরহাট জেলা সংবাদদাতা
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। পোস্টার টাঙ্গানো নিয়ে আ.লীগ ও বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর নেতাকর্মীদের মধ্যে মারপিট, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাকে ঘিরে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি ঘরানার নেতাকর্মীদের দাবি, আ.লীগ ও বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও উভয়পক্ষে মামলা হলেও এ নিয়ে প্রচারণায় তাদের কোন সমস্যা নেই। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুস সোবহান আ.লীগ প্রার্থীর নেতাকর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে বগুড়ার হাসপাতালে থাকায় এবং তার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় মাঠে তাদের প্রচার-প্রচারণায়ও ভাটা পড়েছে। জানা গেছে, জিন্দারপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আ.লীগ নেতা আব্দুস সোবহানকে বাদ দিয়ে দল এবার মনোনয়ন দিয়েছেন জিয়াউর রহমান জিয়া নামের এক যুবলীগ নেতাকে। দলের এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে আব্দুস সোবহান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে নামেন। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ইউনিয়নের ইটাইল গ্রামে পোস্টার টাঙ্গানো নিয়ে সোবহান এবং জিয়ার কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এতে জিয়ার এক কর্মী আহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে সোবহানের নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘরে তারা হামলা করে। তারই জের এবং জিয়ার নির্বাচনী অফিসের সামনে থাকা নৌকা প্রতীক পোড়ানোর অভিযোগ তুলে জিয়ার লোকজন ওই ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র মোলামগাড়ি বাজারে সোবহানের নিজস্ব অফিস ঘর ছাড়াও নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এ সময় গণসংযোগ করে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে মোলামগাড়ি বাজারের বাড়িতে ফেরার সময় জিয়ার বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সোবহানকে ধরে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা দিয়ে বেদম মারপিটের পর তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এতে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সেখান থেকে কালাই হয়ে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল হাসপাতাল কলেজে তাকে ভর্তি করা হয়। তার ডান হাত ভেঙে যায়। মাথা ও কপালে বেশ কয়েকটি সেলাই পড়ে। দুই হাঁটুর আঘাতও গুরুতর। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আহত প্রার্থী সোবহানের স্ত্রী ফিরদৌসী খানাম বাদী হয়ে গতকাল শনিবার কালাই থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২০-২৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। একইভাবে আ.লীগ প্রার্থী জিয়াউর রহমানের বড় ভাই জিন্দারপুর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে নৌকা পোড়ানোর অভিযোগে একইদিন কালাই থানায় মামলা করেন। যেখানে সোবহানের ৫৬ জন কর্মীর নামসহ অজ্ঞাত ৮০-৯০ জনকে আসামী করা হয়। মামলার পর কালাই থানা পুলিশ সোবহানের ভাতিজা সাইদুর রহমান ও তার কর্মী ইটাইল গ্রামের বাদেশ আলীকে গ্রেফতার করে জেলা কারাগারে পাঠিয়েছেন। ঘটনার দিন রাতে পুলিশ জিয়ার দুই কর্মীকে আটক করলেও পরে তারা আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সোবহানের ভাই আব্দুল ওহাব বলেন, হামলার পর চিকিৎসার জন্য একদিকে আহত প্রার্থীকে নিয়ে ব্যস্ততা অন্যদিকে মামলায় গ্রেফতারের আতঙ্ক থাকায় এখন তাদের হাসপাতাল আর আদালতে দৌড়াদৌড়ি করতেই সময় চলে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোবহানের কয়েকজন সমর্থক জানান, হামলার ওই ঘটনায় উভয় পক্ষে মামলা হলেও পুলিশ বেছে বেছে শুধু তাদের নেতাকর্মীদের ধাওয়া করছে। আতঙ্কে নেতাকর্মীরা বাড়ি থাকতে পারছে না। অন্যদিকে জিয়ার নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের কিছুই বলছে না। ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী তাজমিলুর রহমান জানান, শুরু থেকে নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ ভাল থাকলেও বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুস সোবহান প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার পর তার প্রচারণায় কিছুটা ভাটা পড়েছে। বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুস সবুর বলেন, আ.লীগ ও তাদের বিদ্রোহী চেয়ারমান প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ ও মামলার পর বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রচারণা মাঠে কিছুটা কম লক্ষ্য করা গেছে। তবে এ নিয়ে তাদের প্রচারণায় কোন সমস্যা হয়নি। যে কোন সংঘাত মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোলামগাড়ি বাজারে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে তিনি জানান। স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সোবহানের স্ত্রী ফিরদৌসী খানাম বলেন, পরাজয় নিশ্চিত জেনে নৌকার সমর্থকরা তার স্বামীকে মারপিট করে গুরুতর আহত করে উল্টো তার নেতাকর্মীদের নামে নৌকা পোড়ানোর মিথ্যা মামলা দিয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও যুবলীগ নেতা জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন নৌকা প্রতীক সহ বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি পুড়িয়েছে। পোস্টার টানাতে বাধা দিয়ে তার কর্মী-সমর্থকদের মারপিট করে আহত করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তাছাড়া ওই ঘটনায় বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষ থেকে তার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে। কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, জিন্দারপুর ইউনিয়নে দু’জন চেয়ারমান প্রার্থীর মধ্যে মারামারির ঘটনায় উভয়পক্ষে মামলা হওয়ার পর মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। উভয়পক্ষের দায়ের করা মামলার আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। প্রসঙ্গত পঞ্চম ধাপে আগামী ২৮ মে কালাই উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নসহ পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন