বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

মাদারীপুরে এক মাসে পাঁচ খুন

চলছে বাড়িঘর লুটপাট অগ্নিসংযোগ : নিঃস্ব ২০ পরিবার

মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

মাদারীপুরে একের পর এক খুন হচ্ছে। এক মাসে খুনের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৫টি। এরই জের ধরে প্রতিদিনই ঘটছে কোন না কোন বাড়ীঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নি-সংযোগের ঘটনা। এরমধ্যে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ব্রা²ন্দী এলাকায় কমপক্ষে ২০ বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়েছে। গ্রেফতার ভয়ে এসব এলাকায় এখনো পুরুষ শূন্য। এতে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে বলে এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজ মনে করেন।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ মার্চ শনিবার রাতে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের শিমুলতলা এলাকার মোয়াজ্জেম মোল্লা নামে এক ব্যক্তির খুন হয়। এর জের ধরে জনমানবশূন্য হয়ে পড়েছে ঝাউদির আশপাশের এলাকা। এই সুযোগে নিরীহ লোকজনের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগে করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এরমধ্যে ঝাউদির ইউনিয়নের ব্রা²ন্দী এলাকার সিকিম আলি চৌকিদারের বাড়িতে ১ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের মাথা গোজার ঠাঁই নেই। আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে পুরো পরিবার। পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে বিলাপ করছে করছে ক্ষতিগ্রস্থ আছিয়া বেগম।
ক্ষতিগ্রস্ত আছিয়া বেগম বলেন, ‘আমরা মাইর কাইজ্জার মধ্যে নাই, এরপরেও আমাদের বাড়ি ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। আগে এই এলাকার হারুন মোল্লার সাথে একটু শত্রæতা ছিলো। সেই শত্রæতার কারণে আমাদের ঘরে আগুন দিছে। আমরা জড়িত না, তাই আমাদের কেউ মামলা আসামীও না। আগে আমাদের অনেক কিছু ছিলো, এখন পরের ঘরে রাতে থাকতে হয়। আমরা এর বিচার চাই।’
একই চিত্র কুলপদ্ধি, ঝাউদি, ব্রা²ন্দীর বিভিন্ন এলাকায়। এরমধ্যে ব্রা²ন্দী এলাকার ছালাম মোল্লা, হায়দার মোল্লা, হায়দার হাওলাদার, করম বেপারী, সোবাহান সর্দার, রাজ্জাক বেপারী, তোতা বেপারী, মফেজ সর্দার, শহিদ সর্দারসহ কমপক্ষে ২০টি বাড়িতে লুটপাট ও আগুন দিয়ে পুুড়িয়ে দেয়া হয়। নিঃস্ব এসব পরিবার এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্থ ছালাম মোল্লা জানান, হত্যার ঘটনায় যারা জড়িত তাদের শাস্তি দেয়া হোক, এটা আমরাও চাই। তার জন্য আমাদের কেন বাড়ীঘর ভাঙচুর লুটপাট করা হবে। আমরা ঘটনার সঠিক বিচার চাই।
অন্যদিকে গত ২৭ ফেব্রæয়ারি বুধবার সকালে মাদারীপুর শহরে আসার পথে বাংলাবাজার এলাকায় সাহেব আলীকে (৫৫) কুপিয়ে গুরুতরভাবে জখম করা হলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান। এই ঘটনার পর থেকে উত্তেজিত জনতা এলাকার অর্ধশত বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও একাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
গত ১০ মার্চ শিবচর উপজেলার দ্বিতীয়াখন্ড ইউনিয়নের মৃধাকান্দি গ্রামের আলেম মৃধার সাথে একই বাড়ির জলিল মৃধা গং-এর দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধের জের ধরে রোববার সকাল ১০টার দিকে দু‘পক্ষের নারী-পুরুষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দু‘পক্ষের ধ্বস্তাধ্বস্তির সময় প্রতিপক্ষের ধাক্কায় আলেম মৃধার স্ত্রী সর্ব বেগম গাছের শিকড়ের উপর আছড়ে পড়েন। পরিবারের লোকজন তাকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এতেও থানায় মামলা হয়েছে।
গত ২৫ মার্চ মাদারীপুর শহরের আমিরাবাগ এলাকার ভূঁইয়া কমিউনিটি সেন্টারের পিছনে লিয়াকত আলীর নির্মাণাধীন ভবনের দোতলা থেকে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি লিমন মজুমদারের লাশ উদ্ধার করা হয়। এতে লিমনের বাবা ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এই হত্যার বিচারের দাবীতেও চলছে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ।
এছাড়া হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর চারদিন আহত থাকার পরে ১ এপ্রিল সোমবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীণ অবস্থায় রাসেল খান (২৫) নামের এক যুবক মারা গেছেন। এসব ঘটনায় আতঙ্কিত মাদারীপুরবাসী। তারা দোষীদের সুস্থ্য তদন্ত করে বিচার দাবী করেন।
এসব হত্যা পরবর্তী আইন-শৃঙ্খলার বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার জানান, হত্যার পর প্রাথমিক কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু এরপরে যদি এসব ঘটনার জেরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে দোষীদের ছাড় দেয়া হবে না। এরই মধ্যে কয়েকজন বিশৃঙ্খলাকারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে বাকিদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন