নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার হাওরাঞ্চলে তেতুলিয়া-গাগলাজুর জিসি সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যেই সড়কের বেহাল দশা। কাজের মান নিয়ে এলাকাবাসীদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
হাওরাঞ্চল ঘুরে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, মোহনগঞ্জ-গাগলাজুর ১৬ কিলোমিটার জিসি সড়কের মধ্যে তেতুলিয়া থেকে গাগলাজুর পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার রাস্তা ডুবন্ত সড়ক। সড়কটি পাঁকাকরণ ও সংস্কারের জোর দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের পাকাকরণ ও সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। জিসি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গত বছর থেকে সড়কটির পাঁকাকরণ ও সংস্কার কাজ শুরু হয়ে এক মাস আগে এর কাজ শেষ হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যেই সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙেগিয়ে ছোট বড় অসংখ্য খানা খন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
তেতুলিয়া থেকে গাগলাজুর পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়কে যানবাহন চলাচল একেবারে অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কটি বর্তমানে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় নির্মিত সড়কটি জনগণের কোন কাজেই আসছে না। ক্ষুব্ধ এলাকার জন প্রতিনিধিরা বারবার নি¤œমানের কাজের ব্যাপারে বাধা দিয়ে কোনো প্রতিকার হয়নি বলে জানিয়েছেন গাগলাজুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব। ঢালাই করা কংক্রিট থেকে বালু, পাথর ও রড বেরিয়ে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ সড়কে ছোট বড় যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে গর্ত ও বেড়িয়ে আসা রডে আটকে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। এতে এ সড়কে চলাচলরত যানবাহন ও পথচারীদের জান মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।
গাগলাজুর গ্রামের কৃষক দীন ইসলাম, সবুজ মিয়া ও জাহেদ মিয়াসহ ভুক্তভোগীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইলেও যারা মাথার ঘাঁম পায়ে ফেলে, রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে দেশবাসীর খাদ্যের চাহিদার জোগান দেয়, সেই তৃণমূল পর্যায়ের প্রান্তিক কৃষকরা চিরকালই অবহেলিত। তাদের ভাগ্য ও জীবনমান উন্নয়নে কোন সরকারই তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
তবে উন্নয়ন হচ্ছে তাদের, যারা সরকারি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে খাদ্য জোগানদান কারী কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষকে ঠকিয়ে দিনে দিনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। হাওরাঞ্চলের ফসল রক্ষা বাঁধ, সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের নাম করে যারা লুটপাট করছে প্রতিনিয়ত। আর কৃষকরা দিনরাত খেটেও তাদের উৎপাদিত ফসল অকাল বন্যা ও সড়কের অভাবে ঠিক মতো ঘরে তুলতে পারছে না। হাড় ভাঙা পরিশ্রমের ফসল স্বল্প খরচে ঘরে তুলবো, এটা কোন সরকারই মনে হয় পছন্দ করে না। বছরের পর বছর ধরে সড়কের কাজই চলে। তারপরও সেই সড়ক ব্যবহার করে কৃষকরা ঠিকটাক মতো ফসল ঘরে তুলতে পারছে না। এ দায়বার কে নেবে?
তারা আরো বলেন, সড়কের অভাবে হাওরের ধান হাওরেই পানির দরে বিক্রি করতে হয় সুবিধাভোগীদের কাছে। অতিরিক্ত ক্যারিং খরচের জন্য সড়ক দিয়ে বাড়ি পর্যন্ত নেয়া যায় না। নিলেও খরচ তুলে কৃষকের আর কিছুই থাকে না। হাওরাঞ্চলের কৃষকদের এটাই সবচেয়ে বড় দূর্ভাগ্য। প্রতি বছর বাঁধের কাজে হরিলুটের জন্যও খেসারত দিতে হয় কৃষকদেরই।
ভুক্তভোগী স্থানীয় জনগণ, ফসল রক্ষা বাঁধ এবং সড়ক নির্মাণ কাজের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িতদের তদন্ত পূর্বক দায়ীদের খোঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে এলজিইডির মোহনগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল আলমের সাথে গতকাল শুক্রবার বিকাল চারটায় ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এ কথা সত্য নয়। আমি ময়মনসিংহ মিটিংয়ে আছি পরে কথা বলেন এই বলে ফোন কেটে দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন