রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

শ্রমিক নিয়োগকে কেন্দ্র করে বড়পুকুরিয়া রণক্ষেত্র সংসদ সদস্যের ভাইসহ ৮ জন আহত

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৯, ৯:০০ পিএম

আউট সোসিং নিয়োগের দাবীতে আন্দোলনকারী বড়পুকুরিয়া তাপ বিদুৎ কেদ্রের তৃতীয় ইউনিটের উন্নয়ন কাজের শ্রমিকদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের সাথে সংর্ঘষে রণক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদুৎ কেন্দ্রসহ আশপাশের এলাকা। সংঘর্ষে সংসদ সদস্যের ছোট ভাই খাজা মঈনুদ্দিন ও ফুলবাড়ী ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ৫ জন আহত হয়েছে। এঘটনায় তাপ বিদুৎ কেন্দ্রের প্রধান ফটকের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসীন্দা ও প্রত্যক্ষ দর্শিরা বলেন সোমবার সকাল ১০ টা থেকে তাপ বিদুৎ কেন্দ্রের প্রধান ফটকের সামনে সমবেত হয়ে আউট সোসিং নিয়োগের দাবীতে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদুৎ কেদ্রের তৃতীয় ইউনিটের উন্নয়ন কাজের শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে, কিন্তু বেলা ৩টার সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের ছোট ভাই খাজা মঈনুদ্দিনের নেতৃত্বে যুবলীগের নেতা-কর্মিরা শ্রমিকদের আন্দোলনে বাধা দেয়। এতে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষে খাজা মঈনুদ্দিনসহ দুই যুবলীগ নেতা,বড়পুকুরিয়া এলাকার আবুল কালামের ছেলে সুমন ও যুবলীগের কর্মি মুন্না আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে খাজা মঈনুদ্দিনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও যুবলীগ নেতা সুমন, মুন্না এবং একই ঘটনায় আহত শ্রমিক নেতার ভাই জলিলকে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় । এদিকে স্থানীয় সাংসদের ভাই খাজা মঈনুদ্দিন আহত হওয়ার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে পার্বতীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেনের নেতৃত্বে এক দল আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মি বড়পুকুরিয়া বাজারে এসে আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর হামলা করে,এসময় আন্দোলনরত শ্রমিকদের পক্ষে স্থানীয় গ্রামবাসীরা যোগ দিলে উভয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ফুলবাড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাছান আহত হয়। এঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে এক এনএসআই কর্মকর্তা আলিফ উদ্দিন ও সাংবাদিক দৈনিক করতোয়ার পার্বতীপুর উপজেলা প্রতিনিধি মঞ্জুরুল আলম, পল্লিটিভি প্রতিনিধি আসাদ, যুবলীগ কর্মিদের হাতে লাঞ্চিত হয় এবং ওই সাংবাদিকদের ছবি তোলা মোবাইল ফোন ভাংচুর করে।

আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, তাপ বিদুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটে উন্নয়ন শ্রমিকদের তৃতীয় ইউনিটের উন্নয়ন কাজ শেষে উৎপাদন কাজে নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাদেরকে উৎপাদন কাজে নিয়োগ না দিয়ে তাপ বিদুৎ কর্তৃপক্ষ বহিরাগত শ্রমিক এনে নিয়োগ দেয়ার চেষ্ঠা করে। তারই প্রতিবাদে ও উন্নয়ন শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়ার দাবীতে গত ২০১৭ সাল থেকে তারা এই আন্দোলন করে আসছেন। তাদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে দিনাজপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসকের মধ্যস্ততায় তৃতীয় পক্ষের অধিনে ১৫৪ জন শ্রমিককে নিয়োগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের সমঝোতা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সকল প্রস্তুতি সম্পুর্ন হওয়ার পর সোমবার ২০ জন শ্রমিক নিয়োগের কথা ছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে দিনাজপুর-৫(পার্বতীপুর-ফুলবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের ছোট ভাই ফুলবাড়ী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি খাজা মঈনুদ্দিন ছাত্রলীগ নেতা মুন্না ও সুমনের নেতৃত্বে বহিরাগত শ্রমিক নিয়োগের পাঁয়তারা শুরু করে। এ খবর জানতে পেরে সোমবার সকাল ১০ টা থেকে তারা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান ফটকের সামনে সমবেত হয়ে আউট সোসিং নিয়োগের দাবীতে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদুৎ কেদ্রের তৃতীয় ইউনিটের উন্নয়ন কাজের শ্রমিকদের আন্দোলন শুরু করে।

আন্দোলন চলাকালে বেলা ৩ টার সময় সংসদ সদস্য সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের ছোট ভাই ফুলবাড়ী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি খাজা মঈনুদ্দিন,ছাত্রলীগ নেতা মুন্না ও সুমনসহ কতিপয় নেতা স্থানীয় কিছু লোকজন সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

সংর্ঘষে দু’পক্ষের ৫ জন আহত হয়েছে। আহতরা হলেন- সংসদ সদস্য সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের ছোট ভাই ফুলবাড়ী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি খাজা মঈনুদ্দিন ( ৪৫), ছাত্রলীগ নেতা মুন্না( ৩০) ও সুমন(৩৫),ফুলবাড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মেহেদী হাসান ও একজন শ্রমিক । এদের মধ্যে খাজা মঈনুদ্দিন ও সুমন রংপুরে একটি বে সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। আহত মুন্না ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ ভর্তি রয়েছে।

বড়পুকুরিয়া শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সভাপতি হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ বলেন,আন্দোলনরত শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবী মেনে নিয়ে জেলা প্রশাসকসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এই আন্দোলনরত তৃতীয় পক্ষের অধিনে নিয়োগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও খাজা মঈনুদ্দিনের প্রভাবে শ্রমিকদের নিয়োগ না দিয়ে তাপ বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তালবাহনা করছে। আমরা শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের সময় শ্রমিকদের উপর হামলা করা হয়েছে। সকল শ্রমিক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত তারা এই অবোরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে এবং দাবী না মানলে রাজপথ রেলপথ অবোরধ কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও জানান।

এ ব্যাপরে জানতে চাইলে পার্বতীপুর মডেল থানার ওসি মোঃ মোকলেছুর রহমান জানান, বড়পুকুরিয়া তাপ বিদুৎ কেন্দ্রে ২০ জন শ্রমিক নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংর্ঘষ হয়েছে। উভয় পক্ষ তাদের লোক নিয়োগ দেয়ার দাবী করে আসছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
এদিকে এই বিষয়ে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাকিম বলেন, বিদ্যুৎ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃতীয় পক্ষের অধিনে জনবল নিয়োগের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে,কয়েক দিনের মধ্যে নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করা হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন