শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হতাশা মুমিনের চরিত্র নয়-২

মাওলানা শিব্বীর আহমদ | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম | আপডেট : ১২:১৯ এএম, ৯ এপ্রিল, ২০১৯

এক আল্লাহকে যারা বিশ্বাস করে, যারা মুমিন, যারা সঠিক পথের অনুসারী; তারা তো কিছুতেই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে না। হযরত ইবরাহিম (আ.) ও হযরত ইয়াকুব (আ.) ছিলেন পার্থিব বিপদের শিকার। একজন সন্তানহীন অবস্থায় পুরো জীবন কাটিয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন, আরেকজন এক সন্তানের শোকেই যখন পাথর হওয়ার অবস্থা, তখন হারালেন আরেক সন্তান! তবুও তাঁরা আল্লাহর অসীম কুদরতের কাছে আশাবাদী ছিলেন। হতাশা তাদের স্পর্শ করতে পারেনি। পরিশেষে তাঁরা উভয়েই এই পৃথিবীতে থেকেই এর ফল ভোগ করে গেছেন। মুমিনের শান এমনই হওয়া উচিত। যতকাল বেঁচে থাকবে, আল্লাহর রহমতের কাছে আশাবাদী হয়েই সে বেঁচে থাকবে। সাধ্যে যতটুকু কুলায়, চেষ্টা করে যাবে। একবারের চেষ্টা ব্যর্থ হলে আবার করবে। বারবার করবে। কবি যেমনটি বলেছেন : ‘পারিব না এ কথাটি বলিও না আর/ একবার না পারিলে দেখ শতবার।’
হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম দুই সন্তান হারিয়ে চরম সঙ্কটের মুহূর্তেও ছেলেদের বলছেন, তোমরা গিয়ে ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সন্ধান করো! অর্থাৎ তিনি নিজেও আশাবাদী, আশা পোষণ করছেন। অন্যদের মনেও আশার সঞ্চার করতে চাচ্ছেন।
বিখ্যাত সাহাবি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, ‘হাবরু হাযিহিল উম্মাহ’- এই উম্মতের বিদ্বান ব্যক্তি। তিনি বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে শিরক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়া।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক : হাদিস ১৯৭০১)।
বিপদে পড়লে মানুষ যে কিভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এর কিছু বর্ণনা পবিত্র কুরআনেও আছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি মানুষকে যখন কোনো নিয়ামত দিই তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও পাশ কাটিয়ে যায়। আর যদি কোনো অনিষ্ট তাকে স্পর্শ করে তাহলে সে সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়ে!’ (সূরা বনী ইসরাঈল : ৮৩)।
নানা কারণেই মানুষ হতাশায় আক্রান্ত হতে পারে। বিপদে যদি কেউ ধৈর্য ধারণ করতে না পারে তখন দেখা যায়- সামান্য সঙ্কটেই সে ভেঙে পড়ে। কখনো হতাশাগ্রস্তদের সঙ্গও আরেকজনকে হতাশ করে দেয়। আরবীতে প্রবাদ আছে- ‘মানুষ তার বন্ধুর আদর্শই গ্রহণ করে থাকে।’ এটাই স্বাভাবিকতা। তাই কেউ যদি হতাশাগ্রস্তদের সঙ্গে ওঠাবসা করে, তাহলে এই হতাশায় একসময় সেও আক্রান্ত হবেই। কখনো আবার প্রত্যাশার পাহাড়ও মানুষকে হতাশ করে। নিজের জীবন নিয়ে কিংবা জীবনের কোনো দিক নিয়ে যখন কেউ নিজ সামর্থ্যরে বিবেচনা না করে অনেক উঁচু স্বপ্ন দেখতে থাকে, এর পরিণতিতেও সে হতাশাগ্রস্ত হতে পারে। একের পর এক যখন আশাভঙ্গ হতে থাকে, তখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে সে। আবার এমনও হয়- আকস্মিক কোনো বিপদ কাউকে এতটাই ঝাঁকুনি দেয়, যার ফলে সে আর মাথা সোজা করে সামনে এগিয়ে চলার হিম্মত করতে পারে না। পরিণামে কেবলই হতাশা।
হতাশা যে কেবল পার্থিব বিষয়াদিকেই আক্রান্ত করে এমন নয়, দ্বীনি ও পরকালীন বিষয়েও মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়। কারও যখন পাপের পরিমাণ বেশি থাকে, সারাদিন যখন কেউ বড় বড় পাপে ডুবে থাকে, যখন নিজেও পাপ করে, অন্যকেও পাপের দিকে ডাকে। মোটকথা, দিনের পর দিন মাসের পর মাস ধরে কেউ যখন কেবলই পাপই করে চলে, এমতাবস্থায় কেউ যদি দয়াময় প্রভুকে স্মরণ করতে চায়, তখন একরাশ হতাশা তাকে ঘিরে ধরতে পারে- আমার যে এত এত পাপ, আমারও কি এখান থেকে মুক্তি সম্ভব? গোনাহের পঙ্কিলতা থেকে পরিচ্ছন্ন হওয়ার সম্ভাবনা যতটুকু থাকে, তাও এ হতাশার আঘাতে শেষ হয়ে যায়। আবার এমন গোনাহগার কাউকে দেখে দ্বীনদার লোকেরাও অনেক সময় হতাশ হয়ে পড়ে- একে মনে হয় আর ভালো পথে আনা যাবে না! কথা কী, এ উভয় হতাশাই আল্লাহ তায়ালার রহমত সম্পর্কে অজ্ঞতার ফল। আল্লাহর রহমত যখন ভাগ্যে জোটে, তখন তো ইসলামের চরম দুশমনও মুহূর্তের ব্যবধানে অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়। একটি উদাহরণ দিই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মোঃ রিমন ইসলাম ৯ এপ্রিল, ২০১৯, ২:৩৪ এএম says : 0
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে অধিক উত্তম এবং আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। আর সবকিছুতেই কল্যাণ রয়েছে। সুতরাং যাতে তোমার কল্যাণ রয়েছে তা অর্জনে আগ্রহী হও এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা কর। দুর্বলতা প্রদর্শন করো না। তবে যদি তোমার কোন কাজে কিছু ক্ষতি সাধিত হয়, তখন তুমি এভাবে বলো না যে, “যদি আমি কাজটি এভাবে করতাম তা হলে আমার এই এই হত।” বরং বল, “আল্লাহ এটাই তকদীরে রেখেছিলেন। আর তিনি যা চান তা-ই করেন।” কেননা ‘যদি’ শব্দটি শয়তানের কাজের পথকে উন্মুক্ত করে দেয়।” (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৯৮)।
Total Reply(0)
নবীরুদ্দিন ৯ এপ্রিল, ২০১৯, ২:৩৫ এএম says : 0
ঈমানদারগণ ঈমানের দিক দিয়ে সমান নয়। তাদের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। তবে শক্তিশালী মুমিনগণ অধিক উত্তম এবং আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। কিন্তু দুর্বল মুমিনরাও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত নয়।
Total Reply(0)
সরলপথ ৯ এপ্রিল, ২০১৯, ২:৩৫ এএম says : 0
নিম্নে একজন শক্তিশালী মুমিনের ১৪টি অনন্য গুণাবলী সংক্ষেপে আলোচনা করা হল: ১. সুদৃঢ় ঈমান ২. দ্বীনের ইলম অর্জন করা ৩. সবর বা ধৈর্য ধারণ ৪. রাগ নিয়ন্ত্রন ৫. উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকা ৬. উদ্যমী হওয়া ৭. নিজের সংশোধনের পাশাপাশি অন্যের সংশোধনের প্রচেষ্টা থাকা ৮. মানুষের উপকার করা ৯. সুস্বাস্থ্য ১০. মজবুত চিন্তাভাবনা ও সুনিপুণ পরিকল্পনা ১১. সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে নির্ভীক ১২. আত্মমর্যাদা ওপরিচ্ছন্ন অন্তর ১৩. শক্তিশালী মুমিনের হৃদয় হয় ভালবাসা, দয়া ও মায়া–মমতায় পূর্ণ। ১৪. ভুল স্বীকার
Total Reply(0)
মিরাজ আলী ৯ এপ্রিল, ২০১৯, ২:৩৬ এএম says : 0
শক্তিশালী মুমিনদের অন্যতম গুণ হল, তারা হন প্রচণ্ড ধৈর্যশীল। প্রকৃতপক্ষে দৃঢ় সংকল্প আর মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরাই কেবল এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন: “বিপদাপদে ধৈর্যধারণ কর। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের বিষয়।” (সূরা লোকমান: ১৭)
Total Reply(0)
ইসলাম আমার ভালোবাসা ৯ এপ্রিল, ২০১৯, ২:৩৬ এএম says : 0
মহান রবের নিকট দুআ করি, তিনি যেন আমাদেরকে সে ঈমান অর্জনের তাওফিক দান করেন যার উপর তিনি সন্তুষ্ট। তিনি যেন আমাদের দুর্বলতাগুলো শক্তিতে রূপান্তরিত করে দেন, অভাবগুলো মোচন করেন এবং গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশক্তিমান, পরম দয়ালু, দাতা ও ক্ষমাশীল।
Total Reply(0)
Muhammad Samdani Sayem ৯ এপ্রিল, ২০১৯, ৯:৩৬ এএম says : 0
আমাদেরকে সব সময় আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন