শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আজ পবিত্র শবে বরাত

প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫০ পিএম, ২১ মে, ২০১৬

মোঃ আবদুর রহিম : আজ ১৪ শাবান, রোববার দিবাগত রাত, পবিত্র শবে-বরাত। এর অর্থ নিষ্কৃতি। পবিত্র কুরআন হাদিসের অসংখ্য বর্ণনা অনুযায়ী এ রাত অতীব মর্যাদাময় রাত। এ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী তাদের বাণীতে দেশ ও জাতির অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। শবে বরাত উপলক্ষে আগামীকাল সরকারি ছুটির দিন। প্রিন্ট মিডিয়ায় আজ ছুটি থাকবে, কাল সোমবার পত্রিকা প্রকাশ হবে না। এ উপলক্ষে বিভিন্ন মিডিয়া বিশেষ নিবন্ধন প্রকাশ করবে এবং বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। পবিত্র শবে-বরাত, মুসলিম উম্মাহর একটি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ রাত। অতীত এবং বর্তমান সময়ের সকল মুফাসসিরীন ও মুহাদ্দিসীনে কেরাম এ রাতকে এক বাক্যে বরকতময় রাত হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছেন। কারণ, পবিত্র এ রাতের অস্তিত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব পবিত্র কুরআন-হাদিস দ্বারা বহুল প্রমাণিত। শবে-বরাতের রাতে মানুষের বার্ষিক ভাগ্যলিপি লেখা হয় এবং বিগত বছরের আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। এক বছরের হায়াত-মউত-রিজিক, দৌলত-তথা ভাগ্য নির্ধারণ হয়। এই রাতে আল্লাহপাক বান্দার দিকে বিশেষ রহমতের নজরে তাকান। এই রাতে ৭০ হাজার ফিরিস্তা নিয়ে জিবরাঈল (আ:) দুনিয়াতে আসেন এবং রহমত বণ্টন করেন। আরবের বনী কালব গোত্রের ৩০ হাজার বকরির পশমের সংখ্যারও অধিক গুণাহগারকে ক্ষমা করা হয় এ রাতে। এ রাতে কবিরা গুনাহ ব্যতীত অন্যান্য গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং তওবা করলে কবিরা গুনাহগারকেও ক্ষমা করা হয়।
হযরত আলী (রা.) নবী করীম (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, যখন শাবানের পনেরো তারিখ হতো তখন তিনি বলতেন, তোমরা এ রাতে এবাদতে জাগ্রত থাকো এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহ দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে নেমে এসে বলেন, আছো কি কোন প্রার্থনাকারী-আমি তার প্রার্থনা কবুল করবো। আছো কি কোনো রিজিক অন্বেষণকারী-আমি তাকে রিজিক দান করবো। আছো কি কোনো রুগ্ন ব্যক্তি-আমি তাকে সুস্থতা দান করবো। এ ধরনের আরো কেউ আছো কিÑ আমি তার প্রয়োজন মিটিয়ে দেবো। এমন করে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ প্রত্যেক গোত্রের নাম ধরে ধরে ডাকতে থাকেন।
মুহাম্মাদ ইবনে আলী (রা.) বর্ণনা করেছেন, এই রাত শবে কদরের পর সর্বোত্তম রাত। এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে নিজ করুণায় ক্ষমা করেন। তিনি আরো বলেছেন, এই রাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করো! কেননা, আল্লাহ তার পবিত্র নামের শপথ করে বলেছেন, তিনি তার কোনো বান্দাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেবেন না, তবে শর্ত হলো ঐ বান্দা পবিত্র এই রাতে যদি কোনো গুণাহ না করে।
এ পবিত্র রাতে এবাদত-বন্দেগির অন্তর্ভুক্ত থাকবে কুরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ, ওয়াজ, জিকির আসকার, কবর জিয়ারত এবং মিলাদ দোয়া ও মোনাজাত। এই রাতে আগামী এক বছরের যাবতীয় বিষয়াদি নির্ধারিত হয় এবং শবে কদরে সংশ্লিষ্ট ফেরেস্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই রাতে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাফাআতের পূর্ণ অধিকার প্রদান করেছেন মহান আল্লাহতায়ালা।
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (রহ.) তাঁর কিতাবের (মুকাশশাফাতুল কুলুব) ৬৪০ পৃষ্ঠায় ইমাম সুবকীর বরাতে উল্লেখ করেন, শবে বরাতের রাতে (এবাদত) সারা বছরের গুনাহ মাফের জন্য বদলা হয়। একইভাবে শবে কদরের রাতের এবাদত জিন্দেগির গুনাহ মাফের বদলা হয়। আর সপ্তাহের গুনাহ মাফের বদলা বা উসিলা হয় প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে।
শবে বরাত সম্পর্কে বিশ্বখ্যাত সুপ্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থসমুহ ছাড়াও তাফসীরে আবী সউদ, বাইযাবী, দুররে মানছূর, তাফসীরে জালালাইন কামালাইন, তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে গরায়িব, রহুল বয়ান, রুহুল মায়ানী, যাদুল মাছীর, তাফসীরে আল মুহাররারুল ওয়াজিয, তাফসীরে মাওয়াহিব, .. হাশিয়ায়ে শিহাব, তাফসীরে ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, তাফসীরে দুররে মাছূন, তাফসীরে কাশশাফ, তাফসীরে দিয়াউল কুরআন, আহকামুল কুরআন, তাফসীরে কাসেমী, তাফসীরে মিযান, তাফসীরে মাওয়ারদী, নূরুল ইরফান, তাফহীমুল কুরআন ইত্যাদি তাফসীর গ্রন্থে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা ‘লাইলাতুল বরাত’ বা ‘শবে বরাতকে’ বুঝানো হয়েছে।
বিশ্ব সুন্নী আন্দোলনের প্রধান হযরত ইমাম হায়াত বলেছেন, শবে বরাতের উপলক্ষ্য সাধারণ বোধগম্যতার উর্ধেŸ এক অতীব রহস্যময় নিগুঁড় তাৎপর্য্যময় বিষয়, কোরআনুল করীম ও হাদিছ শরীফে বরকতময় রহমতময় এবং আদেশ নির্ধারণী হিসেবে যার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে (ফিহা ইউফরাকু কুল্লু আমরিন হাকীম, সূরা : দোখান আয়াত : ৪), যার পূর্ণাঙ্গ ও প্রকৃত হাকিকত কেবল দয়াময় আল্লাহতাআলা ও তাঁর মহান প্রিয়তম হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁদের মনোনীত বিশিষ্টজনদের যাঁদের তাঁরা জানিয়েছেন তাঁরাই জানেন। স্বয়ং মহান প্রিয়নবী এ রজনীতে জান্নাতুল বাকী শরীফে (সউদী গোত্রবাদী ওহাবীবাদী এ স্বৈর সরকার কর্তৃক ধ্বংসকৃত) মহান সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু আনহুমের পবিত্র মাজার শরীফসমুহ জিয়ারত করেছেন এবং এ রজনীতে বিশেষ দোয়া ও এবাদতের তাকিদ দিয়েছেন- হাদিছ শরীফ। বরাতের পবিত্র রজনীতে মানুষের জন্য তার অবস্থা ও কাজের পার্থিব প্রতিফলন নির্ধারিত হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মাগফেরাত ও তওবার সুযোগ দেওয়া হয়। বিশেষ রহমতের সুযোগ দেওয়া হয় এবং বিশেষভাবে মোনাজাত কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তিনি বলেন, বর্তমানে দ্বীনের নামে বেদ্বীন কাফের এজিদের উত্তরসূরিদের তা-ব চলছে। এ অবস্থা উত্তরণের জন্য নিজেদের দায়িত্ব পালন করে সাফল্যের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েই আল্লাহতাআলার নিকট এ মহান রজনীতে চাইতে হবে রহমত, সাহায্য ও মুক্তি।
কর্মসূচি :
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে আজ রাতব্যাপী নীলক্ষেতস্থ শাহী মসজিদে কসরে হাদী খানকা শরীফের উদ্যোগে দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, কসরে হাদী খানকা শরীফের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হান্নান আল হাদী দোয়া মাহফিলে শরীক হতে সকলকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
জৈনপুরী খানকা
জৈনপুরী দরবার শরীফের গদীনশীন পীর সাহেব আল্লামা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এক বাণীতে বলেন, হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি শাবান মাসের ১৫ তারিখ রোজা রাখিবে দোযখের আগুন তাহাকে কখনও স্পর্শ করিবে না।
হযরত আয়েশা (রা.) হইতে বর্ণিত আছে, একদা আমি রাসূলে কারীম (সা.) এর নিকটে গেলাম, তখন তিনি সেজদার মধ্যে তাঁহার উম্মতের জন্য ক্রন্দনকরত ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছেন। আমার প্রশ্নের প্রতি উত্তরে হুজুর (সা.) বলিলেন আয়শা। আজ ১৫ শাবান, এই রাতে যারা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবে তা কবুল হবে। কারো গুণাহকে পাহাড় সমান হলেও তবু তাহা ক্ষমা করা হয়।
কর্মসূচি : আগামী ২৩ মে দরবার শরীফে বাদ আছর থেকে এক মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। মাহফিলে সকলকে অংশ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন পীর সাহেব।
প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
শবে বরাত উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মোঃ আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ শবে বরাতের পবিত্র রজনীতে সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে অশেষ রহমত ও বরকত কামনার পাশাপাশি দেশের অব্যাহত অগ্রগতি, কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্যের প্রার্থনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সৌভাগ্যম-িত শবে বরাতের পূর্ণ ফজিলত আমাদের উপর বর্ষিত হোক। মহান আল্লাহ আমাদের প্রার্থনা কবুল করুন।’ প্রেসিডেন্ট শবে বরাত উপলক্ষে গতকাল দেয়া এক বাণীতে মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্য কামনা করেন। মহিমান্বিত রজনী শবে বরাত উপলক্ষে তিনি দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান। বাণীতে আবদুল হামিদ বলেন, ‘মাহে রমজান ও সৌভাগ্যের আগমনী বার্তা নিয়ে শবে বরাত আমাদের মাঝে সমাগত। এই পবিত্র রজনী মানব জাতিকে আল্লাহ তা’য়ালার বিশেষ অনুগ্রহ ও ক্ষমা লাভের অপার সুযোগ এনে দেয়। ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য ইসলামের সুমহান আদর্শ আমাদের পাথেয়।’ বাণীতে মহান আল্লাহর দরবারে শবে বরাতে সকলের জন্য ক্ষমা, বরকত, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন প্রেসিডেন্ট।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল প্রকার ধর্মান্ধতা ও কূপম-ূকতা পরিহার করে শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠাসহ শবে বরাতের মাহাত্ম্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানব কল্যাণ ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শবে বরাত উপলক্ষে গতকাল দেয়া এক বাণীতে এ আহ্বান জানান। এ উপলক্ষে তিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুসলমানকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান। বাণীতে শেখ হাসিনা বলেন, সৌভাগ্যের এই রজনী মানব জাতির জন্য বয়ে আনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমত ও বরকত। এই রাতে তিনি ক্ষমা এবং প্রার্থনা পূরণের অনুপম মহিমা প্রদর্শন করেন। ‘রহমতের এই রাত আমাদের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের বার্তা বয়ে আনুক’Ñ এ কামনা করে তিনি মহান আল্লাহ’তায়ালার কাছে সকলের হেফাজত কামনা করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন