(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
তার মতবাদ অনুযায়ী, এটাই আমার সুপরিচিত ধর্মমত যে, অকাদিয়ানী ব্যক্তি যেখানেই হোক, যে কেউই হোক, লোকেরা তাঁর যতই প্রশংসা করুক, তার পেছনে তোমাদের নামাজ পড়া জায়েয নয়। এটা আল্লাহর নির্দেশ ও ইচ্ছা। তাতে সন্দেহ পোষণকারী মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভক্ত -( আল হিকমা পত্রিকা ১০ই ডিসেম্বর ১৯০৪)। গোলামের পুত্র মাহমুদ বলেছে- অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা (কাদিয়ানীরা) ঘরেই নামাজ পড়তাম। কখনও জামাতে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত বিলম্ব করতাম। তারপর আমরা আমাদের জামাতের সাথে নামাজ আদায় করতাম -(আয়নায়ে সাদাকাত ৯১পৃঃ)। কাদিয়ানীদের মতে, কাদিয়ানীরা পবিত্র, মুসলমানরা অপবিত্র। কাজেই অপবিত্রদের সাথে পবিত্র এবং কাফেরের সাথে মুমিনের মিলিত হওয়া সমীচিন নয় -(তাশহীজুল আজহান ৮ম খন্ড)। ভন্ড কাদিয়ানী মুসলমানদের জানাযার নামাজ পড়তে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। এমনকি তার এক ছেলে কাদিয়ানী না হওয়ায় অর্থাৎ তার উপর ঈমান না আনায় নিজ পুত্রের জানাযার নামাজ পড়েনি -(আনওয়ারুল খিলাফত ৯১পৃঃ)। গোলাম আহমদ পবিত্র সাহাবায়ে কেরামগণ সম্পর্কেও কটুক্তি করতে সামান্যতম দ্বিধাবোধ করেনি। তার মতে, আবু হুরায়রা (রাঃ) নির্বোধ ছিলেন। তাঁর সঠিক বোধশক্তি ছিল না -(এজাজে আহমদী)। এমনকি কোন কোন সাহাবী ছিলেন নির্বোধ -(নছরুল হক ১৪০পৃঃ)। সঠিক কথা হল যে, সে নিজেই ছিল বোকা, নির্বোধ, পাপিষ্ট। নির্বোধতার কারণে ডান পায়ের জুতা বাম পায়ে আর বাম পায়ের জুতা ডান পায়ে পরত। তার বোকামী এতটাই ছিল যে, সে ইস্তেঞ্জার জন্য পকেটে মাটির ঢেলা রাখত। আর সেই মাটির ঢেলা মিষ্টি মনে করে খেয়ে ফেলত। আর জৈনক ভক্ত কাদিয়ানী আলেম লিখেছে- গোলাম আহমদ গুড় পছন্দ করত, অন্যদিকে সে বহুমুত্র রোগী ছিল। যার কারণে পকেটে মাটির ঢেলা ও গুড়ের চাকা রাখত। (গুড়কে পছন্দ করার কারণে গুড়ের চাকা পকেটে রাখত।) তাই কোন কোন সময় মাটির ঢেলাকে গুড়ের চাকা মনে করে খেয়ে ফেলত -( আহওয়ালুল গোলাম বিতারতীবে মে‘রাজুদ্দীন ১ম খন্ড)।
কাদিয়ানীর এক পুত্র গোলাম আহমদ সম্পর্কে বলেছে- তিনি আদম, নূহ ও ঈসা (আ:) থেকে শ্রেষ্ঠ। কেননা, শয়তান আদম (আ:) কে বেহেস্ত থেকে বের করে দিয়েছে, আর তিনি আদম সন্তানকে বেহেস্তে প্রবেশ করাবেন। ঈসা (আঃ)কে ইহুদীর শুলবিদ্ধ করা হয়েছে আর গোলাম আহমদ শুল ভাঙ্গবেন। আর নূহ (আ:) এর পুত্র হেদায়েত থেকে বঞ্চিত অন্যদিকে গোলাম আহমদের পুত্র হেদায়েত প্রাপ্ত যার কারণে নূহ (আঃ) হতে সে উত্তম -(গোলামপুত্র আহমুদ আহমদ এর বক্তৃতা, আল ফজল পত্রিকায় প্রকাশিত ১৮জুলাই ১৯৩১)। ভ্রান্তবাদীদের মতবাদ ভ্রান্ত ছাড়া অন্য কিছু কল্পনা করা অসম্ভব। সেই ভ্রান্ত, অপবিত্র হৃদয়ের অধিকারী গোলাম আহমদ এর আরো কিছু মতবাদ এমন- যে ব্যক্তি কাদিয়ানী ধর্ম গ্রহন করা অবস্থায় গোলাম আহমদকে দেখেছে তাকে সাহাবী বলা হবে -(আল ফজল ১৩ সেপ্টেঃ ১৯৩৬)। এমনকি গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর জন্মভুমি “কাদিয়ান” মক্কা মোকাররমা ও মদীনা মোনাওয়ারা এর সমতুল্য। কাদিয়ানের মসজিদ “মসজিদে হারামাঈন” ও “মসজিদে আকসা” এর সমান বরং মুসলমানদের ক্বিবলা ও কাবা সদৃশ -(আল ফজল ১০ই ডিসেম্বর ১৯৩২)। তাদের আক্বীদানুযায়ী, কাদিয়ানের বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার নাম “হজ্জ” -(বারাকাতুল খেলাফত ৫ ও ৭ পৃঃ)। গোলাম আহমদের ভাষ্য মতে, কাদিয়ানে অবস্থান করাই নফল হজ্জ হতে উত্তম -(মেরাআতু কামালাতিল ইসলাম ৩৫২পৃঃ)।এবার আলোচনা করা যাক, সেই অপবিত্র লোকটি কিভাবে দুনিয়া হতে বিদায় নিল। কাদিয়ানীর সমসাময়িককালে একজন মুসলিম নেতা ছিলেন আল্লামা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী। যিনি তার বিরুদ্ধে এবং বাস্তব সত্যের পক্ষে অনেক লেখালেখি ও তাদের সাথে তর্কবিতর্ক করতেন। আর ঐ মুসলিম নেতা সর্বদায় জয়লাভ করতেন। কারণ, সত্যের পরাজয় নেই। শেষপর্যায়ে, কাদিয়ানী “মোবাহিলা” স্বরূপ একটি লিফলেট প্রকাশ করে। অনেক বিস্তারিত লিফলেটটির মূল উদ্দেশ্য ছিল, যদি কাদিয়ানী সত্যবাদী হয় তবে তার জীবদ্দশাতে যেন ঐ মুসলীম নেতা আল্লামা ছানাউল্লাহ কলেরা বা প্লেগ রোগে ইন্তেকাল করেন। আর যদি কাদিয়ানী মিথ্যাবাদী হয় তাহলে তার নিজের যেন এরূপ দশা হয়। যাতে মানুষ সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে। এটা প্রকাশের তিনমাস দশদিন পর বাস্তবতা প্রকাশ পায়। গোলামের স্ত্রীর বর্ণনা মতে, জনাবের (গোলামের) হঠাৎ করে খাওয়ার পরপরই পায়খানা যাওয়ার প্রয়োজন হল। পায়খানা সেরে একটু নিদ্রা গেলেন, আবার পায়খানার প্রয়োজন হল। অতঃপর আমাকে অবহিত না করেই দু‘একবার বাথরুমে গেলেন। এরপর আমাকে ঘুম থেকে জাগালেন, তখন আমি দেখতে পেলাম তিনি (গোলাম আহমদ) একেবারে দুর্বল হয়ে গেছেন। এরপর আমি তার হাত-পা টিপতে লাগলাম। এভাবে কয়েকবার পায়খানা সারতে সারতে চরম দুর্বলতায় পৌঁছেন। যা থেকে বুঝা গেল তিনি কলেরায় আক্রান্ত -(হায়াতে নাসির)। তখনকার দিনে ভারতীয় পত্রিকাগুলো তার মৃত্যুর বিবরণ প্রকাশ করেছে। তা হলো, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী যখন কলেরায় আক্রান্ত হল, তখন তার মৃত্যুর পূর্বে মুখদিয়ে পায়খানা নির্গত হচ্ছিল। সে প্রয়োজন সারতে পায়খানায় বসা ছিল, এমন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে -(পয়গামে সুলাহ)।
গোলাম আহমদ ২৬শে মে ১৯০৮ সালের সকাল দশটা ত্রিশ মিনিটে মারা যায় -(আল হিকম ২৮মে ১৯০৮)। এভাবে একটি অপবিত্র আত্মার অবসান হয়। উল্লেখ্য যে, আল্লামা ছানাউল্লাহ কাদিয়ানীর মৃত্যুর চল্লিশ বছর পরে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। অতঃপর দিবালোকের মত সুস্পষ্ট সত্য প্রকাশ হওয়ার পরও, কাদিয়ানীরা ‘আল ফজল’ পত্রিকায় প্রকাশ করেছে, যে স্থানে গোলাম আহমদকে সমাধীত করা হয়েছে ও উহার আশেপাশের স্থানসমূহ বেহেস্তর একটি টুকরা বিশেষ। আরো উল্লেখ করেছে, স্বয়ং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম নিজেই গোলাম আহমদের কবরে সালাম দেন -(আল ফজল পত্রিকা ১৮ডিসেম্বর ১৯২২)। নাউযুবিল্লাহ।
পরিশেষ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে ফরিয়াদ, তিনি যেন ঐ ভ্রান্ত আক্বীদায় বিশ্বাসী জীবিতদের সঠিক পথের সন্ধান প্রদান করেন। আর আমাদের সকলকে তাঁর দেয়া, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পন্থায় জীবন ধারণ করার তাওফীক প্রদান করেন। আমীন
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন