ঢাকার মোহাম্মদপুর, কক্সবাজারের টেকনাফ ও মেহেরপুরের গাংনীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিনজন নিহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, তারা তিনজনই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। বুধবার মধ্যরাত ও আজ ভোরে পৃথক এই ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, মোহাম্মদপুরে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ব্যক্তির নাম নবী হোসেন (৪৭)। আহত হয়েছেন দুই র্যাব সদস্য। আজ ভোর সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা উদ্যান এলাকায় চেকপোস্ট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। র্যাবের দাবি, নিহত নবী হোসেন মোহাম্মদপুর এলাকার মাদক কারবারি। এ সময় বিদেশি পিস্তল, গুলিসহ ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, নিহত নবী হোসেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর, জেনেভা ক্যাম্প, কৃষি মার্কেট এলাকার বড় বড় ইয়াবার চালান সরবরাহকারী ছিলেন।
এর আগেও তিনি ৩০-৫০ হাজার পিস ইয়াবার বড় চালান আনেন। গোপন সংবাদে আমরা ওই চালান জব্দ করেছি। কিন্তু কোনোভাবেই নবী হোসেনকে ধরতে পারছিলাম না। আজও নবী হোসেন ইয়াবার চালান নিয়ে টেকনাফ থেকে সায়েদাবাদ হয়ে রাজধানীতে ইয়াবার চালান নিয়ে আসেন। প্রথমে আমরা আসাদ গেটে চেকপোস্ট বসাই। কিন্তু পরে জানতে পারি সে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গেছে। সেখানে ঢাকা উদ্যান এলাকায় আরেকটি চেকপোস্ট চলছিল। সেখানে যাওয়া মাত্র একটি সিএনজিকে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিলে ভেতর থেকে কয়েকজন নেমে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। পাল্টা গুলি ছুড়লে নবী হোসেন নিহত হয়।
তিনি জানান, নবী হোসেনের বাড়ি টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, কামরাঙ্গীরচর, আদাবরসহ বেশ কয়েকটি থানায় ১০টি মামলা রয়েছে। তার সঙ্গে কাজ করে এমন ১০-১২ জন এর আগে গ্রেপ্তার হয়েছে। আরও ৩-৪ জন অধরা আছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নবী হোসেনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
অপরদিকে কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবুল কাশেমকে (৩২) নামে আরেক মাদক কারবারি নিহত হয়েছেন। তাকে আটকের পর অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে গেলে আজ ভোররাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিনজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। নিহত আবুল কাশেম হোয়াইক্যং পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়ার আনু মিয়ার ছেলে।
টেকনাফ মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ জানান, আটক মাদক কারবারি ও অস্ত্র ব্যবসায়ী কাশেমের স্বীকারোক্তি মতে তাদের আস্তানায় অস্ত্র এবং মাদক উদ্ধার অভিযানে গেলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কাশেমের সহযোগিরা গুলি ছোড়ে। এতে এএসআই অহিদ উল্লাহ (৩৯), কনস্টেবল হাবিব হোসাইন (২৩) ও তুহিন আহমেদ (২২) আহত হন। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর পুলিশ ঘটনাস্থল তল্লাশি করে দু’টি দেশীয় তৈরি এলজি, ৯ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ৩ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কাশেমকে উদ্ধার করে। পরে তাকে টেকনাফ উপজেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার নেয়ার পথে কাশেম মারা যান।
ওসি আরও জানান, নিহত কাশেমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। গোলাগুলি এবং অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক মামলা হচ্ছে। মরদেহটি উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
মেহেরপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, গাংনীতে দু’পক্ষের গোলাগুলির ঘটনায় এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত ওই মাদক ব্যবসায়ী গাংনী উপজেলার সীমান্তবর্তী কাজীপুর গ্রামের ফজলুল হক ফজলু বলে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছে পুলিশ। বুধবার রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার হাড়াভাঙ্গা গ্রাম সংলগ্ন একটি মাঠে দু’পক্ষের গোলাগুলিতে নিহতের ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, হাড়াভাঙ্গা গ্রাম সংলগ্ন একটি মাঠে গোলাগুলির শব্দ হচ্ছিল। খবর পেয়ে গাংনী থানা পুলিশের কয়েকটিদল ওই স্থানে পৌঁছে যায়। এ সময় পুলিশের অবস্থান বুঝতে পেরে দুর্বৃত্তরা পিছু নেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে। এ সময় ঘটনাস্থলে একটি এলজি শার্টারগান ও আনুমানিক দেড় কেজি গাঁজা উদ্ধার করে।
গাংনী থানার ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার পিপিএম জানান, মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত কোন্দলের কারণে গোলাগুলিতে নিহতের ঘটনা ঘটেছে। লাশ থানা নেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন