বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

কন্যা সন্তান সৌভাগ্যের প্রতীক

মাহবুবুর রহমান নোমানি | প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীতে মানব বিস্তারের প্রক্রিয়া হিসেবে পিতা-মাতা বা নর-নারীকে বাহ্যিক মাধ্যম বানিয়েছেন। কিন্তু সন্তান প্রজননে তাদের কোনো ক্ষমতা বা দখল নেই। এ বিষয়টি সম্পূর্ণ আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা ও ক্ষমতার ওপর নির্ভর। তিনিই কন্যা বা পুত্র সন্তান দান করেন। আবার কাউকে সন্তান থেকে বঞ্চিত রাখেন। এ মর্মে পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হয়েছে -তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা পুত্র-কন্যা উভয়-ই দান করেন। আর যাকে ইচ্ছা বান্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাধর।’ (সূরা শুরা:৪৯-৫০) 

বৈচিত্রময় এই বন্টনের মাঝে অবশ্যই মহান আল্লাহর অপার কুদরত ও অসীম হেকমত নিহিত রয়েছে। তিনি প্রত্যেক মানুষের জন্য তাই মঞ্জুর করেন, যা তার জন্য মঙ্গল ও কল্যাণকর। সুতরাং পুত্র সন্তান যেমন নেয়ামত তেমনি কন্যা সন্তানও আল্লাহর নেয়ামত। বরং উপরোক্ত আয়াতে কন্যা সন্তানের কথা প্রথমে এবং পুত্র সন্তানের কথা পরে উল্লেখ করায় হজরত ওয়াসেলা ইবনে আসকা (রহ.) বলেন, যে নারীর গর্ভ থেকে প্রথম কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে, সে পূণ্যময়ী। (তাফসিরে কুরতুবি) কিন্তু দুঃখনজক বাস্তবতা হচ্ছে, বর্তমান সমাজে পুত্র সন্তান জন্ম হলে যেরুপ আনন্দ ও খুশি উদযাপন করা হয়, কন্যা সন্তানের বেলায় ততটা পরিলক্ষিত হয় না। উপরন্তু অনেক পাষান্ড স্বামী কন্যা সন্তানের জননীর সাথে দুর্ব্যবহার ও অযাচিত আচরণ করে। এমনকি সংসার ত্যাগের হুমকি পর্যন্ত দিয়ে থাকে। এটা অত্যন্ত অমানবিক, নিন্দনীয় এবং অজ্ঞতাপ্রসূত কাজ।
প্রাক-ইসলাম যুগের বর্ববর লোকেরা কন্যা সন্তানকে অপমানজনক মনে করে তার সাথে নির্মম আচরণ করতো। পবিত্র কোরআন বলছে-‘যখন তাদের কাউকে কন্যা জন্মের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার চেহারা মলিন হয়ে যায় এবং সে মনে মনে ব্যথিত হয়। (এ সুসংবাদকে অপমানকর মনে করে) সমাজের লোকজন থেকে লুকিয়ে বেড়ায় এবং চিন্তা করে যে, হীনতা ও অপমান সহ্য করে কন্যা সন্তানটি নিজের কাছেই রেখে দেবে নাকি তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবে। লক্ষ্য করো, তারা কত হীন ও নিকৃষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতো।’ (সূরা নাহল-৫৮,৫৯)
বর্তমান অত্যাধুনিক যুগে প্রযুক্তির কল্যাণে জন্মের পূর্বেই গর্ভের শিশুটি মেয়ে সন্তানের ধারণা পেয়ে অনেক নির্দয় পিতা তার ভ্রæণ নষ্ট করে দেয়। আল্লাহর এই সুন্দর পৃথিবীতে তার বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নেয়। বরিশাল সেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের ডাস্টবিনে ৩২টি শিশুর পরিত্যক্ত ভ্রæণ জাতিকে কী বার্তা দিয়েছে? আধুনিকতার ধ্বজাধারী সভ্য যুগের (?) এই অসভ্য লোকদের এহেন আচরণ আর তৎকালীণ আরবের বর্বর লোকদের আচরণে তফাৎ কোথায়? আজ দু’টি বা একটি সন্তান গ্রহণের ওপর খুবই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদির অভাবকে যুক্তি ও অজুহাত হিসেবে পেশ করছে। বিশেষত কন্যা সন্তান আয়-উপার্জনে অক্ষম হওয়ায় তার ওপর অবিচারটা বেশি করা হয়। মহান আল্লাহ এই দৃষ্টিভঙ্গির সংশোধন করে পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা দারিদ্রের ভয়ে নিজ সন্তানদের হত্যা করো না। আমি তাদেরকে এবং তোমাদেরকে রিজিক দান করি। জেনে রেখো, তাদেরকে হত্যা করা মহা পাপ।’ (সূরা বনি ইসরাইল-৩১) হাদিস শরিফে নবীজি (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে দুর্বল ও অসহায়দের উসিলায় আল্লাহ তোমাদের রিজিক দান করেন।’ (ইতহাফ-১০/৪৩) সুতরাং কন্যা শিশুর প্রতি অবিচার নয়। সে বরকতের প্রতীক। সৌভাগ্যের পরশমণি। কন্যা শিশুর জন্মে আনন্দ ও খুশি উদযাপন করা উচিত। কারণ, বিশ্বনবী (সা.) কন্যা সন্তানদের ব্যাপারে যতটা সুসংবাদ ও ফজিলত ঘোষণা করেছেন, পুত্র সন্তানের ব্যাপারে ততটা বলেননি। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যার দু’টি কন্যা বা বোন আছে আর সে উত্তমভাবে তাদের ভরণ-পোষণ করল এবং উপযুক্ত হওয়ার পর ভালো পাত্রের কাছে বিবাহের ব্যবস্থা করল, আমি ও সে জান্নাতে এভাবে প্রবেশ করব, যেভাবে এ দু’টি আঙ্গুল মিলে আছে। একথা বলে তিনি ডান হাতের শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুলদ্বয় মিলিয়ে দেখালেন।’ (সহিহ ইবেেন হিব্বান: ২০৪৩) অন্য একটি হাদিসে এসেছে, ‘যার তিনটি কন্যা বা তিনটি বোন আছে, অথবা দু’টি কন্যা বা দ’টি বোন আছে এবং সে তাদের সাথে উত্তমভাবে জীবন অতিবাহিত করে। তাদের হকসমূহ আদায়ের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে বিনিময় স্বরূপ জান্নাত দান করবেন।’ (তিরমিজি শরিফ:১৯৮৮) উল্লেখিত হাদিস থেকে তিনটি বিষয় প্রতিয়মাণ হয়। এক. কন্যা সন্তান লালন-পালনের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দেবেন। দুই. তার উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন। তিন. জান্নাতে সে প্রিয়নবী (সা.) এর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১২ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
পবিত্র কুরআনে কন্যা সন্তান জন্ম হওয়াকে সুসংবাদ বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেটিকে সুসংবাদ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তা প্রাপ্ত হওয়াতো অবশ্যই ভাগ্যবানের নিদর্শন বৈ কিছু নয়।
Total Reply(0)
মিরাজ আলী ১২ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৬ এএম says : 0
তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তানের ‘সুসংবাদ’ দেয়া হয় তখন তার চেহারা মলিন হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। সে এ সুসংবাদকে খারাপ মনে করে নিজ সম্প্রদায় থেকে লুকিয়ে বেড়ায় (এবং চিন্তা করে ) হীনতা স্বীকার করে তাকে নিজের কাছে রেখে দেবে,নাকি মাটিতে পুঁতে ফেলবে। কত নিকৃষ্ট ছিল তাদের সিদ্ধান্ত। (সূরা নাহল,আয়াত : ৫৮-৫৯)
Total Reply(0)
রুবি আক্তার ১২ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৬ এএম says : 0
কন্যা সন্তান আল্লাহর বিশেষ রহমত। সমাজের অনেক মানুষ আছে যারা কন্যা সন্তান হলে নাক সিটকান। নিজেদের পোড়াকপাল ভাবেন। স্ত্রীকে নিন্দা করেন।
Total Reply(0)
তানিম আশরাফ ১২ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৬ এএম says : 0
কোনো স্বামী এমন আছেন, যিনি কন্যা সন্তান জন্মদানের অপরাধে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেন। নির্যাতন করেন। মাথার চুল ধরে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। কিন্তু তার জানা নেই, কন্যা সন্তান সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে আসে। ভাগ্যের হাত প্রসারিত হয়। দুনিয়াতে সে সুখে শান্তিতে বাস করতে পারে। আল্লাহ তায়ালা তার মঙ্গল করেন।
Total Reply(0)
বছির উদ্দিন ১২ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৭ এএম says : 0
কন্যা সন্তানের অধিকারী দুনিয়াতে যেমন ভাগ্যবান। তেমনি আখেরাতেও সৌভাগ্যশীল। কন্যা সন্তানের অসিলায় সে জান্নাত লাভ করবে।
Total Reply(0)
জামিরুল ইসলাম ১২ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৭ এএম says : 0
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, যার তিনটি মেয়ে কিংবা তিনটি বোন থাকে অথবা দুইটি মেয়ে কিংবা দুইটি বোন থাকে সে যদি তাদের সাথে সবসময় সদয় ব্যবহার করে এবং তাদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করে তবে তাঁর জন্য রয়েছে জান্নাত। জামিয়ূত তিরমিজি, ১৯২২
Total Reply(0)
MD.SHAFIQUR RAHMAN ১৭ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:৪৭ পিএম says : 0
I am very glad . Because Allah given me two daughters. I hope I and my wife will get two heaven inshaallah.Allah Hafez.
Total Reply(0)
Al Amin Chowdhury ৯ মে, ২০১৯, ১২:৫৪ এএম says : 0
I am very glad . Because Allah given me two daughters. I hope I and my wife will get two heaven inshaallah.Allah Hafez.
Total Reply(0)
sohag ৮ অক্টোবর, ২০২০, ২:০৪ পিএম says : 0
আল্লাহ'র নবী মোহাম্মদ সা: হলেন আল্লাহর বন্ধু, আর যাদের কন্যা সন্তান আছে তারা হলেন বেহেস্তে নবী সা:এর বন্ধু।আমিও একজন গর্বিত কন্যা সন্তানের বাবা।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন