চড়ক গাছে জীবন্ত মানুষের পিঠে লোহার বড়শি ফুড়িয়ে বাঁশের চড়কিতে বেধে ঘুরানো’ বিষয়টি শুনলেই গা শিউরে উঠে। নামটি চড়ক পূজা। জনসমাগমের মধ্য দিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় শেষ হয়ে গেল হিন্দু ধর্মাম্বলীদের ঐতিহ্যবাহী কালী পুজার চরক মেলা।
পহেলা বৈশাখ উদযাপন ও বাংলা নববর্ষকে বরণ উপলক্ষ্যে রাজবাড়ীতে প্রায় দুই শত বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে চড়ক পূজা। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধারন ও বহন করতে প্রতি বছরের মতো এবারও বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মেলাটি উদযাপন করা হয়।
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলাধীন ছোট ভাকলা ইউনিয়নের মালিপাড়া এলাকায় দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী চড়ক মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর পাশাপাশি সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্রামীন মেলা। মেলায় আসা দর্শনার্থীরা শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয় সকল ধর্মের মানুষ এই মেলায় আসে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নেয়।
মেলা উদযাপন কমিটির সূত্রে জানা গেছে, চড়ক পুজায় যাদের বড়শী বিধিয়ে চরকীতে ঘোরানো হয় তারা এক সপ্তাহ যাবৎ উপবাস করে থাকেন। এই মেলাটি রাজবাড়ী জেলার মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন এবং সবচেয়ে বেশি লোক সমাগম হয়।
মেলার মাঠে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের চরক পুঁজা ও বিভিন্ন নিয়মাবলীর মাধ্যমে চরক মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। চড়ক পূজাকে কেন্দ্র করে এক দিনের জন্য আয়োজন করা হয় এই মেলার। মেলায় চড়ক গাছে জীবন্ত মানুষের পিঠে লোহার কল ফুড়িয়ে বাঁশের চরকিতে বেঁধে ঘুরানো হয়। এবারের চরক খেলোয়াড় হিসেবে অংশগ্রহন করেন ৪জন যুবক। এ মেলাতে ৯ বছর ধরে চড়কের ঘুরছেন দেবদাস বিশ্বাস, ৮ বছর ধরে রাজিব কুমার বিশ্বাস, ২ বছর ধরে সুজয় বিশ্বাস ও ১ম বারের মতো এ বছর ঘুরলেন উদয় বিশ্বাস।
চড়কের মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী দীলিপ কুমার নন্দী(৭৫), প্রদীপ ভট্টাচার্য্য(৬৭), কার্তিক কুমার কুন্ডু (৬৩), পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য (৫০) জানান, শরীরের মধ্যে বরশি এবং শিক বিধিয়ে চরকীতে ঘোরা বিষয়টি শুললেই গা শিউরে উঠে তাই দুরান্ত থেকে ছুটে আসে মানুষ। প্রতিবছর হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা বাংলা সনের চৈত্র সংক্রান্তির মাঝামাঝি সময় দুই শত বছর ধরে এই চরক পুঁজা ও মেলার আয়োজন করে। তারই ধারাবাাহিকতায় চরক মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আমরা বাল্যকাল থেকেই দেখে আসছি এ চড়ক মেলাটি। শুধু স্থানীয়রা নয়, পাশ্ববর্তি জেলা থেকে হাজারো মানুষের দেখতে আসে এ চড়ক মেলা।
মেলা উপভোগ করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড় জমতে দেখা গেছে, সেই সাথে চড়ক মেলাকে কেন্দ্র করে মেলায় রকমারী দোকান বসেছে, যা শিশু ও কিশোর কিশোরীদের আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন