শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বিদ্যুৎ খাতের সঙ্কট দূর করা জরুরি

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

দেশে বর্তমানে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, তা আগের চেয়ে বেশি। একই সঙ্গে উৎপাদন ও আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবুও বিশ্ব পর্যায়ে দেশের অবস্থান তলানিতে। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের ‘ফস্টারিং ইফেকটিভ এনার্জি ট্রানজিশন’ শীর্ষক প্রতিবেদন-২০১৯ মতে, ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৯০তম। তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সুইডেন, যুক্তরাষ্ট্র ২৭তম, মালয়েশিয়া ৩১তম, ভিয়েতনাম ৫৬তম, শ্রীলঙ্কা ৬০তম, ভারত ৭৬তম, চীন ৮২তম, নেপাল ৯৩তম, পাকিস্তান ৯৭তম। যা’হোক, দেশে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, তা ঠিকমতো পাওয়া যায় না। প্রায় সময়ই লোড শেডিং হয় বিভিন্ন স্থানে। কর্তৃপক্ষ এটাকে ‘লোড শেডিং নয়’ ‘সঞ্চালন ব্যবস্থার ত্রুটি’ বলে। এটা ঠিক, দেশে বিদ্যুতের সঞ্চালনের যে ব্যবস্থা আছে, তা ৪-৫ হাজার মেগাওয়াটের মতো ক্যাপাসিটির। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে গড়ে প্রায় ৮ হাজার মেগাওয়াটের কিছু কম-বেশি। আর উৎপাদন সক্ষমতা ২১ হাজার মেগাওয়াটের ওপরে। নানা কারণে সক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। সরকার ‘সক্ষমতা’কেই ‘উৎপাদন’ বলে থাকে, যা দুঃখজনক। প্রতিদিন কত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, তা পিডিবির ওয়েব সাইটে দেওয়া হয়। সেটা দেখলেই সত্যটা পাওয়া যায়। যদিও উৎপাদিত বিদ্যুতের কতভাগ সরকারি, কতভাগ বেসরকারি আর কতভাগ আমদানিকৃত তা উল্লেখ করা হয় না। এটা করা হলে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হতো। জানা মতে, দেশে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫১% বেসরকারি, যার মূল্য সরকারি কেন্দ্রের মূল্যের চেয়ে বহুগুণ বেশি। বিশেষ করে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের। তাই বিদ্যুতের ভর্তুকি আকাশছোঁয়া, যা হ্রাস করার জন্য বারবার মূল্য বৃদ্ধি করতে হয়েছে। আমদানিকৃত এলপিজি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলে বিদ্যুতের মূল্য আরও অনেক বেড়ে যাবে। তাই জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ ক্রয় না করার জন্য বহুবার আহ্বান জানিয়েছেন। সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। কয়েকবার সময় বর্ধিত করেছে। সর্বোপরি সরকারের কেউ কেউ বলেন, ‘বাংলাদেশে যদি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন না করা হতো তাহলে দেশ ধ্বংস হয়ে যেত।’ বলাবাহুল্য, দেশে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, তা সরবরাহ করা হচ্ছে কম ক্যাপাসিটির সঞ্চালন ব্যবস্থার মাধ্যমে। ফলে ওভার লোডের কারণে প্রায়ই নানা সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। তন্মধ্যে ট্রান্সমিটার নষ্ট হওয়া অন্যতম। এছাড়া, খুঁটি ও লাইন পুরাতন হওয়া অন্যতম। এছাড়া, বিভিন্নস্থানে সড়ক স¤প্রসারণ করা হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের খুঁটি রাস্তার মধ্যে পড়েছে। তবুও তার সরানো হয়নি। সবমিলে সমগ্র সঞ্চালন ব্যবস্থা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই মাঝে মধ্যেই নানা স্থানে দুর্ঘটনা ঘটে অনেক জানমালের ক্ষতি হয়। এই সংকটের প্রধান কারণ হচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেভাবে সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বহু পুরাতন ও কম ক্যাপাসিটির সঞ্চালন ব্যবস্থা দিয়েই অনেক বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে। আর তাতেই সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। এমতাবস্থায় ২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতে পারবে কি-না সন্দেহ আছে। এই অবস্থায় আগামী ৫০ বছর পর্যন্ত দেশের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের আধুনিক সঞ্চালন ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। এ জন্য ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন বলে এক দৈনিকে প্রকাশ। খবরটি সত্য হয়ে থাকলে বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। কারণ, এত বিপুল অর্থ সংগ্রহ করা কঠিন। অবশ্য কিছুটা আশার আলো হচ্ছে, চীন একটি নতুন সঞ্চালন লাইন তৈরি করার প্রস্তাব করেছে। গত ৩১ মার্চ একটি দৈনিকে প্রকাশ, ‘চীন মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ গ্রিড নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে, যা ১২শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চীন থেকে মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশে আসবে। এটি মোট পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরিবহনে সক্ষম হবে। তন্মধ্যে এক হাজার মেগাওয়াট মিয়ানমারকে আর বাকি চার হাজার মেগাওয়াট বাংলাদেশে বিক্রি হবে। এখন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের গ্রিড লাইন রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ চেষ্টা করছে নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে পৃথক গ্রিড লাইন নির্মাণ করতে। বিদ্যুৎ আমদানির মহাপরিকল্পায় ২০৪১ সাল মেয়াদে ৯ হাজার মেগাওয়াট আমদানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।’ অন্যদিকে, সার্ক দেশগুলোর মধ্যে অভিন্ন গ্রিড লাইন গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এসব যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে বিদ্যুতের পরিমাণ যেমন বাড়বে, তেমনি সঞ্চালন ব্যবস্থায় অনেক উন্নতি হবে। তাই এসব বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন। ভুটান লুয়েন্স জেলায় ১১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দর্জিলাং হাইড্রোপাওয়ার সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। আর এ প্রকল্পে অংশীদার হতে চায় বাংলাদেশ। ১২ এপ্রিল ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় এ নিয়ে চুক্তি হতে পারে। প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারত তিন দেশেরই আগ্রহ রয়েছে বলে জানা গেছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এতে ভারত জড়িত আছে, তাই। অবশ্য চুক্তি হলে তিন দেশই লাভবান হবে। পানিবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ খুব কম। স্মরণীয় যে, নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রেও বাংলাদেশ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। নেপালও রাজী। ভারতের আপত্তির কারণে তা হচ্ছে না। ভারতের কথা, নেপালের পানিবিদ্যুৎ নেপাল থেকে নয়, আমাদের কাছ থেকে নিতে হবে। হায়রে বন্ধুত্ব! অথচ নেপালে ভারত-নেপাল যৌথ পানিবিদ্যুৎকেন্দ্র আছে।
দেশের বিদ্যুৎ খাতের আর একটি বড় সংকট হচ্ছে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন। ২০৪১ সালে ৬০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের যে টার্গেট করা হয়েছে, তার ৬০% কয়লা দিয়ে। তাও আমদানিকৃত কয়লা দিয়ে। অথচ দেশে আবিষ্কৃত কয়লা মজুদের পরিমাণ বিশাল। এ ব্যাপারে গত ২৮ মার্চ একটি দৈনিকে প্রকাশ, ‘পায়রা, মাতাবাড়ি, বাঁশখালী, রামপাল ইত্যাদি স্থানে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য কাজ চলছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কয়লা আমদানি করে সরবরাহ করার জন্য। প্রতিটন আমদানি করা কয়লার মূল্য ২২০ ডলার আর স্থানীয় কয়লার মূল্য পড়ে ১২০ ডলার। কিন্তু কয়লা উত্তোলন ‘আন্ডার গ্রাউন্ড’ হবে না ‘ওপেন পিট’ হবে এ বিতর্কে উত্তোলন কাজ বন্ধ হয়ে আছে। অথচ আমাদের আবিষ্কৃত কয়লা খনিতে ৭,৯৬২ মিলিয়ন টন কয়লা মজুত আছে। উত্তোলনযোগ্য এ কয়লা দিয়ে ৫০ বছরব্যাপী দৈনিক ১০ হাজার মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। অনুসন্ধান চালালে রংপুর, দিনাজপুর ও বগুড়ায় আরও কয়লাখনি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ তবুও দেশের কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা না করে আমদানি করা হচ্ছে! এতে করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হবে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। তেমনি ভবিষ্যতে দেশের কয়লা উত্তোলন করার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। কারণ, সে কাজের জন্য বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান বা আর্থিক সংস্থা পাওয়া যাবে না। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি-২০১৫ অনুযায়ী, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ করে নবায়নকৃত জ্বালানির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তন্মধ্যে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ সর্বাধিক। গ্লোবাল এনার্জি মনিটরের প্রতিবেদন মতে, গত কয়েক বছর ধরে পুরো বিশ্বে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের সংখ্যা কমেছে। ২০১৫ সাল থেকে এই হ্রাসের পরিমাণ ৮৪%। শুধু ২০১৮ সালেই এমন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে ৩৯%। ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত নির্মাণ সমাপ্ত হওয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সংখ্যা কমেছে প্রায় অর্ধেক। উক্ত প্রতিবেদনটির গবেষকদের নেহা ম্যাথিউ শাহ’র ভাষ্য হচ্ছে, ‘বিশ্বজুড়ে কয়লার ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাওয়াটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।’ সংস্থাটির আরেক গবেষক ক্রিস্টিন শিয়েরার ভাষ্য, ‘বর্তমানে চালু থাকা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো অভাবিত দ্রুততার সঙ্গে বন্ধ করতে হবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখতে হলে।’ অপরদিকে, আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা তার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হ্রাসে প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ২০১৮ সালে বৈশ্বিক জ্বালানির সাথে সংশ্লিষ্ট থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের মোট পরিমাণ হল ৩,৩১০ কোটি টন, যা ২০১৭ সালের তুলনায় ১.৭% বেশি এবং এযাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। স্মরণীয় যে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক আলোচিত বিষয় হচ্ছে: বায়ুমন্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধি। কারণ, এতে বিশ্বের অপূরণীয় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আর এই ক্ষতির সর্বাধিক কারণ কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন। তাই এটা বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্ববাসী সোচ্চার হয়েছে। স¤প্রতি ফরাসি আন্দোলনকারীরা তাদের দেশের ব্যাংকগুলোকে কয়লা খাতে বিনিয়োগ বন্ধে বাধ্য করেছে। এরূপ অবস্থা সব ধনী দেশেও হতে পারে। এই অবস্থায় ভবিষ্যতে যদি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চাপে দেশে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়, তখন ভয়াবহ পরিণতি সৃষ্টি হবে। তাই এখনই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া আবশ্যক।
বিদ্যুৎ খাতের আরও সংকট হচ্ছে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তার অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। এছাড়া, কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে পরিবেশবাদীদের প্রবল আপত্তি রয়েছে। এসব নানা করণে বিদ্যুতের বড় প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে বলে মনে হয় না। আর তা না হলে প্রকল্পের ব্যয় যেমন অনেক বেড়ে যাবে, তেমনি টার্গেট অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে না। তাই যথাসময়ে বিদ্যুতের মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা দরকার। যদি ডুয়েল সিস্টেম তথা কয়লা ও তেল দিয়ে চালানোর ব্যবস্থা থাকে, তাহলে সেটা করা দরকার। তাহলে কয়লা বন্ধ হয়ে গেলে তেল দিয়ে চালানো যাবে। অন্যদিকে, দেশে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে বহুদিন আগে। কিন্তু এর অগ্রগতি তেমন হয়নি। এটা সর্বত্রই চালু করতে পারলে বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি, হয়রানি ইত্যাদি বন্ধ হয়ে যেত। সিস্টেম লসও অনেক হ্রাস পেত। ভর্তুকি হ্রাস করার কথা বলে ঘনঘন বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করতে হতো না। সারাদেশে বিদ্যুতের সব ক্ষেত্রেই দ্রুত প্রি-পেইড মিটার চালু করা জরুরি। সরকারিভাবে উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য কম। আর ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুতের মূল্য অনেক বেশি। তবুও সরকারিভাবে উৎপাদনের দিকে গুরুত্ব বেশি না দিয়ে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুতের দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তাই সরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করা আবশ্যক। বিদ্যুৎ খাতের আর একটা বড় সংকট হচ্ছে, দক্ষ লোকের অভাব। এ কথা খোদ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন বহুবার। তাই জরুরি ভিত্তিতে কমপক্ষে এক লাখ দক্ষ লোক তৈরি করা দরকার। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হলে চার বছরের মধ্যেই তা করা সম্ভব।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। বিশেষ করে সৌর বিদ্যুৎ। এ ক্ষেত্রে আমাদের আউটপুট নগণ্য। একটি দৈনিকে প্রকাশ, ‘২০১৮ সালে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ: বাংলাদেশে-২০০ মেগাওয়াট, ভারতে ২১,৬৫১ মেগাওয়াট। এছাড়া, ২০১৭ সালে ফটোভল্টিক সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ছিল চীনে ১ লাখ ৩১ হাজার মেগাওয়াট, যুক্তরাষ্ট্রে ৫১ হাজার মেগাওয়াট ও জাপানে ৪৯ হাজার মেগাওয়াট।’ অথচ সৌর প্যানেল স্থাপনে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষ। তবুও বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ খুব কম। কারণ, আমাদের ব্যবহ্নত সৌর প্যানেলের উৎপাদন ক্ষমতা খুব কম। এক্ষেত্রে হাইয়েস্ট উৎপাদনক্ষম প্যানেল ব্যবহার করা দরকার। অপরদিকে, গাজীপুরের মতো সারাদেশে সোলার চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা প্রয়োজন। গাজীপুরে একটি সোলার চার্জিং স্টেশন স্থাপন করেছে সরকার ২০১৬ সালে। যেখানে তুলনামূলক কম খরচে যেমন চার্জ দেয়া যাচ্ছে, তেমনি হচ্ছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়। সেখানে এ পর্যন্ত ১৫ হাজারেরও বেশি অটোরিকশা ও ইজিবাইক চার্জ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সারাদেশে এরূপ আরও স্টেশন স্থাপন করা হলে ব্যাটারি চালিত যানবাহন চলাচলে খুবই সহায়ক হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির সাশ্রয় হবে অনেক। এছাড়া, দেশের সর্বক্ষেত্রেই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করা আবশ্যক।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন