শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জাহাজ ভিড়বে লালদিয়ায়

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়ছে। আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সহজতর করতে লালদিয়ায় নির্মিত হচ্ছে একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। এ মেগা প্রকল্পে ব্যয় হবে তিন হাজার কোটি টাকা। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল আর আউটার রিং রোডের নিকটবর্তী পতেঙ্গার লালদিয়ায় ৫৭ একর জমির ওপর টার্মিনালটি নির্মিত হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)’র আওতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী ২০২১ সাল নাগাদ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শেষ হলে লালদিয়ায় জাহাজ ভিড়বে। প্রায় আট লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা সম্পন্ন এই মেগা টার্মিনাল চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং আমদানি-রফতানি প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়ে। আর লালদিয়া এলাকায় এই টার্মিনাল অতি অল্প সময়ে নির্মাণ করা সম্ভব। তিনি বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে বহুদূর অগ্রসর হয়েছে বন্দর। খুব শিগগির প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে। আর এই লক্ষ্যে আদালতের নির্দেশনায় চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়ার চর এলাকায় অবৈধ ন্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানও শুরু করা হবে। তিনি বলেন, জাতীয় অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। এটি করতে হলে বন্দরের প্রতি ইঞ্চি জমির সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, এরমধ্যে প্রকল্পটির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ, টেন্ডার আহ্বান, আগ্রহীদের মাঝ থেকে শর্টলিস্ট তৈরিসহ নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। আগ্রহী কোম্পানিগুলোর মাঝ থেকে একটি প্রতিষ্ঠান অথবা তাদের সমন্বয়ে গঠিত কনসোটিয়ামকে ২৫ বছরের জন্য লালদিয়া চরের ৫৭ একর জায়গা দেয়া হবে। সেখানে ওই কোম্পানি টার্মিনাল নির্মাণ এবং ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ করে জাহাজ হ্যান্ডলিং করবে। ২৫ বছর পর ওই কোম্পানি ইক্যুইপমেন্টসহ টার্মিনালটি বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করে দিয়ে চলে যাবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করে আনা হচ্ছে জানিয়ে বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পিপিপি’র আওতায় মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগ্রহী পাঁচটি বিদেশি কোম্পানিগুলোর টার্মস অব রেফারেন্স (টিওআর) নিয়ে আলোচনা চলছে। তাদের সাথে কি ধরনের চুক্তি হতে পারে, ট্যারিফ কি হবে, জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের প্রেক্ষাপট কি হবে এসব চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনালে চারটি বার্থের দুটিতে কন্টেনার জাহাজ এবং দুটিতে কার্গো ভ্যাসেল হ্যান্ডলিং হবে বলেও জানান তিনি। সেখানে প্রায় আট লাখ কন্টেনার হ্যাল্ডলিং করা যাবে। লালদিয়ার নিকটে কর্ণফুলী টানেল, পাশেই নির্মিত হচ্ছে আউটার রিং রোড। রিং রোড পতেঙ্গা সমুদ্র উপকূল হয়ে ফৌজদারহাটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে মিশে গেছে। ফলে লালদিয়া থেকে খুব সহজে টানেল ও রিং রোড হয়ে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহি ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধি গড়ে ১৫ শতাংশের কাছাকাছি। গত অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৭ লাখ ৫ হাজার ৯০৯ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। চলতি বছর প্রায় ৩০ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। বিশ্বব্যাপী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরেও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বাড়ছে। এনার্জি হাব, একাধিক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণসহ চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ঘিরে লক্ষ কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চলে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগে নতুন মাত্রা যোগ হবে। আর তখন চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রফতানি আরও বাড়বে। এ চাপ সামাল দিতে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা দ্রুত বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
কন্টেইনারের চাপ সামাল দিতে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকায় পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল-পিসিটি নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। পিটিসির পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের কর্ণফুলী নদী সংলগ্ন ১৪ ও ১৫নং খালের মধ্যবর্তী জমির ওপর লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। ২০২০ সালে প্রল্পটির কাজ সম্পন্নের পরিকল্পনা থাকলে এখনও অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করা যায়নি। তবে খুব শিগগির কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, প্রকল্পের ৫৭ একর জমির মধ্যে বেদখল জমির পরিমাণ প্রায় ১৬ একর। সেখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইতোমধ্যে আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সে নির্দেশনা মেনে লালদিয়ার চর এলাকায় বেদখল একশ একর মূল্যবান জমি উদ্ধার করা হবে।
উল্লেখ্য, ৯ এপ্রিল হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলীর দুই তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন্দর চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতে নির্দেশ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলেও প্রথম দফায় প্রায় চারশ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে ১০ একর জমি উদ্ধারের পর অভিযান থামিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। এই প্রেক্ষিতে ফের আদালতে যান অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ash ১৬ এপ্রিল, ২০১৯, ৬:৪১ এএম says : 0
KOYTA BONDOR DORKAR AMADER ?? SINGAPURE E KOYTA BONDOR ASE?? AMR MOTE ESHOB NA KORE DEEP SEA BONDOR KORA JORURI
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন